কলকাতা, 15 জানুয়ারি: স্যালাইন-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হল বিধাননগরের ইলেক্ট্রনিক কমপ্লেক্স থানায় ৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতিতে বিধায়ক অসীম বিশ্বাস তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ৷
অন্যদিকে, বুধবার শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির বিধায়করা স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে নামলেন ৷ বিজেপি বিধায়কদের প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য ভবনে স্পেশাল সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করে ডেপুটেশন দেয় ৷ সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির তত্ত্বাবোধানে সিটের তদন্ত দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা ৷
শুভেন্দু বলেন, "আমরা স্পেশাল সেক্রেটারিকে বলেছি, সেন্ট্রাল ড্রাগ কন্ট্রোলার এবং রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিকে নিয়ে সিট গঠন করতে ৷ যদি সেই দলে সিআইডি থাকে, তাহলে কেন্দ্রকে বলে সিবিআই প্রতিনিধিকেও সেই সিটে রাখতে হবে ৷ আর মুখ্যসচিব কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখুন ৷ একজন সিটিং জাজ যাতে নিযুক্ত করা হয় ৷ সেই সিটিং জাজের নেতৃত্বে এই সিট 'বিষ' স্যালাইন-কাণ্ডে তদন্ত করবে ৷"
উল্লেখ্য, এ দিন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সুপার জয়ন্ত কুমার রাউতের গ্রেফতারির দাবি করেছেন শুভেন্দু ৷ মেদিনীপুর মেডিক্যালের ঘটনায় স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে মেয়াদ উত্তীর্ণ লিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইন নিষিদ্ধ করার নির্দেশিকা জারির সময় নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা ৷
তাঁর অভিযোগ, "আমি প্রশ্ন করায় স্পেশাল সেক্রেটারি প্রথমে বলেন গত বছর 2024 সালে 10 ডিসেম্বর ওই স্যালাইন ব্যান ডিক্লেয়ার করা হয়েছিল ৷ আমি মোবাইল বের করে দেখিয়ে দিয়েছি ৷ 8 জানুয়ারি বেলা 12টা নাগাদ আমি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পর, বেলা 2টো 48 মিনিটে এমএসভিপি, সিএমওএইচ এবং ডেপুটি-সিএমওএইচকে ব্যান ডিক্লেয়ার করে মেসেজ পাঠিয়েছে ৷ তারপর গতকাল 14 জানুয়ারি ওষুধের নাম লিখে নির্দেশিকা জারি করেছে ৷ কত বড় মিথ্যে কথা বলছে ৷"
এর পাশাপাশি, গত একমাসে রাজ্য জুড়ে যত প্রসূতিকে লিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইন দেওয়া হয়েছে, তার তালিকা প্রকাশের দাবি তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ তিনি বলেন, "গত একমাসে যতজন প্রসূতি এবং রোগীকে ওই 'বিষ' স্যালাইন দেওয়া হয়েছে, তার তালিকা প্রকাশ করতে হবে ৷ তাঁদের চিকিৎসা করাতে হবে ৷ কারণ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, আগামী একমাস, তিনমাস ও ছ’মাসের মধ্যে তাঁদের সকলের কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ ছ’মাস পর যদি তেমন কারও হয়, তখন এরা বলবে সুগার ছিল বলে কিডনি ফেল করেছে ৷ ওসব আমরা শুনব না ৷"
অন্যদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় দিনে তদন্ত জারি সিআইডি আধিকারিকদের ৷ একজন ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিকের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক, পিজিটি, ট্রেনি, অ্যানাস্থেটিস এবং নার্সদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ৷ কথা বলেছেন, মৃত প্রসূতি মামণি রুইদাসের পরিবারের সঙ্গে ৷ আরেক প্রসূতি রেখা সাউয়ের স্বামীর সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা ৷ দুই শিশু বর্তমানে কেমন আছে, তা-ও জানতে চান তদন্তকারীরা ৷
সিআইডি সূত্রে খবর, ঘটনার দিন প্রসূতি বিভাগে অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র চিকিৎসকদের এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ৷ অভিযোগ, সিনিয়র চিকিৎসকরা নিজেদের দায়িত্ব পালন না-করে, জুনিয়রদের পাঁচটি সিজার ডেলিভারি ও অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ৷ প্রসূতি মৃত্যুর পর থেকেই তাঁরা সকলে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ৷ তাই তদন্তকারীদের স্ক্যানারেও রয়েছেন সকলে ৷
রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে খবর, চিকিৎসক দিলীপ পাল, চিকিৎসক হিমাদ্রি নায়েক (সিনিয়র ডাক্তার), চিকিৎসক সৌমেন দাস, চিকিৎসক পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় (অ্যানাস্থেটিস)-কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ৷
সেই সঙ্গে সিজার করা পিজিটি প্রথম বর্ষের ডা. মৌমিতা, ইনটার্ন ডা. সুশান্ত মণ্ডল, পিজিটি তৃতীয়বর্ষের ডা. ভাগ্যশ্রী, জুনিয়র ডাক্তার জাগৃতি ঘোষ এবং পিজিটি প্রথমবর্ষের অ্যানাস্থেটিস ডা. মণীশ প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিআইডি আধিকারিকরা ৷ মঙ্গলবারের পর এ দিনও অধ্যক্ষ ডা. মৌসুমী নন্দী এবং সুপার ডা. জয়ন্ত কুমার রাউতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ৷ এ দিন এক চিকিৎসককে হাতে স্যালাইনের বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সিআইডি আধিকারিকদের ঘরের বাইরে ৷ এর পাশাপাশি, হাসপাতাল থেকে বেশকিছু নথি গাড়িতে তুলতে দেখা যায় তদন্তকারীদের ৷
সিআইডি আধিকারিকরা মৃত প্রসূতি মামণি রুইদাসের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ৷ ডেকে পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি আরেক প্রসূতি রেখা সাউয়ের স্বামীকেও ৷ রেখা সাউয়ের স্বামী সন্তোষ সাউ বলেন, "সিআইডি-র লোকেরা জিজ্ঞাসা করলেন, কবে আমার স্ত্রী ভর্তি হয়েছে, এখন কেমন আছে ৷ আমাদের বাচ্চা কেমন রয়েছে, তা-ও জানতে চাইলেন ৷ রেখা একটু ভালো আছে ৷ বাচ্চা এখনও ভালো নেই ৷" মামণি রুইদাসের ননদ রুম্পা দাস বলেন, "আমাদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল ৷ আমাদের কাছ থেকে বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর নিয়েছেন তাঁরা ৷"