কলকাতা, 19 অগস্ট: কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে ৷ চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ ৷ অপেক্ষা, প্রশ্নও মাঝে মাঝে ফুটে উঠছে দু'চোখে ৷ "বাবার সঙ্গে এসেছিলাম ৷ কিন্তু, ওঁনারা বাবাকে ভিতরে নিয়ে চলে গেলেন ৷ আমাদেরকে ঢুকতে দিচ্ছে না," উদ্বেগ কালিন্দির বাসিন্দা দিশানী রায়ের গলায় ৷
রাত দখলের মিছিলে হাঁটা সাধারণ প্রতিবাদী মানুষের মন এখন ভয়ের দখলে ! কারণ, সে রাতের মিছিলে হাঁটা মানুষকে বেছে বেছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লালবাজারে ডেকে পাঠাচ্ছে কলকাতা পুলিশ ৷ সঙ্গে থাকা বাড়ির লোককে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আতঙ্কে, অপেক্ষায় সময় কাটছে তাঁদের ৷ কী অপরাধ করেছেন ? অরাজনৈতিক, অহিংস প্রতিবাদ মিছিলে সুবিচার চেয়ে হেঁটে কি কোনও অন্যায় করে ফেলেছেন ? এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সোমবার লালবাজারে তলব করা ব্যক্তিদের সঙ্গে গিয়ে বাইরে অপেক্ষারত পরিবার-পরিজনের মনে ৷
এমনই অতঙ্কমাখা অভিজ্ঞতার কথা ইটিভি ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন 14 অগস্ট রাত দখলের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া দিশানী রায় ৷ তিনিও লালবাজারে কলকাতা পুলিশের সদর দফতরের বাইরে একরাশ ভয় নিয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করছেন ৷ আতঙ্কের চোটে দিশানী বলেই ফেললেন, "আমার ভয় লাগছে।"
তাঁর বাবা দেবাশিস রায়ও সে দিন তাঁর সঙ্গেই ওই প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন প্রতিটি মেয়ের নিরাপত্তার দাবিতে ৷ কারণ, তিনিও তো মেয়ের বাবা ৷ তাঁর মেয়েও বাড়ির বাইরে পা রাখলে নানা আশঙ্কায়, দুশ্চিন্তায় সময় কাটে তাঁর ৷ তাই, আরজি করের নির্যাতিতার বাবার কষ্টটা তিনিও বুঝতে পারছেন ৷ সেই জন্যে নিজের মেয়েকে পাশে নিয়ে 14 অগস্ট রাত দখলের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন দেবাশিসবাবু ৷ ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় হোয়াটস্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে তাঁকে লালবাজারে ডেকে পাঠিয়েছে কলকাতা পুলিশ ৷
ঠিক কী কারণে বাবাকে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হল, জানেন না দিশানী ৷ পুলিশ এসে দেবাশিসবাবুকে ডেকে ভিতরে নিয়ে গেলেও তাঁকে সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি ৷ ফলে, বাবার জন্য অনেকটা দুশ্চিন্তা, কিছুটা ভয় নিয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করছেন তিনি ৷ তিনি বলেন, "হ্যাঁ, সেদিন রাতে আমিও মিছিলে ছিলাম ৷ আমার বাবাকে ডাকা হয়েছে ৷ রাত দখলে 14 তারিখ রাতে আমাদের মিছিলটা কোনও রাজনৈতিক দলের ছিল না ৷ সাধারণ মানুষজনের মিছিল ছিল ৷ যাঁদের মধ্যে বিবেকবোধ আছে, তাঁরা গিয়েছিল ওই মিছিলে ৷ দমদম থেকে এই মিছিলটা হয়েছিল আরজি কর অবধি ৷ যদিও সেই মিছিল আরজি কর পর্যন্ত যেতে পারেনি ৷ কারণ, ততক্ষণে আরজি করে যাওয়ার রাস্তা ব্লক হয়ে গিয়েছে ৷ ফলে আমরা সবাই ফিরে এসেছিলাম ৷ আমাদের যাওয়া থেকে আসা পর্যন্ত পুরোটাই ভিডিয়ো করা ছিল ৷ তা সত্ত্বেও ওঁনারা এভাবে কী করে ডেকে পাঠাচ্ছেন ? কোনও নাম ওঁনারা উল্লেখ করেননি ৷ ওঁনারা ফোন নম্বর ধরে তলব করেছেন ৷"
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতার চিকিৎসকদের সঙ্গে জুড়েছে গোটা দেশ ৷ রাত দখলে পথে নেমেছেন অসংখ্য মানুষ ৷ ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই ৷ সরকারি হাসপাতালের পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় আপাতত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে ৷ ঘটনায় যুক্ত একাধিক অপরাধীর আশঙ্কায় তদন্ত ও অনুসন্ধান চলছে ৷ এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বাকি অপরাধীদের নাগাল পেতে দিনভর তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকরা ৷ তবে, কলকাতা পুলিশ খুঁজছে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করছে রাত দখলের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সাধারণ নাগরিকদের ৷ এমনই অভিযোগ করে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই ৷
আরজি কর কাণ্ডে যে জঘন্য অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদে গত 14 অগস্ট রাত দখলের কর্মসূচিতে পথে নেমেছিলেন কলকাতা-সহ বাংলার হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ৷ দেশজুড়ে অসংখ্য মানুষের প্রতিবাদ, জমায়েত সে দিন নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের ৷ কিন্তু, কলকাতা পুলিশ কেন সাধারণ মানুষকে লালবাজারে ডেকে পাঠাচ্ছে, বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই ৷ ফলে, লালবাজারে হাজিরার জেরে আতঙ্ক বাড়ছে প্রতিবাদে সামিল হওয়া নাগরিকদের মনে ৷