সোদপুর, 13 অক্টোবর: অনশন মঞ্চ থেকে জুনিয়র ডাক্তাররা একাদশীর দিন 'অরন্ধন' কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন। তাতে সাড়া দিয়ে 'অরন্ধন' কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিলেন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা-মাও।
রবিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই বিষয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "আমরা এই অরন্ধন কর্মসূচি পালন করছি। চেষ্টা করছি উপোস করতে। জুনিয়র ডাক্তাররা বলেছিলেন, উপোস না-করতে। না খেয়ে থাকলে আমাদের শরীর খারাপ হতে পারে সেই চিন্তা করেই ওঁরা এ কথা বলেছিলেন। যতক্ষণ শরীর চলবে ততক্ষণ উপোস করেই থাকব। তা না-হলে ফল খেয়েই দিন কাটাব।"
এসএসকেএম হাসপাতালে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যের প্রসঙ্গে এদিন নির্যাতিতার বাবা বলেন, "নিরাপত্তার অভাব যে এখনও রয়েছে,তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। নিরাপত্তার দাবি নিয়েই জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ অথচ, সরকারের কোনও সদিচ্ছা দেখতে পারছি না। তাদের সদিচ্ছা নেই বলেই দুষ্কৃতীরা হামলা চালানোর সাহস দেখাতে পারছে হাসপাতালগুলিতে।"
এই প্রসঙ্গে নির্যাতিতা ছাত্রীর মা বলেন, "জুনিয়র ডাক্তাররা এতদিন ধরে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন । অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালেও ভর্তি করতে হচ্ছে। তারপরও সরকারের কোনও হেলদোল নেই। আমরা চাই, জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক সরকার। সমস্যার সমাধান হোক ।"
এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "ওরা তো শুধু নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন করছেন না।সমস্ত জনগণকে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়ার জন্যই নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন । উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বলছেন, গরিব মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছে না। ডাক্তাররা যদি নির্বিঘ্নে কাজ করতে না-পারে তাহলে কীভাবে পাবে? আতঙ্ক নিয়ে যদি সবসময় কাজ করতে হয়, তাহলে তো ভুলভ্রান্তি হওয়ার সম্ভবনা থেকেই যায়।"
এদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে শহরের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা 48 ঘণ্টার আংশিক কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "উনি (মুখ্যমন্ত্রী) রাজ্যের প্রশাসক হওয়া পরও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। সেই কারণে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে সিনিয়র ডাক্তাররাও সামিল হয়েছেন এই ধরনের আন্দোলনে।" স্বামীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে এবিষয়ে নির্যাতিতার মা-ও বলেন, "জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকার জন্যই সিনিয়র ডাক্তাররা 48 ঘণ্টার পেন ডাউনের ডাক দিয়েছেন। ওঁরা একসঙ্গে লড়তে এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।"
কোথাও কী সরকারের প্রতি গ্লানি, ক্ষোভ থেকেই ডাক্তাররা এই পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "সরকার কোনও সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে না-বলেই নতুন নতুন আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হচ্ছেন সিনিয়র ডাক্তাররা। প্রতিদিনই প্রতিবাদের রং পাল্টাচ্ছে।" সরকার উৎসব নিয়ে ব্যস্ত। আজকে উমার বিসর্জন হয়ে যাচ্ছে।"
অন্য একটি প্রসঙ্গে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা বলেন, "সরকার যেটা ভালো বুঝছে, সেটা করছে। তবে, এটুকু বলতে পারি জনগণের কথা ভাবছে না সরকার। উৎসবের সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবাও জরুরি। ডাক্তারের প্রয়োজন নেই- এমন কোনও লোক দেখাতে পারবেন না। এমন কেউ নেই যাঁকে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি। ফলে, এতটা জরুরি একটার পরিষেবার উন্নয়নে সরকার কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না সেটাই বুঝতে পারছি না।"
অন্যদিকে, সিবিআই তদন্তের উপর তাঁদের পরিবারের পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলেও ফের এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা। তদন্তে সদর্থক কিছু না-দেখলে পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী অথবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার-ও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। অপরদিকে,জনগণের সমর্থন তাঁদের পাশে থাকলে মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার একদিন পাবেন বলেও আশাবাদী নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবার।