ETV Bharat / state

স্বপ্ন অধরা রেখেই মৃত্যু এসএলএসটি আন্দোলনকারীর, পরিবারের অভিযোগ 'মানসিক চাপ' - SLST Job Seeker

SLST Job Seeker Dies: প্রায় চার বছর ধরে এসএসসি পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে নয়া এসএলএসটি মঞ্চ। যার নেতৃত্বে ছিলেন ইমরান। রবিবার রাতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তাঁর ৷ চাকরি না-পাওয়ায় কি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন ইমরান? মৃত্যুর নেপথ্য কারণ হিসেবে পরিবারের অভিযোগ অবশ্য তেমনটাই ৷

SLST Job Seeker Died
মৃত্যু এসএলএসটি আন্দোলনকারীর (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 6, 2024, 5:34 PM IST

এসএলএসটি আন্দোলনকারীর মৃত্যু (নিজস্ব চিত্র)

বালুরঘাট, 6 মে: কলেজ জীবনে এসএফআই, তারপর ডিওয়াইএফআই ৷ ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতি করতেন ইমরান ৷ হকের চাকরি পেতে যোগ দিয়েছিলেন এসএলএসটি আন্দোলনে ৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউ এসএসসি, এসএলএসটি গ্রুপ সি-ডি একতা মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতিও ছিলেন তিনি ৷ রবিবার দুপুরে হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তাঁর ৷ চাকরি না-পাওয়া, সংগঠনের সবাইকে চাকরির পথ না-দেখানো, বেকারত্ব, এসব মিলিয়েই কি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন বছর চৌত্রিশের ইমরান হোসেন! তাঁর অকালমৃত্যুতে এই প্রশ্ন শুধু তাঁর গ্রামে নয়, রাজ্যজুড়ে ৷

পড়াশোনার সূত্রে কলকাতাতেই থাকতেন ইমরান ৷ গত রবিবার সংগঠনের আন্দোলনে সামিল ছিলেন তিনিও ৷ শনিবার কলকাতা থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের কালিকামড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আমিনপুর বাজারপাড়া গ্রামে বাড়িতে ফিরেছিলেন ৷ রবিবার সকালে বাবার সঙ্গে বাজার যান ৷ দুপুরে খেতে বসেই বিপত্তি! ভাত খেতে খেতেই তাঁর মুখ-সহ শরীরের একটি দিক বেঁকে যেতে শুরু করে ৷ তা দেখে পরিবারের লোকজন তড়িঘড়ি স্থানীয় গঙ্গারামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান ৷

কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে অন্যত্র রেফার করে দেন ৷ তাঁকে কলকাতা নিয়ে যাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা ৷ কিন্তু পথেই মৃত্যু হয় তাঁর ৷ ফের গঙ্গারামপুর হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হলে সিটি স্ক্যান করে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ রবিবার রাতেই গ্রামের ইমরানের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে ৷ মৃত ইমরানের কাকা আনোয়ার হোসেন বলেন, "বাবার সঙ্গে বাজার গিয়েছিল ৷ বাড়ি ফিরে খেতে খেতে হঠাৎ দেখি মুখ বেঁকে যাচ্ছে । তারপর পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রশিদপুর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে গঙ্গারামপুর সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানেই সিটি স্ক্যান করানো হয়। এরপরেই ডাক্তার জানান, ইমরান মারা গিয়েছে।"

চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কোনও একটি বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ প্রভৃতি বিষয়ে কখনও মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে সেরিব্রাল অ্যাটাক হতে পারে ৷ অন্যান্য কিছু রোগও সেরিব্রাল অ্যাটাককে ত্বরান্বিত করতে পারে ৷ এক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল, তা মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পরেই সঠিকভাবে জানা সম্ভব ৷ যদিও ইমরানের পরিবারের দাবি, তাঁর কোনও রোগ ছিল না ৷ মানসিক চাপই তাঁর মৃত্যুর কারণ ৷

প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম হলেও ছোট থেকে পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন ইমরান ৷ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি, এমএসসি ও বিএড উত্তীর্ণ হন ৷ তাঁর এহেন মৃত্যুতে শোকাহত সবাই ৷ পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, 2016 সাল থেকে রাজ্যে এসএসসি বন্ধ ৷ সেই পরীক্ষা চালুর দাবিতে রাজ্যের অসংখ্য চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে ইমরান গড়ে তুলেছিলেন প্রতিবাদের মঞ্চ ৷ আমরা সেই যোদ্ধাকে হারালাম ৷" ভোট বাজারে ইমরানের মৃত্যুও এখন রাজনীতির পসরা ৷

বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন, "ইমরানের মৃত্যু দুঃখজনক ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি যোগ্য প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছিলেন। তাঁর এই মৃত্যু রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা ৷ সরকার যদি যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সুবন্দোবস্ত করতে পারত তাহলে হয়তো এভাবে আন্দোলনকারীকে অকালে চলে যেতে হতো না।"

আরও পড়ুন:

  1. হাইকোর্টের রায় মেনেও এসএসসি নিয়োগে যোগ্যদের বঞ্চনার অভিযোগ চাকরিপ্রার্থীদের
  2. পাঁচ বছর পেরোলেও প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি এখনও, লোকসভা ভোটের মুখে কী বলছেন চাকরিপ্রার্থীরা ?
  3. আইন বদলে প্রয়োজনে নিয়োগ দিক সরকার, সরব চাকরিপ্রার্থীরা

এসএলএসটি আন্দোলনকারীর মৃত্যু (নিজস্ব চিত্র)

বালুরঘাট, 6 মে: কলেজ জীবনে এসএফআই, তারপর ডিওয়াইএফআই ৷ ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতি করতেন ইমরান ৷ হকের চাকরি পেতে যোগ দিয়েছিলেন এসএলএসটি আন্দোলনে ৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউ এসএসসি, এসএলএসটি গ্রুপ সি-ডি একতা মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতিও ছিলেন তিনি ৷ রবিবার দুপুরে হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তাঁর ৷ চাকরি না-পাওয়া, সংগঠনের সবাইকে চাকরির পথ না-দেখানো, বেকারত্ব, এসব মিলিয়েই কি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন বছর চৌত্রিশের ইমরান হোসেন! তাঁর অকালমৃত্যুতে এই প্রশ্ন শুধু তাঁর গ্রামে নয়, রাজ্যজুড়ে ৷

পড়াশোনার সূত্রে কলকাতাতেই থাকতেন ইমরান ৷ গত রবিবার সংগঠনের আন্দোলনে সামিল ছিলেন তিনিও ৷ শনিবার কলকাতা থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের কালিকামড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আমিনপুর বাজারপাড়া গ্রামে বাড়িতে ফিরেছিলেন ৷ রবিবার সকালে বাবার সঙ্গে বাজার যান ৷ দুপুরে খেতে বসেই বিপত্তি! ভাত খেতে খেতেই তাঁর মুখ-সহ শরীরের একটি দিক বেঁকে যেতে শুরু করে ৷ তা দেখে পরিবারের লোকজন তড়িঘড়ি স্থানীয় গঙ্গারামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান ৷

কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে অন্যত্র রেফার করে দেন ৷ তাঁকে কলকাতা নিয়ে যাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা ৷ কিন্তু পথেই মৃত্যু হয় তাঁর ৷ ফের গঙ্গারামপুর হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হলে সিটি স্ক্যান করে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ রবিবার রাতেই গ্রামের ইমরানের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে ৷ মৃত ইমরানের কাকা আনোয়ার হোসেন বলেন, "বাবার সঙ্গে বাজার গিয়েছিল ৷ বাড়ি ফিরে খেতে খেতে হঠাৎ দেখি মুখ বেঁকে যাচ্ছে । তারপর পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রশিদপুর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে গঙ্গারামপুর সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানেই সিটি স্ক্যান করানো হয়। এরপরেই ডাক্তার জানান, ইমরান মারা গিয়েছে।"

চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কোনও একটি বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ প্রভৃতি বিষয়ে কখনও মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে সেরিব্রাল অ্যাটাক হতে পারে ৷ অন্যান্য কিছু রোগও সেরিব্রাল অ্যাটাককে ত্বরান্বিত করতে পারে ৷ এক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল, তা মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পরেই সঠিকভাবে জানা সম্ভব ৷ যদিও ইমরানের পরিবারের দাবি, তাঁর কোনও রোগ ছিল না ৷ মানসিক চাপই তাঁর মৃত্যুর কারণ ৷

প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম হলেও ছোট থেকে পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন ইমরান ৷ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি, এমএসসি ও বিএড উত্তীর্ণ হন ৷ তাঁর এহেন মৃত্যুতে শোকাহত সবাই ৷ পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, 2016 সাল থেকে রাজ্যে এসএসসি বন্ধ ৷ সেই পরীক্ষা চালুর দাবিতে রাজ্যের অসংখ্য চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে ইমরান গড়ে তুলেছিলেন প্রতিবাদের মঞ্চ ৷ আমরা সেই যোদ্ধাকে হারালাম ৷" ভোট বাজারে ইমরানের মৃত্যুও এখন রাজনীতির পসরা ৷

বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন, "ইমরানের মৃত্যু দুঃখজনক ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি যোগ্য প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছিলেন। তাঁর এই মৃত্যু রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা ৷ সরকার যদি যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সুবন্দোবস্ত করতে পারত তাহলে হয়তো এভাবে আন্দোলনকারীকে অকালে চলে যেতে হতো না।"

আরও পড়ুন:

  1. হাইকোর্টের রায় মেনেও এসএসসি নিয়োগে যোগ্যদের বঞ্চনার অভিযোগ চাকরিপ্রার্থীদের
  2. পাঁচ বছর পেরোলেও প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি এখনও, লোকসভা ভোটের মুখে কী বলছেন চাকরিপ্রার্থীরা ?
  3. আইন বদলে প্রয়োজনে নিয়োগ দিক সরকার, সরব চাকরিপ্রার্থীরা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.