কলকাতা, 10 অক্টোবর: 2006 সাল থেকে কলকাতার ট্রামের টানে সেই সুদূর জার্মানি থেকে বারেবারেই কলকাতায় এসেছেন মার্টিন স্নাইডার । তবে এবার কলকাতায় এসে তিনি যে খবর পেলেন, তাতে অত্যন্ত হতাশ ৷ শহরের রাজপথ থেকে অচিরেই উধাও হয়ে যেতে পরে 150 বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী ট্রাম পরিষেবা । তাঁর মতে, সরকারের সদিচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই কলকাতার ট্রামের আজ এই বেহাল দশা ।
দেশের একমাত্র শহর কলকাতায় এখনও কোনওমতে টিকে রয়েছে ট্রাম । কালের নিয়মে শহরের গতি বেড়েছে । বেড়েছে গাড়ির সংখ্যাও । তবে সেই তুলনায় গাড়ি চলাচল করতে পারে তেমন রাস্তা মাত্র 5 শতাংশ । তাই রাজপথে ট্রাম চললে তা অন্যান্য গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে একদিকে সমস্যা সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে যানজট বাড়াচ্ছে । তাই পরিবেশবান্ধব হলেও আর চালানো যাবে না ট্রাম । এমনটাই যুক্তি রাজ্য পরিবহণ বিভাগের । সম্প্রতি পরিবহণ বিভাগের ট্রাম নিয়ে এই ভাবনার কথাটা খুব স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী । আর তারপর থেকেই বিভিন্ন মহলে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে ।
এই বিষয়ে পরিবহণ ও ট্রাম গবেষক মার্টিন স্নাইডার মনে করেন যে, ট্রাম বন্ধ করে দেওয়াটা একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত হবে । কারণ 1950-60 সালে অটোমোবাইল লবিকে প্রাধান্য দিতে যেসব শহর থেকে ট্রাম পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেইসব দেশের সরকার নিজেদের ভুল সংশোধন করে আবারও ট্রাম ফিরিয়ে এনেছে । এমনকি তখনকার সেই সিদ্ধান্তকে তারা ভুল বলেও স্বীকার করে নিয়েছে । জার্মানিতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ট্রামকে আরও উন্নত করা হয়েছে । বিশ্বে একাধিক দেশে বিশেষ করে ইউরোপের একাধিক শহরে পরিবেশবান্ধব এই যান এখন নগরসভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে বলে জানান স্নাইডার ।
তিনি মনে করছেন যে, এমন একটা পরিবহণ ব্যবস্থা হওয়া উচিত, যেখানে একটি গাড়িতে একসঙ্গে অনেক যাত্রী যাতায়াত করতে পারেন । এর ফলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেকটাই কমবে এবং রাস্তাগুলিও যানজট মুক্ত হবে । কারণ এখনও কলকাতার যাত্রীদের একটা বড় অংশ গণপরিবহণের উপরই নির্ভর করেন । তাই গণপরিবহণকে আরও কী করে উন্নত এবং যাত্রী বান্ধব করা যায়, সেই বিষয়টির উপরেই অনেক বেশি জোর দিতে হবে ।
স্নাইডার বলেন, "এই যে বারে বারে দাবি করা হচ্ছে যে, ট্রাম যানজটের সৃষ্টি করে ও খুব ধীরে চলে, এই বিষয়টি একেবারেই ঠিক নয় । কারণ রাস্তায় যদি অন্যান্য গাড়ির সংখ্যা কম থাকে, তাহলে রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা পাওয়া যাবে এবং ট্রাম অনেক গতিতে দৌড়তে পারবে ।"
প্রায় আড়াই বছর পর আবারও কলকাতায় ফিরে এসেছেন মার্টিন ৷ একদিকে তিনি দেখলেন যে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজট, অন্যদিকে মাত্র একটি ট্রাম চোখে পড়েছে তাঁর । এতেই আক্ষেপ ধরা পড়েছে তাঁর গলায় ৷