কলকাতা, 11 ডিসেম্বর: রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গুণমান কমে যাওয়ার অভিযোগে এবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে নিশানা করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ৷ রাজ্যপাল তথা আচার্যকে 'ডাকবাক্স' বলে মন্তব্য করলেন তিনি ৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগে গড়িমসি করার অভিযোগ করলেন তিনি ৷
উল্লেখ্য, বুধবার বিধানসভায় ভবানীপুর গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বিল 2024 পেশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ৷ সেই সময় শঙ্কর ঘোষ-সহ বিরোধী বিধায়কদের একাংশ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গুণমান কমে যাওয়ার অভিযোগ করেন ৷ যার জবাবে পালটা রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ব্রাত্য বসু ৷
শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগ করেন, "রাজ্যপাল যেদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে খেলনা বলে মনে করতে শুরু করেছেন, সেদিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এই অবস্থা হতে শুরু করেছে ৷ সুপ্রিম কোর্ট তার নির্দেশে স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইউ ইউ ললিতের নেতৃত্বে তৈরি এক্সপার্ট কমিটি নাম দেবে ৷"
বিধানসভায় ব্রাত্য আরও বলেন, "এক্সপার্ট কমিটির পাঠানো তালিকা থেকে মুখ্যমন্ত্রী উপাচার্যদের নাম গিয়েছে, তা রাজভবনে পাঠাবেন ৷ এখানে উপাচার্য নিয়োগে রাজ্যপালের কোনও ভূমিকা নেই ৷ রাজ্যপাল শুধু ডাকবাক্স ৷ মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো নামে তিনি শুধু অনুমোদন দেবেন ৷"
এক্ষেত্রে যে শিক্ষা দফতরেরও কোনও ভূমিকা নেই, তাও স্পষ্ট করে দেন ব্রাত্য ৷ তিনি বলেন, "এখানে শিক্ষা দফতর নোডাল অফিস হলেও, তার কোনও ভূমিকা নেই ৷ অথচ দেখা যাচ্ছে রাজ্যপাল তাঁর ভূমিকা ঠিক মতো পালন করছেন না ৷ মুখ্যমন্ত্রী 35টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নাম রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছেন ৷ তাঁর এই সিদ্ধান্তে কোনও আপত্তি থাকলে, তিনি সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে তা জানাতে পারেন ৷ তা তিনি করছেন না ৷ তা না করে, কখনও তিনজন, কখনও চারজন করে উপাচার্যের নামে মঞ্জুরি দিচ্ছেন ৷"
রাজ্যপাল শিশুসুলভ আচরণ করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "রাজ্যপালের আচরণ গোটাটাই শিশুসুলভ ৷ আর এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন প্রভাবিত হচ্ছে ৷ ধ্বংস হচ্ছে সেখানে শিক্ষার পরিবেশ ৷ মুখ্যমন্ত্রী এখনও সৌজন্য দেখাচ্ছেন ৷ তবে, তাঁর সৌজন্যকে কেউ যেন ভুল না-বোঝেন ৷ আসলে কেউ ফুলের ভাষা বোঝে, কেউ বোঝে তরোয়ালের ভাষা ৷ আমরা তাঁকে ফুলই দিতে চাই ৷ তবে, যেভাবে চলছে তাতে আমরা তাঁকে গোলাপ ফুল দিলেও, একটা সময় গিয়ে সরষে ফুল দেখতে বাধ্য হবেন ৷"
প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল হিসাবে দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সিভি আনন্দ বোস ৷ এরপর দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে রাজভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখাও করেন ৷ কিন্তু, এসবের মাঝেই শিক্ষামন্ত্রীর রাজ্যপালের সমালোচনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ ৷