কলকাতা, 5 অগস্ট: তদন্ত নেমে রেশন দুর্নীতির আরও গভীরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা । এবার তদন্তকারীরা জানতে পারলেন, রাজ্যের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু এবং ধৃত আনিসুর রহমানের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট (সিএ) একজনই । অর্থাৎ, তাঁদের টাকা পয়সা দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন ওই এক ব্যক্তিই । আর তিনি হলেন শান্তনু ভট্টাচার্য । তাঁর মধ্য কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোডের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রেশন দুনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে বিপুল তথ্য পেলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা ।
জানা গিয়েছে, এই শান্তনুকে এর আগেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডির গোয়েন্দারা । এরপর গত সপ্তাহে তাঁর অফিসে তল্লাশি চালানো হয় ৷ সেখানে থাকা কম্পিউটার থেকে 'ই এইচ গ্রুপ অফ কোম্পানি'র 2021 থেকে 2022 সাল পর্যন্ত একটি ব্যালান্স শিট উদ্ধার করেছে ইডি । আর তার সূত্র ধরেই মুলত পাঁচটি সংস্থার হদিশ পান তদন্তকারীরা । এই পাঁচটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটি সংস্থা হল গ্রিনিশ মার্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং পিকাসো ও গ্রিনরাশ ।
ইডি সূত্রে খবর, ওই সংস্থাগুলির ঠিকানা মধ্য কলকাতার স্ট্রান্ড রোডে । তদন্তকারীরা অনুমান করছেন, ওই সংস্থাগুলির মালিক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু ও তাঁর স্ত্রী । কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি, উদ্ধার হওয়া ওই ব্যালেন্স শিটের একাধিক তথ্য অনুযায়ী ওই পাঁচটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে নগদে প্রায় 6 কোটি 55 লক্ষ টাকা জমা পড়েছিল । এর মধ্যে আনিসুরের ভাই আলিফ নুরের মাধ্যমে 'ই এইচ গ্রুপ অফ কোম্পানি' নামক একটি সংস্থায় জমা পড়েছে 94 লক্ষ টাকা ।
এ ছাড়াও, উদ্ধার হওয়া ব্যালেন্স শিট ঘেঁটে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মনা দা নামক এক ব্যক্তির নাম । এই মনাদা নামক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে সংস্থার অ্যাকাউন্টে প্রায় সাড়ে 11 লক্ষ টাকা জমা পড়েছে ওই আর্থিক বছরেই । আর এই প্রত্যেকটি টাকার ভাগিদার ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । ফলে বালুকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা ।
রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে ইতিমধ্যেই দেগঙ্গার তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আনিসুর রহমান ওরফে বিদেশ এবং তাঁর ভাই আলিফ নুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে ইডি । জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহেই দেগঙ্গায় আলিফের বাড়ি ও চালকলে ম্যারাথন তল্লাশি চালিয়ে সেখান থেকে প্রায় 13 লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ইডি । এছাড়াও, বেশ কিছু নথি ও দুটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে । মূলত, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে এই বিদেশের কয়েকবার কোটি কোটি টাকার হাতবদলের তথ্য পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা । সেই মতই ইডির গোয়েন্দাদের দাবি, বিদেশ ও তাঁর ভাইকে খুব ভালোভাবে জেরা করে তাঁদের বয়ান রেকর্ড করতে হবে এবং সেটি বেশ কয়েক দফায় মিলিয়ে দেখারও প্রয়োজন রয়েছে ।
রাজ্যে রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে তদন্তে নেমে প্রথমে উত্তর 24 পরগনা জেলার ব্যবসায়ী বলে পরিচিত বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে ইডি । এই বাকিবুরকে জেরা করে তাঁর থেকে রাজ্যের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী বালুর নাম জানতে পারেন তদন্তকারীরা । পরে বালুর সল্টলেকের বাড়ি ও অফিসে দীর্ঘক্ষণ ধরে তল্লাশি চালিয়ে তাঁকেও গ্রেফতার করে ইডি । বালুকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে রেশন দুর্নীতিকাণ্ডের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন তদন্তকারীরা । ধীরে ধীরে এরপর গ্রেফতার হন শঙ্কর আঢ্য ও বিশ্বজিৎ দাস । এদের প্রত্যেকের বিদেশ যোগের তথ্য ইডির হাতে আসে ।