কলকাতা, 3 অগস্ট: রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির হাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য । প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ব্যাঙ্কে কোটি কোটি টাকা দেওয়ার পরও অতিরিক্ত 94 লক্ষ টাকা আলাদা করে 'বালু'র হাতে তুলে দিয়েছিলেন দুই 'গুণধর' ভাই আনিসুর রহমান এবং আলিফ নুর । তদন্তে নেমে আনিসুর ও আলিফকে প্রাথমিকভাবে জেরা করে এমনই তথ্য পেয়েছেন ইডির তদন্তকারীরা । এবার এ বিষয়ে আরও তথ্য পেতে জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন তদন্তকারীরা । এর জন্য আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে ইডি ।
জানা গিয়েছে, আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে গিয়ে 'বালু'কে জেরা করবেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা ৷ মূলত এই ঘটনার তদন্তে নেমে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ এবং একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাক্যাউন্ট ঘেঁটে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত বাকিবুর রহমানের কাছ থেকেও নাকি প্রায় 90 লক্ষ টাকা আনিসুর এবং আলিফের কাছে এসেছিল । কিন্তু বাকিবুর কেন তাঁর এই দুই ভাইকে প্রায় 90 লক্ষ টাকা দিতে গেল, সেই বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয় ইডির তদন্তকারীদের কাছে ৷
চলতি সপ্তাহেই ইডি আধিকারিকরা প্রায় 14 ঘণ্টা আলিফ ও আনিসুরের ফ্ল্যাট ও চালকলে তল্লাশি চালান ৷ এছাড়া এই বিষয়ে অনান্য একাধিক ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৷ এরপরেই রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে গত বৃহস্পতিবার আনিসুর এবং আলিফকে গ্রেফতার করে ইডি ।
সেদিন ইডি আধিকারিকরা আলিফ ও আনিসুরের কাছ থেকে যেসব তথ্য জানতে চেয়েছিলেন তা হল:
- কেন তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাক্যাউন্টে কোটি কোটি টাকা মাঝেমধ্যেই হাতবদল হত ?
- বাকিবুর রহমানের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কের বাইরে তাঁদের আর কী সম্পর্ক ছিল ?
- জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে তাঁরা কীভাবে চিনতেন ?
- রেশন দুর্নীতির সময় 'বালু' রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন । আর আলিফ ও আনিসুর তাঁদের দাবি অনুযায়ী, ব্যবসায়ী ছিলেন । ফলে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই ব্যবসায়ীদের এত ঘনিষ্ঠতা কীভাবে হল ?
- কেন কোটি কোটি টাকা মাঝেমধ্যেই হাতবদল করে 'বালু'কে দেওয়া হয়েছিল ?
- টাকা আর কাদের কাদের দেওয়া হত ?
- সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল, তাঁদের এই কোটি কোটি টাকার উৎস কী ছিল ?
- বারিক বিশ্বাসের সঙ্গে তাদের কী সম্পর্ক ছিল ?
- কীভাবে তাঁদের এত কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হল ?
- বালু ও বাকিবুর ছাড়া তাঁরা আর কাদের কাদের টাকা পাঠিয়েছিলেন ?
উল্লেখ্য, আগেই রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন ব্যবসায়ী বলে পরিচিত বাকিবুর রহমান । পরে রাজ্যের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতাপ্রিয় মল্লিককেও গ্রেফতার করে ইডি । পরে জানা গিয়েছে, এই রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে যুক্ত রয়েছে সন্দেশখালির 'বেতাজ বাদশা' শেখ শাহজাহান । এরপরেই চলতি বছরের 5 জানুয়ারি ইডি আধিকারিকরা সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যান ৷
সেসময় কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে । পরে দীর্ঘ টালবাহানার পর রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে গ্রেফতার হন শেখ শাহজাহান । পরে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয় সিবিআই । তারপরে রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্ত যত এগোয় তালিকা আরও লম্বা হয় ৷ অভিযুক্ত হিসাবে ধীরে ধীরে বারিক বিশ্বাস, আলিফ নুর ও আনিসুর রহমানের নাম প্রকাশ পায় ইডির কাছে ।