কলকাতা, 2 অগস্ট: রেশন দুর্নীতির তদন্তে নয়া চমক ৷ এই দুর্নীতি মামলায় ধৃত তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান ওরফে বিদেশ চিন থেকে নকল চাল তৈরির যন্ত্র কিনে এনেছিলেন ৷ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে খবর ৷ যদিও এই নিয়ে তদন্তকারীরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন ৷
রেশন দুর্নীতি মামলায় উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গায় তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আনিসুর রহমান ওরফে বিদেশ ও তাঁর ভাই আলিফ নুরকে গ্রেফতার করেছে ইডি । তাঁদের প্রাথমিকভাবে জেরাও করেছেন তদন্তকারীরা ৷ ইডি সূত্রে খবর, সেই জেরা থেকেই একাধিক তথ্য সামনে এসেছে ৷ তার মধ্য়ে অন্যতম, চিন থেকে নকল চাল তৈরির মেশিন কিনে আনা ৷ তৃণমূল নেতা বিদেশ ওই যন্ত্র কিনে এনেছিলেন । তদন্তকারীদের ধারণা, ইউটিউব দেখেই ওই যন্ত্র সম্বন্ধে জানতে পারেন বিদেশ ৷ তার পর যন্ত্রটি তিনি কিনে আনেন ৷
কিন্তু সেই যন্ত্র দিয়ে নকল চাল তৈরির পর, তা কোথায় ব্য়বহার করা হত ৷ সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও ইডির হাতে আসেনি ৷ ইডি সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ৷ তদন্তকারীদের ধারণা, রেশনের চালের সঙ্গেই এই নকল চাল মিশিয়ে দুর্নীতি করতেন বিদেশ ?
বিদেশ ও তাঁর ভাইয়ের অফিস, ফ্ল্যাট ও গ্যারেজে তল্লাশি চালিয়ে যে সব নথি উদ্ধার হয়েছে ৷ সেই নথি থেকেই নকল চাল তৈরির যন্ত্র কেনার বিষয়টি ইডির নজরে এসেছে ৷ পাশাপাশি ইডির তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে ভুয়ো রেশন কার্ড দিয়ে রেশনের ভালো চাল নিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করতেন বিদেশ ৷ এমনকী ভিনরাজ্যেও পাচার করতেন ৷ সেক্ষেত্রেও ভালো চালের সঙ্গে নকল চাল মেশানো হত কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা ৷ তাই বিদেশ ও নুর রহমানকে আরও ভালোভাবে জেরা করা প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন ইডির তদন্তকারীরা ।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই দেগঙ্গায় আলিফের বাড়ি এছাড়াও চালকলে ম্যারাথন তল্লাশি চালিয়ে সেখান থেকে প্রায় 13 লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ইডি । এছাড়াও বেশ কিছু নথি ও দু’টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় ।
রাজ্যের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে এই বিদেশের কয়েকবার কোটি কোটি টাকার হাত বদলের তথ্যও পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা । সেই মতোই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি, বিদেশ ও তাঁর ভাইকে খুব ভালো করে জেরা করে তাঁদের বয়ান রেকর্ড করে সেটি বেশ কয়েকদফায় মিলিয়ে দেখা প্রয়োজন রয়েছে ।
রাজ্যের রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে প্রথমে উত্তর 24 পরগনা জেলার ব্যবসায়ী বলে পরিচিত বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে ইডি । পরে বাকিবুরের থেকে রাজ্যের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম জানতে পারা যায় । পরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সল্টলেকের বাড়ি ও অফিসে দীর্ঘক্ষণ ধরে তল্লাশি চালায় ইডি ৷ এর পর তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি ।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে রেশন দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন ইডির তদন্তকারীরা । ধীরে ধীরে এরপর গ্রেফতার হন শংকর আঢ্য ও বিশ্বজিৎ দাস । এদের প্রত্যকের বিদেশ-যোগের তথ্য ইডির হাতে আসে । আগামিদিনে আরও কারও নাম আসে কি না, সেটাই দেখার ৷