আসানসোল, 30 জানুয়ারি: রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা ইসিএলের ভূগর্ভস্থ কয়লাখনিতে এবার উচ্চমানের নাইট ভিশন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হতে চলেছে । এই প্রথমবার এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে । এর ফলে খনি গর্ভে শ্রমিকদের যেমন নিরাপত্তা বাড়বে, পাশাপাশি অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো যাবে । নজরদারি চালানো যাবে খনি গর্ভে ব্যবহৃত যন্ত্র ও উৎপাদনেও ।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ইসিএলে 48টি ভূগর্ভস্থ কয়লা খনি রয়েছে । অতীতে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে খনি গহ্বরে । যেকোনও বিষয়ে যাতে তড়িঘড়ি খনির উপরিভাগে সেই খবর এসে পৌঁছায়, সবসময় বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে নজরদারি চালানো যায়, সেই কারণেই এমন উদ্যোগ প্রথমবার নেওয়া হচ্ছে ।
ইসিএলের জেনারেল ম্যানেজার (সেফটি) অশোক কুমার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভূগর্ভস্থ খনি শ্রমিকদের নিরাপত্তা বা খনির ভিতরে কোনও ঘটনা ঘটলে, সব ছবি এইসব ক্যামেরায় দেখা যাবে । সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি খনির উপর থেকে নির্দিষ্ট কন্ট্রোল রুম থেকেই মনিটরিং করা যাবে । তেমন কিছু খনির ভিতরে ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট উপরমহলের কর্তাদের জানানো হবে এবং সেই ঘটনা রোখা যাবে ৷
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, খনির ভিতরে প্রচণ্ড অন্ধকার বা স্বল্প আলোতেও এই ক্যামেরা ছবি তুলতে সক্ষম । এই ক্যামেরাগুলির দৃশ্যমান্যতা 50 মিটার । এতে কর্মীরাও সুরক্ষিত থাকবে এবং উৎপাদনও ভালো হবে । এজন্য টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই এই কাজ শুরু হবে ।
তিনি বলেন, ‘‘খনির ভিতরে অন্ধকার থাকলেও একাধিক জায়গায় আলো লাগানো থাকে । তাছাড়াও এই ক্যামেরাগুলি অত্যন্ত উন্নতমানের যা ছবি সংগ্রহ করতে পারবে । একদিকে কোনও শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হলে বা কেউ অসুস্থ হন, তড়িঘড়ি খবর পাওয়া যাবে । পাশাপাশি খনি শ্রমিকরা যদি নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন যে যন্ত্রপাতি যেমন হেলমেট, জুতো গ্লাভস দেওয়া হয়, তা যদি ব্যবহার না করেন, সেক্ষেত্রেও তাঁদের গাফিলতির ছবি উঠে আসবে ।’’
তিনি আরও জানান, কয়লা উত্তোলন প্রক্রিয়া আরও আধুনিক হচ্ছে । ইসিএলের কোকিং কোল উন্নতমানের, যা দেশের ইস্পাত কারখানাগুলির চাহিদা মেটায় । উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হাইওয়াল পদ্ধতি ও মেকানাইজড মাইনসের সংখ্যাও বাড়বে । তাই খনির ভেতরে থাকবে অত্যন্ত দামি যন্ত্রপাতি । এই সব যন্ত্রপাতিতে নজরদারি চালাতেও এই ক্যামেরাগুলি কাজে আসবে ।
অন্যদিকে খনি গহ্বরে ট্র্যাকে যে সমস্ত কয়লা বহনকারী ডুলি বা ট্রলি চলাচল করে সেগুলি ডি-ট্র্যাক হওয়া বা কয়লা বহনকারী টবগুলি সঠিক অর্থে ভর্তি করা হয়েছে কি না, সেই খবরও পাঠাবে এই ক্যামেরা ।
খনি শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগে খুশি । ভূগর্ভস্থ খনিতে কাজ করা শ্রমিক ব্রিজেশ পাসওয়ান, বিপ্লব মণ্ডলরা বললেন, "অনেক সময় কয়লার চাল চাপা পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে । খনির ভিতরে গ্যাসেও অসুস্থ হতে পারে শ্রমিক । সেই খবর এবার দ্রুত উপরে চলে আসবে । ছবিতেই ফুটে উঠবে । তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে এই ক্যামেরা লাগলে ।"
ইতিমধ্যেই ইসিএলের বিভিন্ন কোলিয়ারির সাইডিং এবং দফতরে মোট 1643টি সিসিটিভি লাগানো আছে । যা দিয়ে কয়লা চুরি বা অনান্য অবাঞ্ছিত ঘটনায় সহজেই নজরদারি চালানো যায় । এবার খনি গর্ভের সুরঙ্গেও পাহারাদার হবে অত্যাধুনিক নাইট ভিশন ক্যামেরা ।