কলকাতা, 16 এপ্রিল: প্রথম দফার নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ ভোটগ্রহণের সময় ঠিক কী কী করতে পারবে, আর কী কী করতে পারবে না, তার বিস্তারিত নির্দেশিকা দিল নির্বাচন কমিশন ৷ 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রত্যেক জেলাশাসককে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন । চিঠির মূল উপপাদ্য হল নির্বাচন চলাকালীন কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশের কী করণীয় আর তাঁরা কী করবেন না ।
2021 সালে 10 এপ্রিল কোচবিহারের শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রে একটি স্কুলে ভোটগ্রহণ চলাকালীন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয় । আর তারপর রাজ্যেজুড়ে শুরু হয় বিতর্ক এবং অভিযোগ ও পালটা অভিযোগ । সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আঁটঘাট বেঁধে পথে নামছে নির্বাচন কমিশন ৷
আগামী 19 এপ্রিল প্রথম দফার নির্বাচন হবে সেই কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে । তাই গত বিধানসভার স্মৃতি যাতে আর ফিরে না আসে, তাই এবার প্রথম থেকেই সতর্ক জাতীয় নির্বাচন কমিশন । শুধু শীতলকুচিতেই নয়, সমস্ত জেলাকে একেবারে পয়েন্ট ক'রে ক'রে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে । রাজ্যের স্পেশাল জেনারেল অবজারভার এবং স্পেশাল পুলিশ অবজারভারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এই নিয়মগুলি তৈরি করা হয়েছে ।
সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর নির্বাচন চলাকালীন কী করণীয়, সেই ক্ষেত্রে 14টি পয়েন্ট করে দেওয়া হয়েছে চিঠিতে এবং তারা কী কী করবেন না, সেই ক্ষেত্রে 11টি পয়েন্ট করে দেওয়া হয়েছে ।
কী কী করণীয়:
1) ভোট কর্মী, ভোটার এবং পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে ভদ্র ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার করতে হবে । ভোট কর্মী এবং ভোটারদের বিশেষ করে বয়স্ক ভোটার, মহিলা এবং বিশেষভাবে সক্ষম ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিতে এলে তাঁদেরকে সহযোগিতা করতে হবে । জওয়ানদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে ।
2) পোলিং স্টেশন এবং ভোটকেন্দ্রে কোথাও যদি কোনও দুর্ঘটনা বা ঘটনা ঘটে, তাহলে অবিলম্বে এবং নিরপেক্ষভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে ।
3) ভোটদাতারা যাতে নিশ্চিন্তে এবং ভয়মুক্ত হয়ে ভোট দিতে পারেন সেই দিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যত্নবান হতে হবে । তাই ভোট দিতে আসা ভোটারদের মধ্যে আস্থা বোধ জাগিয়ে তুলতে হবে ।
4) নির্বাচন চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে ।
5) ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে তৎপর থাকতে হবে ।
6) কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বুথে প্রবেশ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । শুধুমাত্র প্রিসাইডিং অফিসার বা জাতীয় নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত কোনও আধিকারিক ডাকলে তবেই তিনি বুথের ভিতরে যাবেন ।
7) পোলিং স্টেশনে পৌঁছে পোলিং স্টেশনটি ভালোভাবে 'ইন্সপেক্ট' বা পরীক্ষা করতে হবে ।
8) ভোটাদের লাইন সামলাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী । বুথের থেকে কিছুটা দূরত্বে যেন লাইন করা হয় ।
9) পোলিং স্টেশনে কেউ কোনও রকম দুর্নীতিগ্রস্ত কাজ করছে কি না, সেই বিষয়ে সদা তৎপর থাকতে হবে । আর যদি তেমন কিছু নজরে আসে তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ডিইও আরও সেক্টর অফিসার এবং উপস্থিতি অবজারভারকে বিষয়টি জানাতে হবে ।
10) পোলিং কর্মীদের সঙ্গে পোলিং স্টেশনে প্রবেশ করা বা বাইরে যাওয়ার সময় এবং পোলিং স্টেশনে ইভিএম আনা বা নিয়ে যাওয়ার সময় বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে ।
11) কোথাও আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা বা কোনও অসাধু ঘটনা নজরে এলে অবিলম্বে প্রিসাইডিং অফিসার বা সেক্টর অফিসারকে জানাতে হবে ।
12) কোনও চরমপন্থী হামলা হলে নির্দেশের জন্য অপেক্ষা না করে সেই ঘটনার মোকাবেলা করে সমাধান করতে হবে ।
13) বুথে প্রবেশ করতে পারবেন - ভোটার, প্রার্থী ও তাঁর পোলিং এজেন্ট এবং আর এক পোলিং এজেন্ট, রিটার্নিং অফিসার, সেক্টর অফিসার, জাতীয় নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত আধিকারিক, ভোটারের কোলে যদি কোনও বাচ্চা থাকে সেও প্রবেশ করতে পারে, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি বা যদি কোনও দৃষ্টিহীন ভোটারের সঙ্গে কেউ থাকেন, তিনি প্রবেশ করতে পারবেন ৷ আর কমিশন অনুমোদিত সাংবাদিক যাঁদের কাছে পরিচয় পত্র থাকবে তাঁরা প্রবেশ করতে পারবেন ।
14) নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে ।
কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ কী কী করবেন না:
1) এলোপাথাড়ি গুলি চালানো থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । আত্মরক্ষা, ইভিএমের রক্ষা করা এবং ভোটারের সুরক্ষার জন্য একেবারে শেষ উপায় হিসেবে গুলি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে ।
2) কুরুচিকর শব্দ ব্যবহার করা যাবে না এবং অপ্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করা যাবে না ।
3) কারও সঙ্গে অতিরিক্ত বন্ধুত্ব করা যাবে না । ভোটকর্মী বা বহিরাগত কারও থেকে চা বা সিগারেট নেওয়া কিংবা কোনও উপকার গ্রহণ করবেন না । পোলিং স্টেশনের ভেতরে ধূমপান করবেন না ।
4) ভোটকর্মী, ভোটের জিনিসপত্র এবং কাগজপত্র ও ইভিএম সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে দ্বিধাবোধ করবেন না ।
5) যে জায়গায় ডিউটি দেওয়া হয়েছে সেই জায়গা ছাড়া কোথাও যাবেন না অর্থাৎ (পোলিং স্টেশন/প্রেমিসেস) ।
6) অপ্রয়োজনে কথা বলা যাবে না এবং সমস্ত আদেশ/নির্দেশের প্রতি নজর রাখতে হবে ।
7) নির্দিষ্ট কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গে বেশি সখ্যতা দেখানো যাবে না ।
8) কারও থেকে কোনও উপকার নেবেন না । কোনও ভোটারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা যাবে না ।
9) ভোট প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও ভূমিকা থাকবে না ।
10) কোনও নির্বাচনী সভায় অংশগ্রহণ করা যাবে না বা কোনও রাজনৈতিক সভা আয়োজন করা যাবে না ।
11) কোনও নির্দিষ্ট প্রার্থী বা দলকে ভোট দিতে দেওয়ার জন্য ভোটারদের অনুরোধ করা যাবে না ।
আরও পড়ুন: