দুর্গাপুর, 29 এপ্রিল: তিন হাজার ছাত্রকে ডেকে নিয়ে এসে তাঁকে মারধর করা হবে ৷ এমনই ভয় দেখিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নিয়েছেন ছাত্ররা ৷ ইটিভি ভারতের কাছে বিস্ফোরক দাবি করলেন এনআইটি দুর্গাপুরের সদ্য পদত্যাগ করা অধিকর্তা অরবিন্দ চৌবে । রবিরার দুর্গাপুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (এনআইটি) ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় ৷
মৃত ছাত্রের নাম অর্পণ ঘোষ (20) ৷ তিনি এনআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন ৷ হুগলির ব্যান্ডেলের বাসিন্দা অর্পণ ৷ ছাত্রের মৃত্যুতে এনআইটি কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তোলেন বাকি পড়ুয়ারা ৷ প্রতিষ্ঠানের মেডিক্যাল ইউনিটের অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ ওঠে । এর জন্য দায়ী করা হয় অধিকর্তাকেই ৷
ছাত্র মৃত্যুতে রবিবার বিকেল থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে দুর্গাপুর এনআইটি । দফায় দফায় ছাত্র বিক্ষোভের জেরে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় এনআইটির অধিকর্তাকে । এমনকী তাঁকে এনআইটির গেটের বাইরে কার্যত টেনে হিঁচড়ে বের করে আনেন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা । অভিযোগ, অরবিন্দ চৌবেকে পদত্যাগ করার জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হয় পড়ুয়াদের তরফে। কখনও অডিটরিয়াম আবার কখনও এনআইটি'র মেন গেটের কাছে নিয়ে এসে অধিকর্তাকে পদত্যাগ করার জন্য জোর করা হয় বলেও অভিযোগ । অবশেষে রবিবার রাতেই সাদা কাগজে 'ছাত্রদের লেখা' পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে দেন অধিকর্তা ।
অরবিন্দ চৌবে ইটিভি ভারতকে বলেন, "ছাত্ররা নিজেরাই পদত্যাগপত্র লিখে নিয়ে এসেছিল ৷ তারা আমাকে তিন হাজার ছাত্রকে ডেকে এনে মারধর করাবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় । এরপর আমাকে দিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় ৷ এমনকী চেম্বারের দরজা ভেঙে ঢুকে অধিকর্তা এবং এনআইটির সিল বের করে ওই পদত্যাগপত্র কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকে মেইল করে পাঠিয়ে দেয় ছাত্ররা । শিক্ষামন্ত্রক এবার কী করবে সেটা তাদের ব্যাপার ।"
তাঁর দাবি, কলেজ ক্যাম্পাসে মাদক সেবন থেকে শুরু করে পডুয়াদের রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার বিরোধিতা করেই তিনি ছাত্রদের রোষের মুখে পড়েছেন । দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ৷ তার অধিকর্তা সঙ্গে এই ঘটনা নিয়ে অরবিন্দ চৌবে জানান, "ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক । কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যেভাবে ষড়যন্ত্র হল সেটাও দৃষ্টান্ত । আমাকে ছাত্ররা বিকেলে ক্যাম্পাসে যেতে বলল । আমি প্রিয় ছাত্রদের কথা শুনে গেলাম । কিন্তু তারপরেই প্রচুর ছাত্র ছাত্রী আমাকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে লাগল। এনআইটি দুর্গাপুরের র্যাঙ্কিং অনেকটাই নীচে। আমি অনেক কিছু করতে চেয়েছিলাম । তার ফল হয়তো আগামী বছর মিলবে ।"
তিনি আরও বলেন, "ষড়যন্ত্র এই কারণেই বলছি, আমি আসার পর পর দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে ডিরেক্টর গো-ব্যাক এমন পোস্টার দেওয়া হয়েছিল। আমি সমস্ত ফ্যাকাল্টিদের একভাবেই দেখতাম । আমি জানি না কে বা কারা ছাত্র-ছাত্রীদের গতকাল আমার বিরুদ্ধাচারণ করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করেছেন।"
সূত্রের তরফে দাবি করা হচ্ছিল, কেন্দ্রীয় ক্রেতা ও উপভোক্তা দফতরের মন্ত্রী অশ্বিনী চৌবের ভাই অরবিন্দ চৌবে । এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ আছে ? এ প্রশ্নের উত্তরে অরবিন্দ চৌবে বলেন, "উনি (অশ্বিনী চৌবে) ভাগলপুরের বাসিন্দা আর আমার বাড়ি বক্সারে। পদবীর মিল আছে বলে আমরা ভাই হয়ে গেলাম! এটা ঠিক যে ওঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো ।"
আরও পড়ুন: