ঝাড়গ্রাম, 7 নভেম্বর: হোটেলের ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধার চিকিৎসকের দেহ ৷ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঝাড়গ্রাম শহরের ঘোড়াধরা এলাকার একটি হোটেলের পাঁচতলার ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় ডাঃ দীপ্র ভট্টাচার্যের (30) দেহ ৷ তাঁর বাড়ি কলকাতায় ৷ তিনি ঝাড়গ্রাম সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন ৷
খবর পেয়ে ফ্ল্যাটে পৌঁছন ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ মামদুল্লাহ হাসান এবং ঝাড়গ্রাম থানার আইসি ৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন,"তাঁর (মৃত চিকিৎসকের) বাড়ি কলকাতায় ৷ তিনি প্রায় এক বছর ধরে এখানে পেইংগেস্ট হিসেবে থাকছিলেন ৷ আজ সকালেই কলকাতা থেকে এখানে এসেছিলেন ৷ তাঁর স্ত্রী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন ৷ কিন্তু তিনি বোধহয় ফোন ধরছিলেন না ৷ তাঁর সহকর্মীরাও তাঁকে ফোন করছিলেন ৷ হাসপাতালে তাঁর একটি অপারেশন করার কথা ছিল ৷"
পুলিশ আধিকারিক আরও বলেন, "তিনি অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসক ৷ তাঁর স্ত্রী আতঙ্কিত হয়ে এই হোটেলের ম্যানেজারকে এবং শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় নামের তাঁর এক বান্ধবীকে ফোন করেছিলেন ৷ শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় হোটেলে পৌঁছে ম্যানেজারকে বিষয়টি জানান এবং পাঁচতলায় গিয়ে দেখেন দরজা বন্ধ রয়েছে ৷ তাঁর সঙ্গে আরও তিনজন চিকিৎসক ছিলেন ৷ বন্ধ থাকায় দরজা ভেঙে দেখা যায় তিনি অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন ৷ সঙ্গে থাকা চিকিৎসকরা তাঁর পালস দেখেন ৷ পালস না পাওয়ার পর থানায় বিষয়টি জানান তাঁরা ৷ তারপরে আমরা এখানে পৌঁছে আমাদের যা নিয়ম রয়েছে তা পূরণ করার পর আমরা হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে নিয়ে যাই ৷"
চিকিৎসককে কী অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল এবং সেখান থেকে কি কি পাওয়া গিয়েছিল ? সেই প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, "চিকিৎসক বিছানার উপর শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের পাশে সিরিঞ্জ পাওয়া গিয়েছে ৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর স্ত্রীকে আনুমানিক 12টার পর হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করেছিলেন ৷ সেখানে তিনি নিজের ব্যক্তিগত, মানসিক, পেশাগত এবং পারিবারিক বিষয় সম্পর্কে অনেক কিছুই লিখেছিলেন ৷ ওই হোয়াটসঅ্যাপটি পেয়ে চিকিৎসকের স্ত্রী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ৷ তিনি মেসেজগুলি তাঁর বান্ধবীকে পাঠান ৷ এই তথ্যটা আমরা তাঁর বান্ধবীর মোবাইল থেকে পেয়েছি ৷ আমরা ওটা ধরেই তদন্ত করছি ৷"
এদিকে কলকাতার একাধিক ডাক্তার দাবি করেছেন, চিকিৎসক দীপ্র ভট্টাচার্য এই ঘটনা ঘটানোর আগে থ্রেট কালচার নিয়ে একটি টেক্সট করেছিলেন ৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, "তাঁর স্ত্রীকে যে টেক্সটগুলি পাঠিয়েছিলেন, তাতে তাঁর ব্যক্তিগত, মানসিক এবং পেশাগত বিষয়ের পাশাপাশি পারিবারিক বিষয়কে নিয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটাই পেয়েছি । বাদবাকি বিষয়গুলি আমরা তদন্তের মধ্যে খতিয়ে দেখব ৷" অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, "ওখান থেকে চিকিৎসকের কলম, মোবাইল, চশমা এবং দু'টি সিরিঞ্জ উদ্ধার করা হয়েছে ৷ আগামিকাল ফরেন্সিক টিম পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন ৷"