শান্তিপুর, 1 ফেব্রুয়ারি: "তৃণমূলের এক-দুইজন যদি চোর হয় তাদের তাড়িয়ে দিন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন! কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসকে চোর বলবেন না।" বৃহস্পতিবার সরকারি অনুষ্ঠানে এসে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, "ভয় দেখিয়ে সবাইকে যেমন জেলে ভরছেন, আমাকেও যদি জেলে ভরেন তাহলে আমি জেল ফুটো হয়ে বেরিয়ে আসব।"
উল্লেখ্য, নদিয়ার শান্তিপুরে স্টেডিয়াম মাঠে এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠক এবং সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান ছিল। বুধবারই কৃষ্ণনগরে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন কৃষ্ণনগরে এক কিলোমিটার রোড-শো করে তিনি শান্তিপুরে যান। প্রায় 40 মিনিট এদিন তিনি বক্তব্য রাখেন। প্রথমে নদিয়া জেলায় যে সমস্ত উন্নয়ন হয়েছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "নদিয়া জেলায় 753 কোটি টাকার প্রজেক্ট আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে শুরু করতে চলেছি। পথশ্রী প্রকল্পে 298টি রাস্তা এই জেলায় শুরু হয়েছে। অন্যদিকে হরিণঘাটা এবং চাকদা পৌরসভায় জল সরবরাহ প্রকল্পে কোটি টাকা খরচা করা হচ্ছে।" তিনি আরও বলেন, "শান্তিপুরের শাড়ির কথা মাথায় রেখে জেলাশাসককে আবেদন করা হচ্ছে যাতে কৃষ্ণনগর এবং রাণাঘাটে একটি করে বিগ বাজার তৈরি করা হয়। যেখানে নিজের হাতে যারা কাপড় তৈরি করেন তারা বিক্রির সুযোগ পান।"
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে নদিয়া জেলায় প্রায় দুই লক্ষ 32 হাজার মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে যাবে। যারা বর্তমানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং বিধবা ভাতা পান না, তারা এই পরিষেবা পাবেন। পাশাপাশি তিনি জানান, মায়াপুর ইসকনকে 700 একর জমি দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। সেখানেও প্রচুর কর্মসংস্থান হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি আগেই নবদ্বীপকে হেরিটেজ শহর হিসেবে ঘোষণা করাক কথাও এদিন তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
এরপরই বিজেপির পাশাপাশি সিপিএম-কংগ্রেসকে একযোগে আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "দিল্লি আমরা দখল করব এবং এ রাজ্যে আমরা একলা চলার শপথ নিয়েছি।" বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ভারতবর্ষের সবাইকে যদি ভয় দেখিয়ে জেলে পুরে দেয়, আমি জেল ফুটো করে বেরিয়ে আসব। মনে রাখবেন নির্বাচনে জেতার জন্য সবাইকে জেলে পুরছেন ! আমাদের সবাই চোর আর আপনারা কি সাধু ? কোটি কোটি টাকা খরচা করে, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে, রেশন বন্ধ করে দিয়ে, 100 দিনের কাজের টাকা না-দিয়ে, বাংলায় ঘর করতে না-দিয়ে, চোরেদের জমিদার জোরদার। চোরের মায়ের বড় গলা, শূন্য কলসি বড্ড বেশি বাজে। আজকে ক্ষমতায় আছে তাই সঙ্গে এজেন্সি নিয়ে ঘুরছে। কাল ক্ষমতায় থাকবে না সব উধাও হয়ে যাবে ৷ সব বিদায় নেবে এটা মাথায় রাখবেন।"
অন্যদিকে, নিজের দলের নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, "মনে রাখবেন এত বড় সরকার এত বড় দল সিপিএমের কিছু লোক ঢুকেছিল আমাদের সঙ্গে কংগ্রেসেরও লোক ঢুকেছিল। দুই-একজন যদি চোর হয় তাদের তাড়িয়ে দিন ৷ আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। কিন্তু তৃণমূলকে চোর বলবেন না ৷ মা-মাটি-মানুষের সরকারকে চোর বলবেন না। সব থেকে বড় চোরেরা এখন মুখ লুকিয়ে বসে আছে। কোটি কোটি টাকা খরচা করে শুধু প্রণাম করলে হয়ে গেল ? বিজেপি সরকার বলছে একটাই আইন থাকবে। কিন্তু সকল সম্প্রদায়ের রীতিনীতি আলাদা আলাদা রয়েছে।" একইসঙ্গে, এদিন সিএএ প্রসঙ্গেও বিজেপিকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় যে গরু চুরির অভিযোগ করছে তা নিয়ে বিএসএফকে কড়া আক্রমণও করেন তিনি।
আরও পড়ুন: