কলকাতা, 1 নভেম্বর: শ্যামাপুজোয় শ্যামাসঙ্গীতের মতোই মিছিল করে আলোর উৎসবে সামিল হয় শ্যামাপোকারা ৷ শ্যামাসঙ্গীতে মনের আরাম হলেও শ্যামাপোকায় হয় বিরক্তির উদ্রেক ৷ তা সত্ত্বেও বিশেষত এই সময়টার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে এই ক্ষুদ্র কীট ৷ তবে এবছর কালীপুজো পেরিয়ে গেলেও শ্যামাপোকা যেন এক্কেবারে ভ্যানিশ ৷ বাড়িতে, রাস্তায় আলোর মালায় গিজগিজে পোকারা সব উধাও ৷ কী এমন ঘটল ? এর একাধিক কারণ ইটিভি ভারতকে জানালেন বিশিষ্ট পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ড. দেবাশিস বিশ্বাস ।
দুর্গাপুজোর পর থেকেই টুকটাক দেখা মিলত শ্যামাপোকার । কালীপুজোর সময় বাড়ি থেকে রাস্তাঘাট - এমন কোনও আলো থাকত না, যার দখল নিত না শ্যামাপোকার ঝাঁক । ঘরের টিউব লাইট এমনকি নাইট ল্যাম্প ঘিরেও উড়ে বেড়াত এই পোকার দল । ঘরে ঘরে ও দোকান-বাজারে এই পোকার হাত থেকে রেহাই পেতে গাছের ডাল লাগিয়ে রাখতে হত । রাস্তার আলোগুলোও প্রায় মুখ ঢাকত শ্যামাপোকার দৌরাত্ম্যে ৷ তবে এবছর কোথায় সেই পোকা ? কালীপুজো কেটে যাওয়ার পর তাদের দেখা নেই । এটা কি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আঁচ !
এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে ইটিভি ভারত কথা বলেছে পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ড. দেবাশিস বিশ্বাসের সঙ্গে ৷ তিনি বলেন, "শ্যামাপোকা বা কালীপোকা রাজ্যে সব থেকে বেশি । কারণ এখানে কালীপুজো হয় । এই পোকা তিন থেকে পাঁচ মিলিমিটার লম্বা । সবুজ রঙের ডানা আছে ।" তিনি জানান, এই পোকার প্রজনন হয় অগস্ট মাসে । বৃদ্ধি চূড়ান্ত হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে । নভেম্বর মাসে এর আয়ু শেষ হয়ে যায় ।
ড. দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, "আমরা ছোটবেলায় দেখেছি খাস কলকাতায় আলো জ্বালালে শ্যামাপোকা ঘিরে থাকত । এবার সেটা দেখা যাচ্ছে না কলকাতায় । এর পিছনে তিনটি কারণ আছে।"
এই কারণগুলি ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, "একটি কারণ হল যেখানে সবুজায়ন বেশি, সবজি গাছ বা ধান চাষ হয় সেই চত্বরে এই পোকার বাড়-বাড়ন্ত হয় । তবে কলকাতা লাগোয়া এলাকাগুলিতে যেসব জায়গায় ধান চাষ হত সেটা আর হচ্ছে না । শহর বাড়ছে, সবুজ কমছে । দ্বিতীয় কারণ হল, যথেচ্ছ বাজি ফাটানো । বাজি থেকে নির্গত সালফার গ্যাসের ধোঁয়া এই পোকার প্রজননে বাধা দেয় । মৃত্যু হয় শ্যামাপোকার । আর তৃতীয় কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন । বাতাসে যখন বেশি জলীয় বাষ্প থাকে, অর্থাৎ বর্ষায় এরা জন্মায় । তবে এখন অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে ৷ গ্রীষ্মের মাসে দেখা যাচ্ছে কলকাতায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত । ফলে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনে ও পতঙ্গ কূলেও ।"
শ্যামাপোকা উধাও হয়ে যাওয়ার আরেকটি অতিরিক্ত কারণ হিসেবে ড. বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ধানক্ষেতে প্রচুর কীটনাশক ব্যবহারের জেরে এই পোকার প্রজনন আর হয় না । সবমিলিয়ে তাঁর মত, শ্যামাপোকা দেখা না যাওয়ার মতো ঘটনা শহরের পরিবেশে বিপর্যয় ঘটারই ইঙ্গিত দিচ্ছে ।