ETV Bharat / state

চা-শ্রমিকদের অসন্তোষ চরমে, পরের বৈঠক ভেস্তে গেলে আগুন জ্বলতে পারে পাহাড়ে - TEA WORKERS

চা-শ্রমিকদের সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা ৷ পরের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব ৷

Tea Workers
দ্রুত চা-শ্রমিকদের সমস্যা মেটানোর দাবি পাহাড়বাসীর (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 7, 2024, 6:58 PM IST

শিলিগুড়ি, 7 নভেম্বর: চা-শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বারবার ভেস্তে যাচ্ছে বৈঠক । 16 নভেম্বর ফের বৈঠক রয়েছে ৷ সেটিও ভেস্তে গেলে আবারও আগুন জ্বলতে পারে পাহাড়ে । চা-বাগানের শ্রমিকদের অসন্তোষ নিতে পারে ভয়ঙ্কর রূপ । এখন এমনটাই আশঙ্কা করছে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব ।

এমনটা আশঙ্কা করছেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তাও। তিনি দাবি করছেন, যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে চা-বাগানের শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মিটিয়ে নেওয়া হোক ৷ পাহাড়ে আগুন জ্বলার আগে ওই সমস্যা সমাধানে হস্তক্ষেপ করুন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

Tea Workers
চা-শ্রমিকদের বৈঠক (নিজস্ব ছবি)

পাহাড়ে 87টি চা বাগানের মধ্যে 11টি চা বাগান বন্ধ রয়েছে । যার মধ্যে রয়েছে, 2008 সাল থেকে বন্ধ পানিঘাটা, 2015 সাল থেকে ধোতরিয়া, 2021 সাল থেকে রঙ্গমুক ক্যাডারস, মুন্ডাকোঠি, অম্বোটিয়া, চুংথুং, নাগরি চা-বাগান । আর চলতি 2024 সালে নতুন করে বন্ধ হয়েছে পন্দম, পেশক, সিংথাম ও লঙভিউ চা বাগান ।

সবমিলিয়ে প্রায় 18 হাজার চা-বাগানের শ্রমিক অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ । তবে সব চা-বাগান মেলালে পাহাড়ে চা-শ্রমিকের সংখ্যাই প্রায় 34 থেকে 38 হাজার । বোনাস-সহ প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র‍্যাচুইটি, বেতন বৃদ্ধি, পেনশন-সহ বকেয়ার অঙ্কটা প্রায় 50 কোটি । ফলে লড়াইটা এখন চা-শ্রমিকদের কাছে অধিকারের পাশাপাশি অস্তিত্বের হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

Tea Workers
বোনাসের দাবি চা-বাগানের শ্রমিকদের (নিজস্ব ছবি)

ইতিমধ্যে মালিকপক্ষ কোনও কোনও চা-বাগানে 16 শতাংশ বোনাসের কিছুটা অংশ সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে । তবে 20 শতাংশের নীচে বোনাস নিতে নারাজ শ্রমিকরা । টাকার অঙ্কে গড়ে ওই চার শতাংশে ব্যবধান মাথাপিছু শ্রমিকে প্রায় ন্যূনতম 2000 থেকে 2500 টাকা । নিজেদের দাবিকে সামনে রেখেই অন্ধকারে পার হয়েছে তাদের দুর্গাপুজো, দশেরা, কালিপুজো, দীপাবলি, ভাইফোঁটা ।

সম্প্রতি চা-বাগানের শ্রমিকরা বোনাসের দাবিতে পাহাড়ে কর্মবিরতি ও ধর্মঘট পালন করেছেন । তারপরেই 6 নভেম্বর কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয় । কিন্তু তা ফের ভেস্তে গিয়েছে । যেখানে তরাই ডুয়ার্সের চা পাতা প্রতি কেজি 300 টাকা দরে বিক্রি হয়, সেখানে পাহাড়ের চা পাতা প্রতি কেজি ন্যূনতম হাজার থেকে 50 হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়ে থাকে । সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মালিকপক্ষ যে ক্ষতির কারণ দেখিয়ে আসছে তা মানতে নারাজ শ্রমিকরা ।

Tea Workers
বৈঠক ভেস্তে গেলে আগুন জ্বলতে পারে পাহাড়ে (নিজস্ব ছবি)

দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, "আমি খুব উদ্বিগ্ন চা বাগানের শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে । শ্রমিকদের রাজ্য সরকারের উপর যে আর কোনও আস্থা নেই সেটা পরিষ্কার । আর এভাবে বৈঠকে মালিকপক্ষের অনুপস্থিতি মন্ত্রী মলয় ঘটকের জন্যও অপমানজনক । দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না করলে খুব দ্রুত পাহাড়বাসীর ক্ষোভ পাহাড়ে আছড়ে পড়বে । আর তার জন্য দায়ী থাকবে রাজ্য সরকার ও মালিকপক্ষ । তাই আমি মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন করব, যাতে তিনি নিজে এই সমস্যা সমাধানে হস্তক্ষেপ করেন ।"

Tea Workers
চরমে চা-শ্রমিকদের অসন্তোষ (নিজস্ব ছবি)

অখিল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মুখপাত্র এসপি শর্মার বক্তব্য, "মালিকপক্ষ কেন নমনীয় ভূমিকা পালন করছে না সেটাই স্পষ্ট নয় । বৈঠকে তারা কেন অনুপস্থিত থাকবে । ক্ষতি হলে সেটা পরিষ্কার করুক । সেটাও তারা করতে পারছে না । এই চার শতাংশ বোনাস কী করবে সেটাও পরিষ্কার করছে না । ফলে বারবার এই ভূমিকায় শ্রমিক অসন্তোষ স্বাভাবিক । রাজ্য সরকারের উচিত মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার ।"

হামরো পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিপু থাপা বলেন, "শিলিগুড়ির বৈঠকই হবে শেষ বৈঠক । চা বাগানের শ্রমিকদের যদি দাবি পূরণ না হয় তবে পাহাড়ে তীব্র আন্দোলন হবে ।" সিটুর সম্পাদক সমন পাঠকের কথায়, "এরপরের বৈঠক ভেস্তে গেলে পাহাড়ে যে আন্দোলন হবে তার জন্য দায়ী থাকবে একমাত্র মালিকপক্ষ ও রাজ্য সরকার । আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটে যাক ।"

শিলিগুড়ি, 7 নভেম্বর: চা-শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বারবার ভেস্তে যাচ্ছে বৈঠক । 16 নভেম্বর ফের বৈঠক রয়েছে ৷ সেটিও ভেস্তে গেলে আবারও আগুন জ্বলতে পারে পাহাড়ে । চা-বাগানের শ্রমিকদের অসন্তোষ নিতে পারে ভয়ঙ্কর রূপ । এখন এমনটাই আশঙ্কা করছে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব ।

এমনটা আশঙ্কা করছেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তাও। তিনি দাবি করছেন, যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে চা-বাগানের শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মিটিয়ে নেওয়া হোক ৷ পাহাড়ে আগুন জ্বলার আগে ওই সমস্যা সমাধানে হস্তক্ষেপ করুন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

Tea Workers
চা-শ্রমিকদের বৈঠক (নিজস্ব ছবি)

পাহাড়ে 87টি চা বাগানের মধ্যে 11টি চা বাগান বন্ধ রয়েছে । যার মধ্যে রয়েছে, 2008 সাল থেকে বন্ধ পানিঘাটা, 2015 সাল থেকে ধোতরিয়া, 2021 সাল থেকে রঙ্গমুক ক্যাডারস, মুন্ডাকোঠি, অম্বোটিয়া, চুংথুং, নাগরি চা-বাগান । আর চলতি 2024 সালে নতুন করে বন্ধ হয়েছে পন্দম, পেশক, সিংথাম ও লঙভিউ চা বাগান ।

সবমিলিয়ে প্রায় 18 হাজার চা-বাগানের শ্রমিক অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ । তবে সব চা-বাগান মেলালে পাহাড়ে চা-শ্রমিকের সংখ্যাই প্রায় 34 থেকে 38 হাজার । বোনাস-সহ প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র‍্যাচুইটি, বেতন বৃদ্ধি, পেনশন-সহ বকেয়ার অঙ্কটা প্রায় 50 কোটি । ফলে লড়াইটা এখন চা-শ্রমিকদের কাছে অধিকারের পাশাপাশি অস্তিত্বের হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

Tea Workers
বোনাসের দাবি চা-বাগানের শ্রমিকদের (নিজস্ব ছবি)

ইতিমধ্যে মালিকপক্ষ কোনও কোনও চা-বাগানে 16 শতাংশ বোনাসের কিছুটা অংশ সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে । তবে 20 শতাংশের নীচে বোনাস নিতে নারাজ শ্রমিকরা । টাকার অঙ্কে গড়ে ওই চার শতাংশে ব্যবধান মাথাপিছু শ্রমিকে প্রায় ন্যূনতম 2000 থেকে 2500 টাকা । নিজেদের দাবিকে সামনে রেখেই অন্ধকারে পার হয়েছে তাদের দুর্গাপুজো, দশেরা, কালিপুজো, দীপাবলি, ভাইফোঁটা ।

সম্প্রতি চা-বাগানের শ্রমিকরা বোনাসের দাবিতে পাহাড়ে কর্মবিরতি ও ধর্মঘট পালন করেছেন । তারপরেই 6 নভেম্বর কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয় । কিন্তু তা ফের ভেস্তে গিয়েছে । যেখানে তরাই ডুয়ার্সের চা পাতা প্রতি কেজি 300 টাকা দরে বিক্রি হয়, সেখানে পাহাড়ের চা পাতা প্রতি কেজি ন্যূনতম হাজার থেকে 50 হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়ে থাকে । সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মালিকপক্ষ যে ক্ষতির কারণ দেখিয়ে আসছে তা মানতে নারাজ শ্রমিকরা ।

Tea Workers
বৈঠক ভেস্তে গেলে আগুন জ্বলতে পারে পাহাড়ে (নিজস্ব ছবি)

দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, "আমি খুব উদ্বিগ্ন চা বাগানের শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে । শ্রমিকদের রাজ্য সরকারের উপর যে আর কোনও আস্থা নেই সেটা পরিষ্কার । আর এভাবে বৈঠকে মালিকপক্ষের অনুপস্থিতি মন্ত্রী মলয় ঘটকের জন্যও অপমানজনক । দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না করলে খুব দ্রুত পাহাড়বাসীর ক্ষোভ পাহাড়ে আছড়ে পড়বে । আর তার জন্য দায়ী থাকবে রাজ্য সরকার ও মালিকপক্ষ । তাই আমি মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন করব, যাতে তিনি নিজে এই সমস্যা সমাধানে হস্তক্ষেপ করেন ।"

Tea Workers
চরমে চা-শ্রমিকদের অসন্তোষ (নিজস্ব ছবি)

অখিল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মুখপাত্র এসপি শর্মার বক্তব্য, "মালিকপক্ষ কেন নমনীয় ভূমিকা পালন করছে না সেটাই স্পষ্ট নয় । বৈঠকে তারা কেন অনুপস্থিত থাকবে । ক্ষতি হলে সেটা পরিষ্কার করুক । সেটাও তারা করতে পারছে না । এই চার শতাংশ বোনাস কী করবে সেটাও পরিষ্কার করছে না । ফলে বারবার এই ভূমিকায় শ্রমিক অসন্তোষ স্বাভাবিক । রাজ্য সরকারের উচিত মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার ।"

হামরো পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিপু থাপা বলেন, "শিলিগুড়ির বৈঠকই হবে শেষ বৈঠক । চা বাগানের শ্রমিকদের যদি দাবি পূরণ না হয় তবে পাহাড়ে তীব্র আন্দোলন হবে ।" সিটুর সম্পাদক সমন পাঠকের কথায়, "এরপরের বৈঠক ভেস্তে গেলে পাহাড়ে যে আন্দোলন হবে তার জন্য দায়ী থাকবে একমাত্র মালিকপক্ষ ও রাজ্য সরকার । আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটে যাক ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.