ডায়মন্ড হারবার, 1 মে: লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই যে আসনের দিকে সারা বাংলার মানুষের চোখ ছিল, সেটি হল ডায়মন্ড হারবার । একটা সময় গোটা দেশের উন্নয়নকে ব্যাখ্যা করতে বলা হতো গুজরাত মডেলের কথা । এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় নতুন মডেল ডায়মন্ড হারবার ।
গত 10 বছরে শুধুমাত্র ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে 5200 কোটি টাকার কাজ করেছেন সেখানকার সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । এরপর আরও 580 কোটি টাকার কাজ বাকি আছে । তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের কথায়, এই মুহূর্তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন কেন্দ্র বাস্তবিক অর্থে উন্নয়নের মডেল । আর সেই কারণেই রিপোর্ট কার্ড করতে বসে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সংসদের ভেতরে ও বাইরের পারফরমেন্স থেকে উন্নয়নের তথ্য, সবকিছুই বোঝার চেষ্টা করেছে ইটিভি ভারত ।
লোকসভায় উপস্থিতি যদি তাঁর পারফরমেন্সের একটা অংশ হয়, সেক্ষেত্রে কিন্তু গত পাঁচ বছরে অভিষেকের উপস্থিতির হার ছিল খুব দুর্বল । উপস্থিতির ক্ষেত্রে জাতীয় গড়কে স্পর্শ করা দূরে থাক, রাজ্যের গড়েও পৌঁছতে পারেননি তিনি । গত পাঁচ বছরে মাত্র 15 শতাংশ সময় তিনি সংসদে উপস্থিত ছিলেন । যেখানে লোকসভায় সাংসদদের উপস্থিতির জাতীয় গড় 79 শতাংশ । রাজ্যের সাংসদদের গড় 66 শতাংশ ।
সংসদে বিভিন্ন বিতর্কে অংশগ্রহণের প্রশ্নও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণ খুব কম । পাঁচ বছরের মাত্র দু’টি বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি । এক্ষেত্রে জাতীয় গড় 46.7 । প্রশ্নোত্তর পর্বে তাঁর অংশগ্রহণের তথ্যও আশানুরূপ নয় । কারণ, সারা দেশের সংসদেরা যখন গত পাঁচ বছরে গড়ে 210টি প্রশ্ন করেছেন, তখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের সংখ্যা মাত্র 84 । কোনও প্রাইভেট বিলে তিনি অংশগ্রহণ করেননি ।
এতো গেল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদের ভেতরের পারফরমেন্স । এবার এমপি ল্যাডের খরচ পর্যালোচনা করে দেখা যাক । পাঁচ বছর সময়কালের মধ্যে দু'বছর কোভিড কালের জন্য টাকা পাননি কোনও সাংসদ । গত পাঁচ বছরে সাংসদ কোটায় 17 কোটি টাকা তিনি পেয়েছেন । সংসদের রিপোর্ট বলছে, এর মধ্যে 97 শতাংশ টাকাই তিনি এলাকা উন্নয়নের কাজে খরচ করতে পেরেছেন । তবে তার এলাকা উন্নয়ন খাতে এখনও কিছু টাকা অব্যবহৃত হয়ে গিয়েছে ৷ সেই অব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ 1 কোটি 18 লক্ষ টাকা ।
তবে ভুলে গেলে চলবে না ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে শুধু যে গত 10 বছরে সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে খরচ হয়েছে, তা নয় । রাজ্য সরকারের থেকেও প্রকল্প আদায় করে এনে নিজের কাজ করিয়ে নিতে পেরেছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । আর সেক্ষেত্রে অভিষেকের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, গত 10 বছরে তাঁর এলাকায় প্রায় 5 হাজার 200 কোটি টাকার উন্নয়নের কাজ হয়েছে । প্রত্যেক বছরই সাংসদ কেমন কাজ করলেন কী কী কাজ করলেন, তা পুস্তক আকারে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন । আর সেই কারণেই সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী ক্ষেত্র বাংলার জন্য মডেল ।
এলাকায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন নিয়ে ডায়মন্ড হারবার দু'নম্বর ব্লকের সভাপতি অরুময় গাইন জানান, ফলতার জল প্রকল্প, চড়িয়াল ব্রিজ সংস্কার, মেডিক্যাল কলেজ, মহিলা মহাবিশ্ববিদ্যালয়-সহ একাধিক কাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন ৷ তাঁর আরও দাবি, একদা ডায়মন্ড হারবার গ্রাম হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন তা শহর । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ষাটের বেশি বয়স হওয়া মহিলাদের বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার যে প্রকল্প ডায়মন্ড হারবারে চালু হয়েছে ৷ এই প্রকল্পের নাম শ্রদ্ধার্ঘ্য ৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অভিষেকের কাজে খুশি ৷ স্থানীয় জেটি সংস্কার থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সর্বত্র যেভাবে কাজ হয়েছে তাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করছেন তাঁরা ।
ভুলে গেলে চলবে না এই কেন্দ্রে এবারের লড়াই চতুর্মুখী। দীর্ঘদিন গড়িমসি করার পর সিপিএম, আইএসএফ, বিজেপি - তিন পক্ষই তাদের প্রার্থী দিয়েছে । দীর্ঘদিন আলোচনায় ছিল এই কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন নওশাদ সিদ্দিকী । শেষ পর্যন্ত তিনি এই কেন্দ্রে প্রার্থী হননি । তার বদলে প্রার্থী হয়েছেন আইএসএফের তরফে মজনু লস্কর । অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী করেছে অভিজিৎ দাস ওরফে ববিকে । সিপিএম প্রার্থী করেছে প্রতিকুর রহমানকে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত কে নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেগ দিতে পারবেন, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন ।
আরও পড়ুন: