বোলপুর, 14 জানুয়ারি: 'তুমি অধম হলে আমি উত্তম হইব না কেন ?' ওপার বাংলায় একাংশ মানুষজন শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙলেও, এপারে আগের মতোই সমাদৃত বঙ্গবন্ধু । সেজন্যই আজও কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে ডাকঘর থেকে যথারীতি মুজিবের ডাক টিকিট, পোস্ট কার্ড ও কভার সংগ্রহ করছেন সকলে ৷
এমনকি, সদ্য হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলায় ডাকঘরের স্টল থেকেও আর পাঁচটা ডাক টিকিটের পাশাপাশি মুজিবুর রহমানের ডাক টিকিট দেদার বিক্রি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ডাক বিভাগের কর্তারা ৷ অর্থাৎ, বাংলাদেশের পরিস্থিতি যা-ই হোক, এপার বাংলায় মুজিবুর রহমানের একবিন্দু মর্যাদাহানি হয়নি ৷ বিশেষজ্ঞদের কথায়, ইতিহাস বদলানো যায় না ৷
বোলপুর মহকুমার ডাকবিভাগের ইনস্পেক্টর দীপ্তিমান ইন্দ্র বলেন, "বাংলাদেশের কোনও প্রভাব এখানে নেই ৷ এখানে যথারীতি মুজিবুর রহমানের ডাক টিকিট, পোস্ট কার্ড সংগ্রহ করছেন সবাই । দেখুন, যাঁরা পড়াশোনা করেন, তাঁরা বোঝেন । তাঁরা জানেন, মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কী, বাঙালির কাছে তিনি কী । পৌষমেলাতেও আমাদের ডাকঘরের স্টল থেকে বহু মানুষ সংগ্রহ করেছেন মুজিবের ডাক টিকিট । আমাদের এখানে বিশ্বভারতী আছে, সেখানকার পড়ুয়া, গবেষকরা যথেষ্ট আগ্রহী ।"
চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নিয়ে উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ । গণ অভ্যুত্থানে 2024 সালের 5 অগস্ট দেশ ছেড়ে পালাতে হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৷ ভারতে এসে আশ্রয় নেন তিনি ৷ তারপরেই ওপার বাংলায় শুরু হয়েছিল সে দেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, মূর্তি ভাঙা । এককথায় মুজিবুর রহমানকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে ৷ তবে ওপার বাংলায় যতই মূর্তি ভাঙা হোক, এপারের বঙ্গভূমে তার এতটুকু আঁচ পড়েনি ৷ সেজন্যই তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে ডাকঘর থেকে মুজিবুর রহমানের ডাক টিকিট, পোস্ট কার্ড, কভার বিক্রি এতটুকু কমেনি ৷
পড়ুয়ারা তাঁদের গবেষণার জন্য, অথবা যাঁরা সংগ্রহ করতে আগ্রহী তাঁরাও মুজিবুর রহমানের ডাক টিকিট সংগ্রহ করে রাখছেন ৷ ডাক বিভাগের তরফে জানা গিয়েছে, সদ্য শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলায় ডাকঘরের স্টল হয়েছিল ৷ সেখানেও বিভিন্ন ডাক টিকিটের পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানের ডাক টিকিটের চাহিদা ছিল চোখে পড়ার মতো ৷ অর্থাৎ, এপার বাংলায় মুজিবুর রহমানের গুরুত্ব, মর্যাদা আজও অটুট রয়েছে ৷
বিশ্বভারতীর ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক বিদ্যুৎ পাতরের কথায়, "মুজিবুর রহমানের ডাক টিকিট, পোস্ট কার্ড সংগৃহীত হবে এটাই স্বাভাবিক । বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা, অবদান অস্বীকার করার জায়গা নেই ৷ এই নিয়ে বহু বই রয়েছে ৷ সেনাবাহিনীর কর্তাদের লেখা বইও আছে । তবে যে কোনও কারণেই হোক তাঁকে ভুলিয়ে দেওয়ার, মুছে দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু, ইতিহাসকে এভাবে মুছে দেওয়া যায় না ৷"
প্রসঙ্গত, দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । সেই রবীন্দ্র অঙ্গণে ওপার বাংলার বাঙালি মুজিবুর সমাদৃত । গুরুদেবের এই বিশ্বভারতীতে রয়েছে আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবন ৷ যা হাসিনা সরকারের তত্ত্বাবধানেই গড়ে উঠেছিল ৷ প্রতি বছর এই বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ থেকে 34 থেকে 50 জন পড়ুয়া পড়তে আসেন ৷ বর্তমানে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনে প্রায় 38 জন বাংলাদেশের পড়ুয়া আছেন ৷