ETV Bharat / state

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশিদের জন্য নো এন্ট্রি, ক্ষতি হলেও দেশের সম্মান রক্ষায় সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের

এই জেলার হোটেল ও রেস্তোরাঁর দরজা বাংলাদেশিদের জন্য আপাতত বন্ধ ৷ এজন্য ক্ষতি হলেও দেশের সম্মান রক্ষার্থেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা ৷

ETV BHARAT
হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশিদের নো এন্ট্রি (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 9 hours ago

Updated : 8 hours ago

মালদা, 4 ডিসেম্বর: আগে দেশ, দেশের সম্মান, পরে ব্যবসা ৷ তাতে যত ক্ষতি হয় হোক ৷ বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রতিবাদে এককাট্টা মালদার হোটেল ব্যবসায়ীরা ৷ তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, যতদিন না বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে যে, ততদিন ওপারের নাগরিকদের জন্য মালদার হোটেল ও রেস্তোরাঁর দরজা বন্ধ থাকবে ৷ উল্লেখ্য, সম্প্রতি এই একই পথে হেঁটে বাংলাদেশিদের একপ্রকার বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরার হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা ৷

সম্প্রতি কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ৷ এর পিছনে সেদেশে ধর্মের জিগির তোলা কিছু লোকজনই দায়ী বলে মনে করছেন ভারতীয়রা ৷ কারণ, হাসিনা সরকারের পতনের পরই সেদেশের কিছু নাগরিক নানা অছিলায় ভারতের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ৷ এনিয়ে সোশাল মিডিয়ায় দু’দেশের মানুষের মধ্যে কার্যত বাকযুদ্ধ চলছিল ৷ ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণদাসকে গ্রেফতারি আগুনে ঘি ঢালে ৷ ঢাকার রাস্তায় হাজারো মানুষের প্রতিবাদ মিছিলকে সমর্থন করেন ভারতীয়রা ৷

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশিদের নো এন্ট্রি (নিজস্ব ভিডিয়ো)

ক’দিন আগে সোশাল মিডিয়ায় দেখা যায়, ওই দেশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথের সামনে ভারতের জাতীয় পতাকা আঁকা ৷ তেরঙাকে মাড়িয়ে তার অবমাননা করছেন সেদেশের নাগরিকদের একাংশ ৷ ওই ছবি দেখার পরেই ভারতীয়দের হৃদয়ে আগুন জ্বলে ওঠে ৷ বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ৷ একাধিক চিকিৎসক জানিয়ে দেন, তাঁরা আর কোনও বাংলাদেশির চিকিৎসা করবেন না ৷ কেউ আবার বলেন, তেরঙাকে প্রণাম করে ঘরে ঢুকলে তবেই তিনি কোনও বাংলাদেশির চিকিৎসা করবেন ৷ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালও বাংলাদেশের নাগরিকদের চিকিৎসা পরিষেবা দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ৷ ত্রিপুরার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও জানিয়ে দিয়েছে যে, সেখানকার হোটেল ও রেস্তোরাঁর দরজা বাংলাদেশিদের জন্য আপাতত বন্ধ ৷

এবার সেই পথই অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালদা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ৷ যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, ততদিন মালদার কোনও হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশের কোনও নাগরিককে ঢুকতে দেওয়া হবে না ৷ নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা মঙ্গলবারই পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা ৷ বুধবার এনিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনায় বসেছেন ৷ তাঁদের সাফ কথা, আগে দেশ, পরে ব্যবসা ৷

ETV BHARAT
ক্ষতি হলেও দেশের সম্মান রক্ষায় সিদ্ধান্ত মালদার ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র)

মালদা জেলা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী জানিয়েছেন, "বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জেরেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি ৷ কারণ, এই সুযোগে সীমান্ত দিয়ে প্রচুর অনুপ্রবেশ ঘটছে ৷ তার মধ্যে কোনও জঙ্গি থাকছে কি না আমরা বুঝতে পারছি না ৷ এখন জাল পাসপোর্ট, ভিসা কিংবা পরিচয়পত্র তৈরি হয়ে যাচ্ছে ৷ তাই আমরা ঠিক করেছি, বাংলাদেশের কোনও নাগরিককে আমরা থাকার ঘর দেব না ৷ খাবারও দেওয়া হবে না ৷"

দেশের সম্মানের কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি ৷ তাঁর কথায়, "এই সিদ্ধান্তের পিছনে দেশের স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে ৷ কারণ, আমাদের কাছে দেশের সম্মান সবচেয়ে আগে ৷ এই সিদ্ধান্তে আমাদের প্রতিদিন প্রায় এক লাখ টাকা ক্ষতি হবে ৷ আজ থেকেই সেই ক্ষতি আমাদের গুনতে হচ্ছে ৷ সাধারণত প্রতিদিন গড়ে দেড়শো বাংলাদেশি মালদায় আসেন ৷ যতদিন না এই অস্থিরতা কাটছে, ততদিন এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে ৷ এর জন্য আমরা প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ৷"

ETV BHARAT
বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁর দরজা বন্ধ (নিজস্ব চিত্র)

এই নিয়ে ক্যামেরার সামনে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন নিউ হেভেন লজের মালিক সৈয়দ ইমতিয়াজুর রহমান ৷ তিনি বলেন, "সংগঠনের তরফে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক ৷ আমি এই সিদ্ধান্ত মেনে চলব ৷ আমার লজে কোনও বাংলাদেশিকে ঘর দেব না ৷ নিরাপত্তার বিষয়টি তো রয়েছেই, কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয়, যেভাবে বাংলাদেশিরা আমাদের দেশকে অপমান করেছেন, আমাদের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন, তা আমরা মেনে নিতে পারছি না ৷ এর তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি ৷ এমন ঘটনা এর আগে পৃথিবীর কোথাও ঘটেনি ৷ তাই দেশ ও সমাজের স্বার্থে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷"

হোটেল ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছে জেলার বণিকসভাও ৷ মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলছেন, "কয়েকদিন ধরেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে চলেছে ৷ সেখানকার কিছু মানুষ ঝামেলা তৈরি করে সংখ্যালঘুদের সেদেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে ৷ এর জন্য কয়েকদিন ধরে সেদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যও কমে গিয়েছে ৷ মহদিপুর স্থলবন্দর দিয়ে যেখানে প্রতিদিন 450টিরও বেশি লরি বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে যেত, গতকাল সেই সংখ্যা নেমে এসেছে 162 লরিতে ৷"

তিনি আরও বলেন, "গতকালই মালদা জেলা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁরা কোনও বাংলাদেশিকে জেলার কোনও হোটেলে ঘর দেবেন না ৷ খাবারও দেওয়া হবে না ৷ যতক্ষণ না প্রশাসনিক সহায়তা পাওয়া যাবে, ততক্ষণ তাঁরা এই সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন ৷ আমরা মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের তরফে তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি ৷ ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয় ৷ তাই কেন্দ্রীয় সরকার যত তাড়াতাড়ি এনিয়ে কোনও পদক্ষেপ করবে, তত তাড়াতাড়ি বিষয়টির মীমাংসা হবে ৷"

হোটেল মালিকরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে মালদায় তাঁদের সংগঠনে রেজিস্টার্ড হোটেল ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা 93 ৷ এর বাইরেও বেশকিছু হোটেল ও ধাবা রয়েছে ৷ সবমিলিয়ে সংখ্যাটি দেড়শোর উপর ৷ তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন সংগঠনের বাইরে থাকা হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকরাও ৷ এদিকে মহদিপুর শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার একজন বাংলাদেশিও এদেশে ঢোকেননি ৷ গতকাল মাত্র তিনজন ভারতে প্রবেশ করেছেন ৷

হোটেল মালিকরা নিজেদের সিদ্ধান্তের পিছনে নিরাপত্তার বিষয়টিকে খাড়া করলেও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নজরে রেখে অনেক আগেই উত্তরবঙ্গের আটটি জেলায় অ্যালার্ট জারি করেছে বিএসএফ ৷ তবে সীমান্তের বেশকিছু জায়গা এখনও অরক্ষিত ৷ সেসব জায়গায় বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকরা ৷

হোটেল ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বিএসএফ-এর সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক, ডিআইজি এনকে পাণ্ডে বলেন, "মালদার হোটেল ব্যবসায়ীরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা তাঁদের বিষয় ৷ এখানে বিএসএফ-এর কিছু করার নেই ৷ তবে সীমান্তে নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে ৷ যেখানে যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা নেওয়া হয়েছে ৷ গোটা ইন্দো-বাংলা সীমান্ত জুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি রয়েছে ৷"

মালদা, 4 ডিসেম্বর: আগে দেশ, দেশের সম্মান, পরে ব্যবসা ৷ তাতে যত ক্ষতি হয় হোক ৷ বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রতিবাদে এককাট্টা মালদার হোটেল ব্যবসায়ীরা ৷ তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, যতদিন না বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে যে, ততদিন ওপারের নাগরিকদের জন্য মালদার হোটেল ও রেস্তোরাঁর দরজা বন্ধ থাকবে ৷ উল্লেখ্য, সম্প্রতি এই একই পথে হেঁটে বাংলাদেশিদের একপ্রকার বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরার হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা ৷

সম্প্রতি কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ৷ এর পিছনে সেদেশে ধর্মের জিগির তোলা কিছু লোকজনই দায়ী বলে মনে করছেন ভারতীয়রা ৷ কারণ, হাসিনা সরকারের পতনের পরই সেদেশের কিছু নাগরিক নানা অছিলায় ভারতের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ৷ এনিয়ে সোশাল মিডিয়ায় দু’দেশের মানুষের মধ্যে কার্যত বাকযুদ্ধ চলছিল ৷ ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণদাসকে গ্রেফতারি আগুনে ঘি ঢালে ৷ ঢাকার রাস্তায় হাজারো মানুষের প্রতিবাদ মিছিলকে সমর্থন করেন ভারতীয়রা ৷

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশিদের নো এন্ট্রি (নিজস্ব ভিডিয়ো)

ক’দিন আগে সোশাল মিডিয়ায় দেখা যায়, ওই দেশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথের সামনে ভারতের জাতীয় পতাকা আঁকা ৷ তেরঙাকে মাড়িয়ে তার অবমাননা করছেন সেদেশের নাগরিকদের একাংশ ৷ ওই ছবি দেখার পরেই ভারতীয়দের হৃদয়ে আগুন জ্বলে ওঠে ৷ বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ৷ একাধিক চিকিৎসক জানিয়ে দেন, তাঁরা আর কোনও বাংলাদেশির চিকিৎসা করবেন না ৷ কেউ আবার বলেন, তেরঙাকে প্রণাম করে ঘরে ঢুকলে তবেই তিনি কোনও বাংলাদেশির চিকিৎসা করবেন ৷ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালও বাংলাদেশের নাগরিকদের চিকিৎসা পরিষেবা দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ৷ ত্রিপুরার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও জানিয়ে দিয়েছে যে, সেখানকার হোটেল ও রেস্তোরাঁর দরজা বাংলাদেশিদের জন্য আপাতত বন্ধ ৷

এবার সেই পথই অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালদা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ৷ যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, ততদিন মালদার কোনও হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশের কোনও নাগরিককে ঢুকতে দেওয়া হবে না ৷ নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা মঙ্গলবারই পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা ৷ বুধবার এনিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনায় বসেছেন ৷ তাঁদের সাফ কথা, আগে দেশ, পরে ব্যবসা ৷

ETV BHARAT
ক্ষতি হলেও দেশের সম্মান রক্ষায় সিদ্ধান্ত মালদার ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র)

মালদা জেলা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী জানিয়েছেন, "বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জেরেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি ৷ কারণ, এই সুযোগে সীমান্ত দিয়ে প্রচুর অনুপ্রবেশ ঘটছে ৷ তার মধ্যে কোনও জঙ্গি থাকছে কি না আমরা বুঝতে পারছি না ৷ এখন জাল পাসপোর্ট, ভিসা কিংবা পরিচয়পত্র তৈরি হয়ে যাচ্ছে ৷ তাই আমরা ঠিক করেছি, বাংলাদেশের কোনও নাগরিককে আমরা থাকার ঘর দেব না ৷ খাবারও দেওয়া হবে না ৷"

দেশের সম্মানের কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি ৷ তাঁর কথায়, "এই সিদ্ধান্তের পিছনে দেশের স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে ৷ কারণ, আমাদের কাছে দেশের সম্মান সবচেয়ে আগে ৷ এই সিদ্ধান্তে আমাদের প্রতিদিন প্রায় এক লাখ টাকা ক্ষতি হবে ৷ আজ থেকেই সেই ক্ষতি আমাদের গুনতে হচ্ছে ৷ সাধারণত প্রতিদিন গড়ে দেড়শো বাংলাদেশি মালদায় আসেন ৷ যতদিন না এই অস্থিরতা কাটছে, ততদিন এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে ৷ এর জন্য আমরা প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ৷"

ETV BHARAT
বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁর দরজা বন্ধ (নিজস্ব চিত্র)

এই নিয়ে ক্যামেরার সামনে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন নিউ হেভেন লজের মালিক সৈয়দ ইমতিয়াজুর রহমান ৷ তিনি বলেন, "সংগঠনের তরফে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক ৷ আমি এই সিদ্ধান্ত মেনে চলব ৷ আমার লজে কোনও বাংলাদেশিকে ঘর দেব না ৷ নিরাপত্তার বিষয়টি তো রয়েছেই, কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয়, যেভাবে বাংলাদেশিরা আমাদের দেশকে অপমান করেছেন, আমাদের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন, তা আমরা মেনে নিতে পারছি না ৷ এর তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি ৷ এমন ঘটনা এর আগে পৃথিবীর কোথাও ঘটেনি ৷ তাই দেশ ও সমাজের স্বার্থে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷"

হোটেল ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছে জেলার বণিকসভাও ৷ মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলছেন, "কয়েকদিন ধরেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে চলেছে ৷ সেখানকার কিছু মানুষ ঝামেলা তৈরি করে সংখ্যালঘুদের সেদেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে ৷ এর জন্য কয়েকদিন ধরে সেদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যও কমে গিয়েছে ৷ মহদিপুর স্থলবন্দর দিয়ে যেখানে প্রতিদিন 450টিরও বেশি লরি বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে যেত, গতকাল সেই সংখ্যা নেমে এসেছে 162 লরিতে ৷"

তিনি আরও বলেন, "গতকালই মালদা জেলা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁরা কোনও বাংলাদেশিকে জেলার কোনও হোটেলে ঘর দেবেন না ৷ খাবারও দেওয়া হবে না ৷ যতক্ষণ না প্রশাসনিক সহায়তা পাওয়া যাবে, ততক্ষণ তাঁরা এই সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন ৷ আমরা মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের তরফে তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি ৷ ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয় ৷ তাই কেন্দ্রীয় সরকার যত তাড়াতাড়ি এনিয়ে কোনও পদক্ষেপ করবে, তত তাড়াতাড়ি বিষয়টির মীমাংসা হবে ৷"

হোটেল মালিকরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে মালদায় তাঁদের সংগঠনে রেজিস্টার্ড হোটেল ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা 93 ৷ এর বাইরেও বেশকিছু হোটেল ও ধাবা রয়েছে ৷ সবমিলিয়ে সংখ্যাটি দেড়শোর উপর ৷ তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন সংগঠনের বাইরে থাকা হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকরাও ৷ এদিকে মহদিপুর শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার একজন বাংলাদেশিও এদেশে ঢোকেননি ৷ গতকাল মাত্র তিনজন ভারতে প্রবেশ করেছেন ৷

হোটেল মালিকরা নিজেদের সিদ্ধান্তের পিছনে নিরাপত্তার বিষয়টিকে খাড়া করলেও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নজরে রেখে অনেক আগেই উত্তরবঙ্গের আটটি জেলায় অ্যালার্ট জারি করেছে বিএসএফ ৷ তবে সীমান্তের বেশকিছু জায়গা এখনও অরক্ষিত ৷ সেসব জায়গায় বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকরা ৷

হোটেল ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বিএসএফ-এর সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক, ডিআইজি এনকে পাণ্ডে বলেন, "মালদার হোটেল ব্যবসায়ীরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা তাঁদের বিষয় ৷ এখানে বিএসএফ-এর কিছু করার নেই ৷ তবে সীমান্তে নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে ৷ যেখানে যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা নেওয়া হয়েছে ৷ গোটা ইন্দো-বাংলা সীমান্ত জুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি রয়েছে ৷"

Last Updated : 8 hours ago
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.