তারকেশ্বর, 25 জুলাই: প্রায় 350 বছর আগে তারকেশ্বরে মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাবা তারকনাথের মূল প্রসাদ সাদা বাতাসা ও নকুলদানা । সেই থেকে ভক্তরা এভাবেই পুজো দিয়ে আসছেন । কিন্তু বাতাসায় নতুনত্ব আনতে বাজারে এসেছে রঙিন বাতাসা ৷ আর এখন তারই চল বেশি । ভক্তরা পুজো দিয়ে প্রসাদ হিসাবে বাড়ি নিয়ে যান লাল, হলুদ, গেরুয়া-সহ বিভিন্ন রঙের বাতাসা । বর্তমানে শ্রাবণী মেলায় তারকেশ্বরে আসা বিপুল ভক্তদের সেই রঙিন বাতাসার জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে কারখানাগুলি । তারকেশ্বরের 10টি বাতাসা কারখানায় জোরকদমে চলছে কাজ ৷
তারকেশ্বরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, তারকেশ্বর মন্দিরের আগের নাম ছিল তারপুর । তার পুরোটাই ছিল জঙ্গলে ভরা । তারকেশ্বর ব্লকে পূর্ব রামনগরের রাজা ভারমল্ল এখানেই একটি শিবলিঙ্গ দেখতে পান । পরবর্তীকালে স্বপ্নাদেশে রাজা তারপুরেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন । 350 বছর আগে সেই থেকে মন্দিরে পুজোর প্রচলন শুরু হয় । রাজার রাজত্ব চলে যাওয়ার পর এই শিবমন্দির ভক্তদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় । ধীরে ধীরে এই শিবতীর্থের প্রচার বাড়তে থাকে ৷ শুধু এই রাজ্যই নয় উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, অসম, ঝাড়খণ্ড-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে বহু ভক্ত আসেন নানা সময়ে ।
মনে করা হয়, শ্রাবণ মাসই মহাদেবের জন্ম মাস । এই মাসেই তারকেশ্বরে শ্রাবণী মেলার আয়োজন হয়ে আসছে । ভক্তদের মনস্কামনা পূরণের জন্য বাবার মাহাত্ম্যের কথা শুনে দিনে দিনে ভক্ত সমাগম বেড়েছে । বাবা তারকনাথ সামান্য বেলপাতা, বাতাসা ও নকুলদানা দিয়ে পুজো দিলেই সন্তুষ্ট হন । তার পুজোয় বিশেষ জোগাড়ের প্রয়োজন নেই । তাই প্রতিবছর ভক্তরা পায়ে হেঁটে মন্দিরে জল ঢালতে ও পুজো দিতে হাজির হন ৷ আর বাতাসার প্ৰচলন সেই আদি অনন্তকাল ধরে চলে আসছে ।
আগে অবশ্য গুড়ের বাতাসা ছিল । বর্তমানে সাদা ও গুড়ের বাতাসা ছাড়াও রঙিন বাতাসার চল হয়েছে ৷ ভক্তরা শুকনো চিঁড়ে, বাতাসা, নকুলদানা দিয়ে পুজো দেন । ভক্তদের চাহিদা অনুযায়ী বেড়েছে রঙিন বাতাসার ব্যবহার বেড়েছে । তাই মন্দির চত্বরে বিশেষ করে শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে রঙিন বাতাসার দেদার বিক্রি হচ্ছে ৷
শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে মন্দিরের আশপাশে বহু হকার এই বাতাসা, নকুলদানা ও চিঁড়ে বিক্রি করে জীবকা নির্বাহ করেন । এমনই এক বিক্রেতা বিশ্বনাথ দাস বলেন, "প্রতি বছর শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে জলযাত্রীরা তারকেশ্বরে আসেন । সেই জন্য বাতাসা, নকুলদানা, চিঁড়ে-সহ ডালা সাজিয়ে বিক্রি করা হয় । কিছু মানুষের ভালো রোজগার হয় । তাই কারখানা থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই রঙিন বাতাসা নিয়ে যাচ্ছেন । সবারই ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে ।"
তারকেশ্বরের আরেক বিক্রেতা সঞ্জীব প্রামাণিক বলেন, "রঙিন বাতাসার চাহিদা এখন প্রচুর বেড়েছে । জলযাত্রী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ছে । সাদা বাতাসা পুজোর জন্যই যেটুকু ব্যবহার হয় । বাকি সবাই রঙিন বাতাসা পছন্দ করেন । ভিন্ন রাজ্য থেকেও আসেন ভক্তরা ।"
তারকেশ্বর মন্দির সংলগ্ন বাতাসার একাধিক কারখানা রয়েছে । মূলত কয়লা উনুনে হাঁড়ি করে চিনি ও জল ফুটিয়ে গাঢ় তরল তৈরি করা হয় । তাতে ফুড কালার মিশিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে এই রঙিন বাতাসা তৈরি হয় । একাধিক দক্ষ শ্রমিক এখন দিন রাত এক করে কাজ করছেন ।
এক কারখানার মালিক বাবু নন্দী বলেন, "সাদা বাতাসা তারকনাথ বাবার প্রসাদ হিসাবে ব্যবহার হয় ৷ কিন্তু দেখতে সুন্দর হওয়ার জন্য রঙিন বাতাসার চাহিদা রয়েছে । শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বর জুড়ে দশটি কারখানা রয়েছে, যেখানে ছয় থেকে সাতজন শ্রমিক কাজ করেন । এই শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে রঙিন বাতাসার চাহিদা বাড়ে । তাই আমরা যোগান দিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি । এ বছরে বাবার আশীর্বাদে ভালোই ব্যবসা হবে আশা করছি ৷ প্রথম থেকেই বাতাসা ব্যবসায় ভালো বাজার আছে । রোজগার হচ্ছে আমাদের । এখানে তারকেশ্বর মন্দিরের জন্য বাতাসার কুটির শিল্প তৈরি হয়েছে । যদিও প্রতিযোগিতার বাজারে লভ্যাংশ কমেছে অনেকটাই । কিন্তু চাহিদার নিরিখে ব্যবসা অনেকটাই বেড়েছে ।"
মন্দিরের আদি পুরোহিত পার্থসারথি মজুমদার বলেন, "সাদা বাতাসা ও নকুলদানা এটাই আসল প্রসাদ । এছাড়াও বাবা তারকনাথের লুচি, তরকারি, মিহিদানা, পায়েস ভোগ রয়েছে । 350 বছর ধরে বাতাসা ও নকুলদানা প্রসাদ হয়ে আসছে । বর্তমানে রঙিন বাতাসা এসেছে । তবে রঙিন বাতাসা ঠিক নয় । শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর । তবে ভক্তদের চাহিদা অনুযায়ী বাজারে বিক্রি করি ।"