কলকাতা, 22 অক্টোবর: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় দানা ৷ সোমবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ক্ষেত্রটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে কিছুটা সরে এসে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ৷ প্রাথমিকভাবে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে বা শুক্রবার খুব ভোরে ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশার পুরী, পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপারার উপর দিয়ে বয়ে যাবে ৷ এর প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গের দুই 24 পরগনা, পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা ও বাঁকুড়ায় ৷ এর ফলে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে উপকূলীয় জেলাগুলিতে ৷
মঙ্গলবার সকালেই নিম্নচাপ ক্ষেত্রটি একটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং এই মুহূর্তে ওই নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ থেকে 770 কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে ৷ আবহাওয়া দফতরের স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, নিম্নচাপের জায়গাটিতে ঘন মেঘ জমাট বেঁধেছে ৷ আগামী 24 ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ 23 অক্টোবর সকালেই এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেবে, যার নাম রাখা হয়েছে 'দানা' ৷ প্রতি মুহূর্তে নিম্নচাপ, তার গতিপথ, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে আবহাওয়া অফিস ৷ ইতিমধ্যে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে ৷
The depression over Eastcentral Bay of Bengal moved west-northwestwards with a speed of 6 kmph during past 3 hours and lay centred at 0830 hrs IST of today, the 22nd October, over the same region near latitude 15.5° N and longitude 91.0°E, about 700 km southeast of Paradip… pic.twitter.com/fBJTaZdwDZ
— India Meteorological Department (@Indiametdept) October 22, 2024
মঙ্গলবার সাড়ে 12টায় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপটি ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে 700 কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে ৷ পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ থেকে এর অবস্থান 750 কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিম এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার 730 কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব ৷ নিম্নচাপটি গত তিন ঘণ্টায় 6 কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে এগিয়েছে ৷
এর আগে সকাল 9টা 48 মিনিটে আবহাওয়া অফিস তাদের এক্স হ্যান্ডেলে জানায়, নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ থেকে 770 কিমি দূরে অবস্থান করছে ৷ ওড়িশার পারদ্বীপ থেকে নিম্নচাপের দূরত্ব 730 কিমি এবং বাংলাদেশের খেপুপারার 740 কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে 'দানা' তৈরির প্রক্রিয়া চলছে ৷
ঘূর্ণিঝড় তৈরির আগে ইতিমধ্যে উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগরের একাংশ ৷ মৎস্যজীবীদের সমুদ্র যেতে নিষেধ করা হয়েছে ৷ যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের দ্রুত ফিরে আসার কথা জানিয়েছে হাওয়া অফিস ৷ এমনকী ওড়িশার সমুদ্র সৈকত পুরীর সব হোটেল খালি করে পর্যটকদের বাড়ি ফেরার কথা জানিয়েছে ওড়িশা সরকার ৷ কোনও হোটেল যেন নতুন করে কোনও পর্যটকদের থাকতে না দেয়, সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ৷ পর্যটকদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে ৷
Depression over East-Central Bay of Bengal
— India Meteorological Department (@Indiametdept) October 22, 2024
Visible animation between 07.45 ist to 10.15 ist shows associated convective clouds over east bay andaman islands north andaman sea & south myanmar. https://t.co/oPqcGOlPmk pic.twitter.com/JcbzIz1rnE
23 অক্টোবর সকালে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তার গতিপথ আরও স্পষ্ট হবে ৷ তার আগে আবহাওয়া অফিসের প্রাথমিক পর্যায়ের পূর্বাভাস, এই ঘূর্ণিঝড় দানা উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে ৷ 24 তারিখ রাতে বা 25 তারিখ ভোরে ওড়িশার পুরী, পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ এবং তারপর বাংলাদেশের খেপুপাড়ার উপর দিয়ে বয়ে যাবে এবং আছড়ে পড়বে ৷ সেসময় তার গতিবেগ থাকবে 100 থেকে 120 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ৷
ঘূর্ণিঝড় 'দানা'র জেরে ইতিমধ্যেই একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ওড়িশা সরকারের তরফে ৷ ঘূর্ণিঝড়ের জন্য আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সে রাজ্যের 15টি জেলায় বাড়তি তৎপরতা শুরু হয়েছে ৷ আগামী 23 অক্টোবর থেকে 25 অক্টোবর পর্যন্ত সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেস জারি করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে ৷ ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য ঝড় মোকাবিলায় বিশেষ ত্রাণ কমিশনারের কার্যালয়ে 24 ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম সম্ভাব্য ঝড়ের গতিপথ এবং আবহাওয়া দফতরের যাবতীয় তথ্যের দিকে কড়া নজর রাখছে। উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজনের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে ব্যবস্থা করা, অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, উদ্ধার ও ত্রাণ ইত্যাদির প্রস্তুতি চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তালিকায় থাকায় আরও সংখ্যক দমকল ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হবে।
এই রকমই পরিস্থিতি হয়েছিল 2020 সালের মে মাসের অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময়েও ৷ ওড়িশা উপকূল, পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল আম্ফান ৷ প্রবল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল দুই রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলে ৷