কলকাতা, 4 ফেব্রুয়ারি: তৃতীয় ইভেন্টে রংটা বদলেছে ঠিকই, কিন্তু পদকের হ্যাটট্রিক হাতছাড়া হয়নি। জোড়া সোনা এবং রুপো মিলিয়ে চলতি জাতীয় গেমসে ব্যক্তিগতভাবে পদকের হ্যাটট্রিক সেরে ফেলেছেন বাংলার সাঁতারু সৌবৃতি মণ্ডল। হাওড়া নিবাসী এই মহিলা সাঁতারু গত আট বছর ধরে অবশ্য নয়াদিল্লির তালকাটোরা সুইমিং পুলে অনুশীলন করে নিজেকে পরিশীলিত করেছেন ৷ জোড়া সোনা-সহ জাতীয় গেমসে পদকের হ্যাটট্রিকে 'টক অব দ্য টাউন' তেইশের বঙ্গতনয়া ৷ বাংলার ক্রীড়া প্রশাসকরা সৌবৃতির সাফল্য নিয়ে মাতামাতি করছেন বটে কিন্তু তাদের প্রতি চরম অসন্তুষ্ট সৌবৃতি ৷
পদকজয়ের পর বাংলার কর্তাদের অপদার্থতা নিয়ে সরব জাতীয় গেমসে সফল সাঁতারু। এ রাজ্যে ক্রীড়া পরিকাঠামোর অভাব এবং কর্তাদের রাজনৈতিক রংবাজিতে বিরক্ত তিনি। ইটিভি ভারতকে সৌবৃতি বলেন, "বাংলায় উপযুক্ত সাঁতারের পরিকাঠামো নেই। তাই আমি দিল্লির তালকোটরায় অনুশীলন করছি। এখানে অনুশীলন অনেক উচ্চমানের। বাংলায় সুইমিং স্ট্রোক দেখারই কোনও লোক নেই। কর্তারা সবসময় রাজনৈতিক তরজায় ব্যস্ত থাকেন ৷"
বাংলা দল মেয়েদের 200 মিটার রিলে ইভেন্টে নাম দিয়েও দল নামাতে পারেনি। বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের পদাধিকারীরা বিষয়টি জানেনই না। তাঁদের পদকজয়ের খবর দেওয়া হয়েছে কিন্তু গণ্ডগোলের খবর দেওয়া হয়নি। কী হয়েছিল শনিবার যে দল নামানো সম্ভব হয়নি। সৌবৃতি বলছেন, "রিলে দলে আমাকে আগে নামার জন্য রাখা হচ্ছিল। আমি বলেছিলাম জুনিয়র কাউকে শুরুতে নামানো হোক। কিন্তু রিলে স্টার্ট হওয়ার সময় রিপোর্টিং করতে গিয়ে দেখি আমি, মৌবনী, স্নিগ্ধা ঘোষ ও স্বস্তিকা রয়েছি রিলে টিম। স্বস্তিকা প্রথমে নামতে চাইছিল না। মৌবনীকে নামতে বলা হয়। তখন স্বস্তিকা বলে, ভাল করতে না পারলে আমাকে দোষ যেন না দেওয়া হয়। সেখান থেকেই কলরুমে ঝামেলার সূত্রপাত।"
অভিযোগ, এরপরই দুর্ব্যবহার করেন স্বস্তিকা। সকলের সামনেই বচসা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী স্বস্তিকা অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলতে থাকেন। যা শুনে সৌবৃতি বাইরে বেরিয়ে যান। এরপর সতীর্থের অভব্য আচরণের জন্য দলের ম্যানেজারকে ডেকে ইভেন্টে নামছেন না বলে জানান সৌবৃতি ৷ তিনি আরও জানান, ঝামেলা দেখে বাংলা দলকে কলরুম থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং দলের নাম কেটে দেওয়া হয় ৷ তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে এই ঘটনার প্রভাব যাতে না পড়ে, সেই চেষ্টা করছেন সৌবৃতি ৷
সতীর্থরা প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের তরফে কোনও অভিনন্দন বার্তা এসেছে ? হতাশ গলায় সৌবৃতির উত্তর, "প্রথমবার সোনাজয়ের সময় কয়েকজন মন্ত্রীর ফোন এসেছিল। কিন্তু তারপরে আর কারও তরফেই যোগাযোগ করা হয়নি। বরং সাফল্যের পর সাংবাদিকদের ফোন বেশি করে আসছে।"
হ্যাটট্রিকের পদক সোনালি হবে বলেই আশা করেছিল সকলে। কিন্তু তা হয়নি ৷ তবে সোনাজয়ের হ্যাটট্রিক না-হওয়ার আক্ষেপ এখন অতীত। সৌবৃতি বলছেন, "বাংলাকে এতগুলো পদক দিতে পেরে খুব খুশি। আমি গর্বিত। তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। এশিয়ান গেমসে সাফল্য পাওয়াই প্রধান লক্ষ্য। তার জন্য আমাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে।"
সালকিয়ার সাঁতার সংস্থায় হাতেখড়ি হওয়ার পরে দিল্লিতে চলে আসেন প্রাক্তন ভলিবল খেলোয়াড়ের (মা) কন্য়া সৌবৃতি। বাবা, মা এবং দিদি রয়েছেন বাড়িতে। পরিবার এই সাফল্যে দারুণ খুশি। বাংলায় কি ফিরে আসতে ইচ্ছা করে না? 23 বছরের বঙ্গকন্যার উত্তর, "আমি যতদিন সাঁতারের মধ্যে রয়েছি, ততদিন দিল্লিতেই থাকতে চাই।"