চুঁচুড়া, 24 অক্টোবর: এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থিত দানা ক্রমশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘণ্টায় 12 কিমি বেগে ৷ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ও শুক্রবার ভোরের মধ্যে ওড়িশার ভিতরকণিকা ও ধামরা বন্দরে আছড়ে পড়বে দানা ৷ ঝড়ের মোকাবিলা করার জন্য সমস্ত রকম সতর্কতা অবলম্বন করছে জেলা কৃষি দফতর। হুগলির বিভিন্ন ব্লকে লিফলেট বিলি ও মাইকিং প্রচার চলছে ৷ বন্যা পরিস্থিতিতে এমনিতেই ধান ও অন্যান্য ফসলে ব্যাপক ক্ষতি মুখে কৃষকরা। তার উপর ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা ৷
কৃষিমন্ত্রী কী জানিয়েছেন-
ঘূর্ণিঝড় থেকে ফসলকে রক্ষা করতে কী কী করণীয় তা নিয়ে সরাসরি কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন জেলা কৃষি আধিকারিক। পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতির জন্য আগেই শস্য বীমা আবেদনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যদিও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনা নিয়ে এখনই স্পষ্ট করছে না কৃষি দফতর। বৃষ্টির পরিমাণ অনুযায়ী ক্ষতি সম্ভবনা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন কৃষি আধিকারিকরা। ইতিমধ্যই পাকা শস্য কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ৷ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের সাধারণ কৃষকদের আশ্বস্ত করলেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
ঘূর্ণিঝড় দানা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন দফতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পাশাপাশি সক্রিয় রাজ্যের কৃষি দফতর। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের হুগলি জেলাতেও ভারী ও অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
হুগলি জেলার চাষাবাদের হিসেবনিকেশ-
হুগলি জেলায় মোট 1 লক্ষ 92 হাজার 4 হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। বর্ষাকালীন আমন ধান চাষ হয় 1 লক্ষ 86 হাজার 146 হেক্টর জমিতে। আউশ ধান 2 হাজার 460 হেক্টর জমিতে। তাতে আউশের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও হুগলিতে সবজি চাষ হয় 5 হাজার 958 হেক্টর জমিতে। ডাল, তৈল বীজ 318 হেক্টর। ভুট্টা 100 হেক্টর, ইক্ষু ও 6টি অন্যান্য ফসল 382 হেক্টর। ইতিমধ্যেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত 56 হাজার 299 হেক্টর জমি ৷ বর্তমানে জমিতে আউশ ধানের 80 শতাংশ ধান পেকে গিয়েছে। এই সময় কৃষকরা ধান না-কাটলে প্রভুত ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও সবজির জল সহ্য করার ক্ষমতা খুবই কম। সেক্ষেত্রে সবজি চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
চাষিদের বক্তব্য-
পোলবার এক ভাগচাষি সৈরব দুলে বলেন, "এমনিতেই বন্যার জন্য ফসল নষ্ট হল। তার উপর এই ঘূর্ণিঝড় দানা ৷ ফের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। যেহেতু আমরা ভাগচাষি, জমির মালিক বীমা পেয়ে যাচ্ছে আমরা কিছুই পাচ্ছি না। পুরোটাই ক্ষতির মুখে পড়ছি আমরা।"
সিঙ্গুর কৃষি দফতরে বীমা করাতে আসা এক কৃষক দীপক দাস বলেন, "দানা আসছে তাই আতঙ্কে আছি। যদি ঝড়-বৃষ্টি হয় তাহলে ধানের ক্ষতি হবে। তাই শস্য বীমা করাতে এসেছি। যদি সরকার থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় তাহলে কিছুটা সুরাহা হবে। তাহলে দেনাও শোধ করতে পারব।"
হুগলি কৃষি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর প্ল্যান প্রোটেকশন নিলয় কর বলেন, "কৃষকদের কাছে আমরা সতর্কবার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। বিশেষ করে আউশ ধানের ক্ষেত্রে। যদি ধান পরিণত হয়ে যায়, জমিতে না-ফেলে রেখে জমি থেকে কেটে তুলে নিতে হবে। ধান ছাড়াও হুগলিতে বিরাট অংশে সবজি চাষ হয়। এর আগে বন্যার জন্য রাজ্য সরকার বীমার সময় বাড়িয়ে 31 অক্টোবর করেছে। তবে কী পরিস্থিতি হবে এখনই বলা সম্ভব নয়।"
হুগলি জেলার যানবাহন পরিষেবার আপডেট-
এর পাশাপাশি হুগলি জেলায় আজ বন্ধ রয়েছে, একাধিক ফেরি সার্ভিস। দানার প্রকোপ থেকে বাঁচতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। জেলা শাসকের দফতর ছাড়াও 4টি মহকুমা ও 18টি ব্লকে এই জরুরি পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন কর্মীরা। বিপর্যয় মোকাবিলা দল তৎপর রয়েছে। আজ ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও আগামিকাল থেকে হাওড়া-বর্ধমান মেন ও কর্ড লাইন, হাওড়া-কাটোয়া শাখা এবং হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখা ও হাওড়া-আরামবাগ শাখার আপ ও ডাউন মিলিয়ে 68টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
হুগলিতে দানার প্রভাব-
সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে জেলাজুড়ে। জরুরি ভিত্তিতে ক্যাম্প খোলা হয়েছে সর্বত্র। পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবারের রাখা হচ্ছে ৷ জেলা প্রশাসনিক আধিকারিক সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, "প্রতিটি ব্লক ও পৌরসভাগুলিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কাঁচা বাড়ি থেকে সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করা হচ্ছে নিরাপদ ক্যাম্পে আসার জন্য। বিপজ্জনক গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রতি ব্লকে হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে ৷"
দানা আসছে-
বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় দানা। বুধবার মধ্যরাতেই দানা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থিত দানা ক্রমশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘণ্টায় 12 কিমি বেগে ৷ মৌসম ভবন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ও শুক্রবার ভোরের মধ্যে ওড়িশার ভিতরকণিকা ও ধামরা বন্দরের মধ্যেবর্তী এলাকা দিয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার করার কথা ঘূর্ণিঝড় দানা'র ৷ তখন দানা সিভিয়ার সাইক্লোনের রূপ নেবে। ঝড়ের প্রাবল্যের সঙ্গে থাকবে তুমুল বৃষ্টির সম্ভাবনাও। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে এরাজ্যের একাধিক জেলায়।