মধ্যমগ্রাম, 1 সেপ্টেম্বর: আরজি কর-কাণ্ডের আবহেই এক নাবালিকাকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে ধুন্ধুমার বাঁধল মধ্যমগ্রামে ৷ সাত বছরের নাবালিকাকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে । যিনি স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর 24 পরগনার মধ্যমগ্রাম ।
অভিযুক্তের দোকান-বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি ওই তৃণমূল নেতার বাড়িতেও চড়াও হন উত্তেজিত জনতা । চলে দফায় দফায় বিক্ষোভ । পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী । নামাতে হয় র্যাফ, কমবাট ফোর্সও । তাতেও পরিস্থিতি আয়ত্তে না-আসায় শেষ পর্যন্ত পুলিশকে লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয় । এরপরই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় । তবে, এলাকায় এখনও চাপা উত্তেজনা থাকায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ ।
জানা গিয়েছে, সাত বছরের ওই নাবালিকাকে প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় একটি দোকানে নিয়ে যায় অভিযুক্ত । এরপর দোকানের শাটার নামিয়ে নাবালিকাকে সে যৌন হেনস্থা করে বলে অভিযোগ । ঘটনার কথা জানাজানি হতেই সরগরম হয়ে ওঠে মধ্যমগ্রামের রোহাণ্ডা পঞ্চায়েত এলাকা । স্থানীয় গ্রামবাসীরা জড়ো হয়ে অভিযুক্তের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন । বিক্ষোভের মধ্যেই একদল জনতা উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর চালায় তাঁর বাড়ি এবং স্থানীয় ওই দোকানে ।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ । তাঁদের সামনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন উত্তেজিত জনতা । পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে । একসময় পুলিশের সঙ্গে তুমুল বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন গ্রামবাসীদের একাংশ । কার্যত পুলিশের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় ।
এদিকে, 'বিচার চাই' দাবি তুলে পথ অবরোধ করেন স্থানীয়রা । পুলিশের সামনেই ভাঙচুর চালাতে থাকেন তাঁরা । অভিযোগ, এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী তথা স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন ৷ এই অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়িতেও চড়াও হন বিক্ষোভকারীরা । তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় । এরপরই পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে নামানো হয় র্যাফ, কমবাট ফোর্স । বিক্ষোভকারীদের হটাতে শুরু হয় লাঠিচার্জ । ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও । বেশ কিছুক্ষণ পর উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয় পুলিশ ।
এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তথা সিপিএমের এক নেতা বলেন, "গোটা রাজ্যজুড়ে যে নৈরাজ্য চলছে, তার থেকে ব্যতিক্রম নয় রাজবাড়ি এলাকাও । তৃণমূল নেতাদের প্রশ্রয়েই এই সমস্ত ঘটনা ঘটে চলেছে । অথচ নির্বিকার পুলিশ প্রশাসন । এখানেও স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু, জনতার আক্রোশে তা আর সম্ভব হয়নি । আমরা চাই, অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি হোক ।"
যদিও এনিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী অথবা তৃণমূলের কোনও নেতার প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত মেলেনি ।
অন্যদিকে, ঘটনার পরই অভিযুক্তকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় । রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে ।