কলকাতা, 31 জুলাই: কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী সাফল্য আসেনি ৷ পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে একজন সাংসদকেও জেতানো যায়নি ৷ এমতাবস্থায় এবার বামফ্রন্টের বাইরে থাকা শক্তিগুলিকে কাছে টানার প্রক্রিয়া শুরু করল সিপিআই ৷ দলের রাজ্য দফতরে আয়োজিত 'অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন: বামপন্থীদের দৃষ্টিতে' শীর্ষক আলোচনা সভায় এমনই মত উঠে এল ৷ এমনিতেই কংগ্রেস-সঙ্গ প্রসঙ্গে সিপিএমকে চাপে রাখে শরিকরা ৷ এবার ঘুরপথে সেই চাপ আরও বাড়ল সিপিআইয়ের আলোচনাসভা থেকে ৷ সভায় উপস্থিত থাকলেও এ ব্যাপারে অবশ্য মন্তব্য করেননি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র ৷
আলোচনা সভায় বিভিন্ন বক্তা জানান, কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার বিষয়টি উপলব্ধি করলেও কর্মক্ষেত্রে সেই ভূমিকা নেয়নি! বিজেপি'র বিরুদ্ধে বামেদেরই আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন ৷ মানুষের লড়াইয়ের ময়দানে থেকেই বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে শক্তিশালী বিকল্প হয়ে উঠতে হবে ৷ তাই, বঙ্গে বামফ্রন্টের বাইরের বামশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ৷
সিপিআই রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আরএসএসের 'হিন্দু রাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা সফল করবে ভেবেছিল ৷ এজন্য ধর্মীয় কার্ড খেলা হয়েছিল ৷ সেই খেলা কাজ করেনি ৷ ফলে বিজেপিকে কোনওরকমে ঠেকানো গিয়েছে ৷ এই প্রথম কংগ্রেস সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, বামশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার উপলব্ধি করলেও কর্মক্ষেত্রে তারা সে ভূমিকা নেয়নি ৷"
বাংলার মাটি বাংলার জলকে ভাগ হতে দেব না, এককাট্টা বাম-কংগ্রেস
বামশক্তি বৃদ্ধি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বিজেপি'র বিরুদ্ধে বিকল্প গড়ে তোলার মূল চালিকাশক্তি হতে হবে বামেদের ৷ বামেদের মধ্যে বিরোধ বাড়িয়ে নয় বরং আরও ঐক্য প্রয়োজন ৷ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের বাইরেও যে বামশক্তি আছে তাদের ঐক্যবদ্ধ করে বিকল্পের পথে এগোতে হবে ৷ বিজেপি-তৃণমূলের বাইনারি ভেঙে বামপন্থীদের শক্তিশালী হতে হবে ৷ এ রাজ্যের রাজনীতির বরাবরের ইতিহাস, বৃহত্তর বাম-ঐক্যই বিকল্প গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে ৷ মানুষের লড়াইয়ের ময়দানে থেকেই বামপন্থীদের অগ্রসর হতে হবে ৷"
অন্যদিকে, সিপিএম আবার নতুন প্রজন্মের দিকে দায়িত্ব ছাড়ার পরিকল্পনা করছে ৷ সূত্রের দাবি, ওই বৈঠকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, "বামপন্থীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মতাদর্শগত লড়াই, রাজনৈতিক কর্মসূচি, নির্বাচনী রণকৌশল ৷ এই রণকৌশল ছিল বিজেপি-কে পরাস্ত করার ৷ সেই রণকৌশলই অনুসরণ করতে হবে ৷ এজন্য বামপন্থীদের এক হতে হবে ৷ বামপন্থীদের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে ঐক্য সম্প্রসারিত করে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে ৷ বামপন্থীরা শক্তিশালী না হলে বহুমুখী লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয় ৷ তাই পরবর্তী প্রজন্মকে তৈরি করে সামনে নিয়ে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে ৷ সব চেয়ে বড় কথা মানুষের কাছে যেতে হবে ৷ কারণ মানুষই ইতিহাস সৃষ্টি করে ৷"