চুঁচুড়া, 5 অক্টোবর: সন্দেহের বশে স্ত্রীকে খুন করার চেষ্টার জন্য এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সাজা দিল চুঁচুড়া আদালত ৷ সাজাপ্রাপ্তের নাম প্রদীপ মেটে ৷ প্রায় বছর দুয়েক আগে সে এই ঘটনা ঘটিয়েছিল ৷ দু’বছর পর স্বামীর সাজা হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পূর্ণিমা মেটে ৷
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলির পোলবা থানার সুগন্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধূমা গ্রামের বাসিন্দা পূর্ণিমা মেটে । স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার ছিল । সুগন্ধার একটি বি ফারমা কলেজের হস্টেলে ওয়ার্ডেনের কাজ করেন তিনি । সেই কাজ নিয়েই প্রদীপ মেটে তাঁর উপর সন্দেহ করত ৷
2022 সালের 3 জুন বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার পথে কামদেবপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে স্ত্রীর পথ আটকায় স্বামী প্রদীপ । হঠাৎ ধারালো কাটারি দিয়ে পূর্ণিমাকে কোপাতে শুরু করে । তিনি দুই হাত দিয়ে আটকাতে গেলে তাঁর চারটি আঙ্গুল কেটে যায় । মুখে কাটারির কোপ লাগে ৷ উপরের পাটির সব দাঁত কেটে পড়ে যায় । ঘাড়ে হাতে এলোপাথারি কোপে ক্ষতবিক্ষত হন পূর্ণিমা ।
তাঁর চিৎকার চেঁচামেচিতে স্থানীয় মানুষ চলে আসেন । তখনই তাঁকে চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । দীর্ঘদিন সেখানে ভর্তি ছিলেন তিনি । মানসিক ভাবে ভেঙেও পড়েন । পরে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেন পূর্ণিমা ।
এই ঘটনায় হুগলির পোলবা থানায় অভিযোগ দায়ের হয় ৷ পুলিশ তদন্ত শুরু করে ৷ গ্রেফতার করা হয় প্রদীপ মেটে-কে ৷ সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় জানান, 2022 সালের 22 নভেম্বর চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ । ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয় ৷ মোট 15 জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় । শুনানি শেষে শুক্রবার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন চুঁচুড়া জেলা আদালতের তৃতীয় দায়রা বিচারক অরুন্ধতী ভট্টাচার্য । শনিবার বিচারক প্রদীপকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন ।
মামলার রায় শুনে পূর্ণিমা মেটে বলেন, ‘‘20 বছরের বেশি সময় সংসার করেছি । খুব লড়াই করে কাজ করতাম । সন্দেহ করত কি না, আমি বুঝতে পারিনি । মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি । এই সাজায় খুশি আমি ।’’ পুলিশি তদন্তে খুশি আক্রান্ত মহিলা ।
পূর্ণিমার মা পারুল পাল বলেন, ‘‘পুরুষদের কাজই হল সন্দেহ করা । মেয়ে বাইরে কাজে যায়, সেটা পছন্দ ছিল না । বাড়িতে অশান্তি করত । অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি । মেয়েকে মেরেই ফেলেছিল । কোনোভাবে বেঁচেছে । একমাত্র মেয়েকে একাই বড় করছে ।’’