কলকাতা, 18 ফেব্রুয়ারি: সাতমাসের শিশুকন্যাকে যৌন হেনস্তার ঘটনায় দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত ৷ মঙ্গলবার কলকাতার নগর দায়রা আদালত এই রায় দিয়েছে ৷ রায় দিতে গিয়ে বিচারক ইন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায় মিত্র এই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলেই উল্লেখ করেন ৷
বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধের ক্ষেত্রেই সাধারণত আদালত ফাঁসির সাজা শুনিয়ে থাকে ৷ আরজি কর-কাণ্ডের রায়ের পর এই নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয় ৷ ওই ঘটনায় দোষী সঞ্জয় রায়কে আমরণ কারাবাসের নির্দেশ দেয় শিয়ালদা আদালত ৷ প্রশ্ন ওঠে, ওই ঘটনাকে কেন বিরলের মধ্যে বিরলতম হিসেবে ধরা হল না ? কেন ফাঁসির সাজা হল না সঞ্জয়ের ?
তবে এক্ষেত্রে অবশ্য নগর দায়রা আদালতের (ব্যাংকশাল কোর্ট) বিচারক ইন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায় মিত্র এই অপরাধকে বিরলের মধ্যে বিরলতম হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন ৷ ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা রাজীব ঘোষকে পকসো আইন এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 118 (গুরতর আঘাত করা), 137(2) (অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ), 140(1) (খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ), 140(4) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন । সোমবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত ৷ দোষী সাব্যস্ত হওয়া রাজীব ঘোষকে ঘটনার 78 দিনের মাথায় মঙ্গলবার ফাঁসির সাজা দিয়েছেন বিচারক ৷ এছাড়া নির্যাতিতা শিশুর পরিবার 10 লক্ষ টাকা সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ৷
যে ঘটনায় এই সাজা দেওয়া হল, তা ঘটেছিল গত বছরের 30 নভেম্বর ৷ সেদিন কলকাতার বড়তলা থানা এলাকায় ফুটপাথবাসী এক দম্পতির সাতমাসের শিশুকন্যা নিখোঁজ হয়ে যায় ৷ ওই দম্পতি পুলিশের কাছে অভিযোগও জানায় ৷ দিনকয়েক পর ওই দম্পতি যেখানে থাকেন, তার থেকে কিছুটা দূরে মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখা যায় ৷
পুলিশ ওই শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে ৷ প্রাথমিকভাবে জানা যায়, মেয়েটিকে যৌন হেনস্তা করা হয়েছে ৷ মেয়েটির শরীরে একাধিক জায়গায় কামড়ের দাগ ছিল ৷ যৌনাঙ্গও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ছিল ৷ তদন্ত শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই রাজীব ঘোষকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ ঘটনার 26 দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ করা হয় আদালতে ৷
চার্জশিট পেশের 40 দিনের মাথায় গতকাল, সোমবার রাজীবকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত ৷ এর পর আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় ইটিভি ভারত জানিয়েছিলেন, রাজীবের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে অপহরণ এবং খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ ও যৌন নির্যাতনের মতো অপরাধের ধারা দেওয়া হয় ৷ তথ্যপ্রমাণ হিসেবে ডিজিটাল এভিডেন্সের ব্যবহার করা হয় ৷ যা কলকাতা পুলিশের ইতিহাসে কোনও মামলায় প্রথমবার করা হয় ৷
সোমবার ওই আইনজীবী আরও বলেছিলেন, ‘‘এই ঘটনায় মোট 24 জন সাক্ষী দেন, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, মেডিক্যাল স্টাফ । এছাড়াও সবথেকে উল্লেখযোগ্য হল, নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নির্যাতিতার শরীরের অভিযুক্তের দাঁতের কামড়ের ছাপ সংগ্রহ করে তদন্ত হয়েছিল এবং শনাক্ত করা হয়েছিল ৷ কলকাতার এই ঘটনাতেও এই নাবালিকার শরীরে একাধিক জায়গায় কামড় বসিয়েছিল অভিযুক্ত । এখানেও নির্ভয়া-কাণ্ডের তদন্তের মতো নাবালিকার শরীরে কামড়ের দাগ চিহ্নিত করে অভিযুক্তের দাঁতের মাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয় ৷’’
7 মাসের শিশুকন্যাকে যৌন হেনস্তা, আড়াই মাসেই দোষী সাব্যস্ত যুবক