ETV Bharat / state

টিয়া-বুলবুলি-পায়রার ভিড়ে জমজমাট ছাদ, পশু-পাখিদের নিয়েই সংসার চুঁচুড়ার দম্পতির - Bird Lovers in Chinsurah

Couple Feeding Birds: বড় একটি ছাদ ৷ সেখানে রাখা জলের পাত্র, খাবার ৷ টিয়া থেকে বুলবুলি পাখি এসে মনের আনন্দে বিচরণ করছে, খেয়ে যাচ্ছে খাবার ৷ দৃশ্যটি চুঁচুড়ার একটি বাড়ির ৷ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ও তাঁর স্ত্রী এভাবেই 10 বছর ধরে সেবা করছেন পাখিদের ৷

Couple Feeding Birds
পাখিদের খাবারের ব্যবস্থা বাড়ির ছাদে (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 16, 2024, 9:55 PM IST

Updated : Jun 16, 2024, 10:15 PM IST

চুঁচুড়া, 16 জুন: স্বামী বিবেকানন্দ বলে গিয়েছেন, জীব সেবাই শিব সেবা ৷ অর্থাৎ জীবদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা মানেই ঈশ্বরের সেবা করা ৷ কিন্তু বর্তমানে সময়ে সেই জীবদের প্রতি মানুষের ভালোবাসার অভাব দেখা দিচ্ছে ৷ রাস্তাঘাট থেকে বাড়িতে প্রায়শ্যই জীবদের উপর অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসছে ৷ সেখানে একটা গোটা ছাদকে পাখিদের জন্য খুলে দিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী দেবাশিস গুহঠাকুরতা ৷ তাঁর নিজেই বাড়ির ছাদেই পাখিদের জন্য খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছেন তিনি । সেখানে রোজ আনাগোনা ঘটে কয়েকশো টিয়া, বুলবুলি, পায়রা থেকে কাকের ৷ মনের আনন্দে তারা খেলে বেড়ায় গোটা ছাদে ৷

বাড়ির ছাদে পাখিদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন দম্পতি (ইটিভি ভারত)

পশুদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই মহান কাজ করছেন দেবাশিস ৷ তাঁকে সঙ্গ দেন স্ত্রী পুতুল গুহঠাকুরতাও ৷ আগে পশু ও পাখিদের খাবার ওষুধ থেকে সব কিছুর ব্যবস্থা করতেন চুঁচুড়ার এই বাসিন্দা । এখন দেবাশিস গুহ ঠাকুরতা অবসর নেওয়ার পর থেকে পুরোপুরি পশু পাখিদের সেবায় নিয়োজিত । পাখিদের জন্য চাল, চালের খুদ, ছোলা ও ফলের ব্যবস্থা করেন তিনি ৷ তার জন্য আলাদা টাকা বরাদ্দ থাকে প্রতি মাসে । পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা তিনি প্রতি মাসে পাখিদের খাবারের পিছনে ব্যয় করেন ৷

একটানা তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত । তার থেকে বাদ নেই পশু পাখিরাও । নির্বিচারে গাছ কেটে যেভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে । তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাখিদের বিভিন্ন প্রজাতি । পুকুরগুলিতে জাল লাগানোর জন্য মরণ ফাঁদের মুখে পড়ছে মাছ রাঙা-সহ নানা ধরনের পাখি । দিনে দিনে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে পুরো পক্ষীকূল । সেই কথা মাথায় রেখে এই অবলা প্রাণীদের খাদ্যের সংস্থান করছেন দেবাশিস গুহঠাকুরতা ।

তিনি জানান, একমাত্র মেয়ের বিয়ের পর কুকুর বিড়াল ও পশু পাখিদের নিয়েই স্ত্রী পুতুল ও তাঁর সংসার । তাঁদের কাছে জীব নিরাপদ । তবে বহুবার এই অসহায় প্রাণীদের সেবা করতে গিয়ে নানা কুকথা শুনতে হয়েছে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে । কিন্তু তাতে যদিও কান দেননি 67 বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ৷ পাখিদের খাওয়ানো থেকে সেবার কাজ করে চলেছেন তিনি ৷

দেবাশিস বলেন, "পাখিদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমার এই কাজের চিন্তাভাবনা । এর জন্য প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো খরচ হয় । কুকুরের খাবারের জন্য 50 কিলো চাল, পাখিদের জন্য 15 থেকে 20 কিলো খুদ লাগে । ছোলা লাগে 8 কিলো । সারা মাসে 9 কিলো আপেল কিনি এই পাখিদের জন্য । বুবুবুলি পাখির খুব প্রিয় ফল আপেল । তাই সকলের কাছে অনুরোধ এভাবেই যেন সকলেই এগিয়ে আসে । খাঁচায় পাখি পোষার চেয়ে পরিবেশে পাখির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলে তাদের প্রজনন বাড়বে । পরিবেশও সুন্দর হবে ।" স্ত্রী পুতুল গুহঠাকুরতা বলেন, "পাখিদের খাবার জন্য আমি স্বামীকে সহযোগিতা করি । সারাদিন এদের নিয়ে সময় কেটে যায় । পাখিদের খাবার দেওয়ার জন্য প্রতিবেশী কয়েকজনের কাছে নানা কথা শুনতে হয় । তা সত্ত্বেও যতদিন ক্ষমতা থাকবে ওদের খাইয়ে যাব ।"

চুঁচুড়ার দম্পতির এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিবেশ প্রেমীরা । হুগলি জেলায় পশু পাখি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন চন্দন ক্লেমেন্ট সিং । তিনি বলেন, "দেবাশিস গুহঠাকুরতা যে কাজ করছেন খুবই ভালো উদ্যোগ । তবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে তাদের সঙ্গে কাজ করলে আরও ভালো হবে । হাইকোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী, আইপিসি ধারা 21-এ পরিষ্কারভাবে বলা আছে, যেকোন বন্য পশু পাখিদের খেতে দেওয়া যায় । কেবলমাত্র কোন আবাসনের ব্যালকনি থেকে খেতে দেওয়া যাবে না ।"

চুঁচুড়া, 16 জুন: স্বামী বিবেকানন্দ বলে গিয়েছেন, জীব সেবাই শিব সেবা ৷ অর্থাৎ জীবদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা মানেই ঈশ্বরের সেবা করা ৷ কিন্তু বর্তমানে সময়ে সেই জীবদের প্রতি মানুষের ভালোবাসার অভাব দেখা দিচ্ছে ৷ রাস্তাঘাট থেকে বাড়িতে প্রায়শ্যই জীবদের উপর অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসছে ৷ সেখানে একটা গোটা ছাদকে পাখিদের জন্য খুলে দিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী দেবাশিস গুহঠাকুরতা ৷ তাঁর নিজেই বাড়ির ছাদেই পাখিদের জন্য খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছেন তিনি । সেখানে রোজ আনাগোনা ঘটে কয়েকশো টিয়া, বুলবুলি, পায়রা থেকে কাকের ৷ মনের আনন্দে তারা খেলে বেড়ায় গোটা ছাদে ৷

বাড়ির ছাদে পাখিদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন দম্পতি (ইটিভি ভারত)

পশুদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই মহান কাজ করছেন দেবাশিস ৷ তাঁকে সঙ্গ দেন স্ত্রী পুতুল গুহঠাকুরতাও ৷ আগে পশু ও পাখিদের খাবার ওষুধ থেকে সব কিছুর ব্যবস্থা করতেন চুঁচুড়ার এই বাসিন্দা । এখন দেবাশিস গুহ ঠাকুরতা অবসর নেওয়ার পর থেকে পুরোপুরি পশু পাখিদের সেবায় নিয়োজিত । পাখিদের জন্য চাল, চালের খুদ, ছোলা ও ফলের ব্যবস্থা করেন তিনি ৷ তার জন্য আলাদা টাকা বরাদ্দ থাকে প্রতি মাসে । পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা তিনি প্রতি মাসে পাখিদের খাবারের পিছনে ব্যয় করেন ৷

একটানা তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত । তার থেকে বাদ নেই পশু পাখিরাও । নির্বিচারে গাছ কেটে যেভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে । তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাখিদের বিভিন্ন প্রজাতি । পুকুরগুলিতে জাল লাগানোর জন্য মরণ ফাঁদের মুখে পড়ছে মাছ রাঙা-সহ নানা ধরনের পাখি । দিনে দিনে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে পুরো পক্ষীকূল । সেই কথা মাথায় রেখে এই অবলা প্রাণীদের খাদ্যের সংস্থান করছেন দেবাশিস গুহঠাকুরতা ।

তিনি জানান, একমাত্র মেয়ের বিয়ের পর কুকুর বিড়াল ও পশু পাখিদের নিয়েই স্ত্রী পুতুল ও তাঁর সংসার । তাঁদের কাছে জীব নিরাপদ । তবে বহুবার এই অসহায় প্রাণীদের সেবা করতে গিয়ে নানা কুকথা শুনতে হয়েছে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে । কিন্তু তাতে যদিও কান দেননি 67 বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ৷ পাখিদের খাওয়ানো থেকে সেবার কাজ করে চলেছেন তিনি ৷

দেবাশিস বলেন, "পাখিদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমার এই কাজের চিন্তাভাবনা । এর জন্য প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো খরচ হয় । কুকুরের খাবারের জন্য 50 কিলো চাল, পাখিদের জন্য 15 থেকে 20 কিলো খুদ লাগে । ছোলা লাগে 8 কিলো । সারা মাসে 9 কিলো আপেল কিনি এই পাখিদের জন্য । বুবুবুলি পাখির খুব প্রিয় ফল আপেল । তাই সকলের কাছে অনুরোধ এভাবেই যেন সকলেই এগিয়ে আসে । খাঁচায় পাখি পোষার চেয়ে পরিবেশে পাখির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলে তাদের প্রজনন বাড়বে । পরিবেশও সুন্দর হবে ।" স্ত্রী পুতুল গুহঠাকুরতা বলেন, "পাখিদের খাবার জন্য আমি স্বামীকে সহযোগিতা করি । সারাদিন এদের নিয়ে সময় কেটে যায় । পাখিদের খাবার দেওয়ার জন্য প্রতিবেশী কয়েকজনের কাছে নানা কথা শুনতে হয় । তা সত্ত্বেও যতদিন ক্ষমতা থাকবে ওদের খাইয়ে যাব ।"

চুঁচুড়ার দম্পতির এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিবেশ প্রেমীরা । হুগলি জেলায় পশু পাখি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন চন্দন ক্লেমেন্ট সিং । তিনি বলেন, "দেবাশিস গুহঠাকুরতা যে কাজ করছেন খুবই ভালো উদ্যোগ । তবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে তাদের সঙ্গে কাজ করলে আরও ভালো হবে । হাইকোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী, আইপিসি ধারা 21-এ পরিষ্কারভাবে বলা আছে, যেকোন বন্য পশু পাখিদের খেতে দেওয়া যায় । কেবলমাত্র কোন আবাসনের ব্যালকনি থেকে খেতে দেওয়া যাবে না ।"

Last Updated : Jun 16, 2024, 10:15 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.