ব্যারাকপুর, 6 সেপ্টেম্বর: ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা হতেই রণংদেহী মেজাজে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি ৷ রেগে গিয়ে মামলার সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়কেই দিয়ে বসল খুনের 'হুমকি'! বাদ গেলেন না মামলার তদন্তকারী অফিসার ইন্দ্রজিৎ দাসও ৷ এমনই অভিযোগ উঠেছে রাজবীর সিং নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৷
এই ঘটনাকে ঘিরে শুক্রবার শোরগোল পড়ে যায় ব্যারাকপুর আদালত চত্বরে ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, সাজা ঘোষণার পর এদিন কোর্ট লক-আপ থেকে প্রিজন ভ্যানে উঠছিল রাজবীর ৷ তখনই সরকারি আইনজীবী ও তদন্তকারী অফিসারদের উদ্দেশ্যে রাজবীর বলতে থাকে, "বাইরে বেরিয়ে দেখে নেব তোদের দু'জনকে। কেউ বাঁচাতে পারবে না ৷" এই হুমকির কথা জানার পরই সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হন ৷ দায়ের হয় অভিযোগও ৷ সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া ৷
ব্যারাকপুরের আনন্দপুরীর সোনার দোকানের বহু চর্চিত ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় এদিন দোষী সাব্যস্ত পাঁচজনের সাজা ঘোষণা করেন ব্যারাকপুর আদালতের বিচারক অয়ন বন্দোপাধ্যায় ৷ তিনি এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত জামশেদ আনসারি, শফি খান, উত্তম কুমার উপাধ্যায়, আসিফ খান এবং রাজবীর সিং-কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ৷ যদিও এই রায়ে খুশি হতে পারেননি স্বর্ণ ব্যবসায়ী নীলরতন সিংহ ৷
2023 সালের 24 মে-র ওই ডাকাতির ঘটনায় আততায়ীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন তাঁর ছেলে নীলাদ্রি সিংহ ৷ আহত হন তিনি এবং তাঁর সোনার দোকানের এক কর্মীও ৷ ঘটনার তদন্তে ওই পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ খুন, ডাকাতি-সহ একাধিক ধারায় চার্জ গঠন হয় ধৃত এই পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৷ ব্লুটুথ ডিভাইস এবং ডিজিটাল এভিডেন্সের মাধ্যমে মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ৷
গত শনিবার এই পাঁচ অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন ব্যারাকপুর আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ ৷ সোমবার গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা থাকলেও বিচারক সেদিনের পরিবর্তে শুক্রবার সাজা ঘোষণার দিন ধার্য করেন ৷ সেই মতো এদিন দোষী সাব্যস্ত এই পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক ৷
এদিকে, পাঁচজনের মধ্যে আসিফ খান, উত্তম কুমার উপাধ্যায় এবং রাজবীর সিংয়ের সবোর্চ্চ শাস্তি ফাঁসির সাজা চেয়েছিলেন মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় ৷ পরিবারও চেয়েছিল দোষীদের ফাঁসির সাজা হোক ৷ কিন্তু, তা না হওয়ায় হতাশ সরকারি আইনজীবী এবং নিহতের পরিবারের সদস্যরাও ৷ অন্যদিকে, এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যেতে পারে প্রশাসন ৷ তেমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া ৷