মালদা, 16 জানুয়ারি: কালিয়াচকে তৃণমূলের গ্রামীণ নেতার খুনের ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতে মালদায় আবার খুন ৷ এবার রতুয়ার সামসীতে ৷ হাটে সবজির দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে বচসার জেরে মৃত্যু হয় 75 বছরের এক বৃদ্ধের ৷ যিনি রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ৷
এই ঘটনায় নিহত বৃদ্ধের পরিবারের তরফে সামসী পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমেছে রতুয়া থানার পুলিশ ৷ ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়েছে মালদা মেডিক্যালে ৷ এক অভিযুক্তকে আটক করা হলেও আরেকজন পলাতক ৷ সামসী ফাঁড়ির এক পুলিশ অফিসার জানাচ্ছেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে রুহুলকে আটক করা হয়েছে ৷ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ৷ আরেক অভিযুক্ত কেলটু পলাতক ৷ তার খোঁজ চলছে ৷”
নিহত বৃদ্ধের নাম মুসলিম সবজি ৷ রতুয়ার দেবীপুর গ্রামের কাঁঠালবাড়ির বাসিন্দা ছিলেন তিনি ৷ তিনি পেশায় ছিলেন সবজি বিক্রেতা ৷ প্রতি বৃহস্পতিবার সামসীতে সাপ্তাহিক হাট বসে ৷ সেই হাটে জেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে পসরা নিয়ে বসেন ৷ মুসলিমও সবজি নিয়ে সেই হাটে গিয়েছিলেন ৷ জানা গিয়েছে, সেখানে সবজির পসরা বসানো নিয়ে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে ৷ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এনিয়ে দু’পক্ষের বচসা চলাকালীন হঠাৎ রুহুল ও কেলটু নামে স্থানীয় বাহারাল গ্রামের দুই যুবক মুসলিমকে মারধর করে ৷ তারা মুসলিমের বুকে ঘুষি চালায় ৷ ঘুষির আঘাতে মুসলিম জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ৷ অন্য ব্যবসায়ীরাই তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে সামসী গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ কিন্তু সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী, বাহারালের বাসিন্দা আনসারি আলম বলছেন, “আমি তখন জিনিসপত্র ঢালছিলাম ৷ খানিক দূরে ধাক্কাধাক্কি চলছিল ৷ এটুকুই দেখেছি ৷ বাহারালের কেলটু আর রুহুলের সঙ্গে হাটের জায়গায় ত্রিপল বিছানো নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল ৷ তারপরেই শুনি, মুসলিম মারা গিয়েছে ৷” হাটে উপস্থিত মুসলিমের ভাগ্নে রাজু সবজির বক্তব্য, “মামা বয়স্ক লোক ৷ দেখি তার সঙ্গে কারও ঝামেলা চলছে ৷ একসময় দেখি, ছেলেটি মামার মুখে মারল ৷ মামা সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যায় ৷"
এলাকার বাসিন্দা তথা মালদা জেলা পরিষদের সদস্য লালটু চৌধুরী ঘটনাপ্রসঙ্গে জানান, “মুসলিম সবজি দেবীপুর অঞ্চলের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন ৷ তিনি দেবীপুর অঞ্চলের প্রাক্তন প্রধান ৷ সমাজসেবাতেও জড়িত ছিলেন ৷ নিজে সবজি বিক্রি করতেন ৷ পেশায় কৃষক ৷ নিজের জমিতে উৎপন্ন সবজি বিক্রির জন্য তিনি আজ সামসী রেগুলেটেড মার্কেটে আসেন ৷ হাটে বসার জায়গা নিয়ে একজনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে ৷ তাঁকে মারধর করা হয় ৷ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ৷ হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ এই ঘটনার জন্য দায়ী সামসী রেগুলেটেড মার্কেট কমিটি ৷ তারা বিক্রেতাদের বসার সুবন্দোবস্ত করেনি ৷ এই ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে, আর একজন পলাতক ৷ তারা বাহারালের ৷ আমরা চাই, দুই দোষীকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক ৷ সামসী রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব ৷”
নিহত বৃদ্ধের পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, এদিনই প্রথম নয় ৷ গত সপ্তাহেও হাটে এসে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল মুসলিমের ৷ দুষ্কৃতীরা তাঁকে মারধরও করে ৷ সেকথা তিনি সামসী রেগুলেটেড মার্কেটের কমিটিকে জানিয়েছিলেন ৷ কিন্তু মার্কেট কর্তৃপক্ষ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি ৷ এদিন দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েই প্রাণ হারিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী কে ?
মার্কেট কমিটির সম্পাদক অসিত বরের দাবি, “হাট চলাকালীন কমিটির তরফে 12 জন সদস্য টহলদারি চলান ৷ পুলিশের তরফেও এখানে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয় ৷ আজ দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে ঝামেলার জেরে মুসলিম সবজি নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে ৷ অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারির জন্য পুলিশের কাছে আবেদন জানাচ্ছি ৷”