উস্তি, 21 জানুয়ারি: প্রয়াত সিপিএম নেতার স্মরণসভায় এসে বামেদের প্রশংসা করায় বিতর্কে জড়ালেন মগরাহাট পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। একদিকে এই নিয়ে সরব হয়েছে শাসকদল ও বিজেপি ৷ অন্যদিকে, ঘটনার সৌজন্যতা ছাড়া আর কিছুই দেখছে না সিপিএম। একই মত খোদ বিধায়কেরও ৷
জানা গিয়েছে, শনিবার দক্ষিণ 24 পরগনার মগরাহাট বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত শ্রীচন্দা হাইস্কুলের মাঠে প্রয়াত সিপিএম নেতা সন্দীপ বারিকের স্মরণে একটি সভার করা হয় ৷ এই সভার আয়োজন করে সিপিএমের উস্তি এরিয়া কমিটি। বাম নেতৃত্বের তরফে তৃণমূল বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লাকেও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় । সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই তিনি আসেন স্মরণসভায়।
সিপিএম নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে তৃণমূল বিধায়কও প্রয়াত সন্দীপ বারিকের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন । পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু-সহ বাম নেতৃত্বের প্রশংসা করেন গিয়াসউদ্দিন মোল্লা । তৃণমূল বিধায়ক চলে যাওয়ার পর অনুষ্ঠান মঞ্চে আসেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী । তবে এই ঘটনার পর বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না শাসক শিবিরের বিধায়কের ৷
এ বিষয়ে তৃণমূল বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লা বলেন, "ছোটবেলায় রাজনীতিতে এসে সন্দীপ বারিকের স্নেহ পেয়েছি। আলাদা দল করতে পারি । তবে সিপিএম পার্টি মানেই খারাপ নয়। আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল । তাই আমি স্মরণসভায় এসেছিলাম ।" যদিও বিধায়কের এই কাজে মোটেই খুশি নন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা । মগরাহাট এক নম্বর ব্লক তৃণমূলের যুব সভাপতি ইমরান হাসান বলেন, "কী কারণে বিধায়ক সিপিএমের মঞ্চে গেলেন, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে উনি না-গেলেই ভালো করতেন । এতে নীচুতলার তৃণমূল কর্মীদের মনে আঘাত লাগতে পারে ।"
সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "প্রয়াত নেতার স্মৃতির উদ্দেশে স্মরণসভা হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সবাই এসেছেন । আগে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ এটাই ছিল । তৃণমূল-বিজেপি এসে তা নষ্ট করেছে । যাঁরা এসেছেন আমরা তাঁদের সকলকেই সাধুবাদ জানাচ্ছি ।" বিজেপি নেতা সুফল ঘটুয়া বলেন, "এই সভা থেকে প্রমাণ হল তৃণমূল সিপিএম সবাই একসঙ্গেই রয়েছে । তলায় তলায় তাদের আঁতাত যে রয়েছে সেটাই বোঝা গেল । এই সৌজন্য থাকলে সমাজে এত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হত না । বর্তমান পরিস্থিতিতে যেভাবে সিপিএম ও তৃণমূলের হাতে বিজেপি কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন তাতে বলা যেতেই পারে দু'দলের মধ্যে গোপন আঁতাত রয়েছে । আগামী নির্বাচনে মানুষ এর সঠিক উত্তর দেবে ।"
এ বিষয়ে দক্ষিণ 24 পরগনা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য মিন্টু মোকামি বলেন, "এই সৌজন্য সাক্ষাৎ বাংলা রাজনীতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে । আমরা এই স্মরণসভায় সব দলের মানুষকেই আহ্বান জানিয়েছিলাম । আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মাননীয় বিধায়ক এই স্মরণসভায় এসেছিলেন । আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি ৷ বাংলায় এইরকম রাজনীতি হওয়া উচিত।"
তবে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, সৌজন্যের খাতিরেই তৃণমূল বিধায়ক সিপিএমের স্মরণ সভায় হাজির হলেন নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোন সমীকরণ । লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ কি বাড়ছে ? সেই কারণেই কি তৃণমূলের বিধায়ক সিপিএমের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে সৌজন্যতা বজায় রাখছেন কিনা তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন ৷
আরও পড়ুন: