হাওড়া, 11 ডিসেম্বর: রয়েছে আস্ত একটি রেল স্টেশন ৷ কিন্তু, নেই সেই স্টেশনে ঢোকার মতো পর্যাপ্ত, উপযুক্ত প্রবেশ পথ । এর জেরে ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ উপায় নেই তাদের ৷ দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে স্টেশনে আসতে তাই রেল লাইন ধরে হাঁটতে তারা বাধ্য হচ্ছেন ৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রেল লাইন দিয়ে হেঁটে টিকিট কাটতে পৌঁছতে হচ্ছে স্টেশনে ।
ঘটনাটি হাওড়ার ডোমজুড় ব্লকের দক্ষিণবাড়ী রেল স্টেশনের । ঝালুয়ারবের পার হয়ে বড়গাছিয়ার আগেই পড়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এই স্টেশনটি ৷ স্টেশনে টিকিট কাউন্টার, নামের ফলক থাকলেও নেই ঢোকার কোনো সুব্যবস্থা । জন-বসতি থেকে প্রায় 7-8 ফুট চড়াই পেড়িয়ে রেল লাইন ধরে হেঁটেই এলাকাবাসীদের ঢুকতে হয় স্টেশনে ।
যাত্রী সুরক্ষা ও লাইন ধরে যাত্রীদের হাঁটা-চলা বন্ধ করতে, রাজ্য তথা দেশজুড়ে সচেতনতার কর্মসূচি পালন করে রেল কর্তৃপক্ষ ৷ সেই পরিস্থিতিতে হাওড়ার এই স্টেশনকে যেন কার্যত ভুলেই গিয়েছে ভারতীয় রেল, এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের ।
এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘ 30 বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এই সমস্যার কোনও সমাধান তারা পাননি । হাওড়া স্টেশন থেকে 26 কিলোমিটার দূরে রয়েছে দক্ষিণদাঁড়ি স্টেশনটি । এখানে পরিস্থিতি এমনই যে সন্ধ্যা 7টা বাজলে এই স্টেশনে কেউ আসেন না । টিকিট কাউন্টারও বন্ধ হয়ে যায় ।
নিত্যদিন ওই এলাকার পাওয়ার হাউজে কর্মরত গৌতম দাস বলেন, "আমি দশ বছর ধরে এখানে কর্মসূত্রে আসছি । এখানে স্টেশন থাকলেও ঢোকার রাস্তা নেই । সকলকেই লাইনের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হয় । এতে অনেক সময় পিছন থেকে ট্রেন চলে আসার ঘটনাও ঘটে । বহুদিন ধরে রাস্তা তৈরির কথা শুনলেও কিছুই হয়নি ।"
স্থানীয় বাসিন্দা তাপসী মণ্ডলের কথায়, "আমরা গরিব মানুষ, চাষবাস করে দিন চলে । ট্রেনে তমলুক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাই । এই স্টেশনে কোনো রাস্তা নেই । নিচ থেকে হেঁটে উঠতে খুব কষ্ট হয় । বয়স হয়েছে, এই পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে তাই এক ঘণ্টা সময় লেগে যায় । এখানে একটা রাস্তা হলে টিকিট কেটে স্টেশনে চলে আসতে পারবো ৷ এতে সকলের উপকার হবে ।"
কাজল পাল বলেন, "স্টেশনে আসার রাস্তা নেই ৷ তাই রেল লাইন দিয়ে যাতায়াত করি ৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমরা পারাপার করি ৷ 30 বছর ধরে এখানে রাস্তা নেই ৷ রাস্তাটা হলে আমাদের খুব উপকার হয় ৷"
এই বিষয় নিয়ে ওই দক্ষিণবাড়ী স্টেশনের মাস্টারের থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি যথেষ্টই অসহযোগিতা ও দুর্ব্যবহার করেন । যদিও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন সময়ে নিজেদের কাজের জন্য রেলের আধিকারিকরা এখানে এলেও স্টেশনের জন্য রাস্তার সমস্যা সমাধানের কোনও সমাধান তারা করেননি । কীভাবে এই সমস্যা মিটবে, এখন সেটাই বড় প্রশ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের ।