মেটিয়াবুরুজ, 29 মে: শেষ দফার ভোটের আগে মোদি-মমতার দ্বৈরথ জমে উঠেছে ৷ মঙ্গলবার কলকাতায় প্রায় একই জায়গায় রোড শো করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হাঁটলেন সেই এক রাস্তা ধরেই ৷ শুধু তাই নয়, ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে প্রচার করলেন তাঁরা দু'জনেই ৷ সকালে কাকদ্বীপে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷ আরেকদিকে বিকেল নাগাদ ডায়মন্ড হারবার লোকসভার অন্তর্গত মেটিয়াবুরুজে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য সভা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পাশাপাশি মমতা জানান, পিছিলে গিয়ে দেশের নেতা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি , টাকার জোরে।
বুধবার সভামঞ্চ থেকে ঘুরেফিরে বিজেপিকে ভয় না-পাওয়ার কথা রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে বললেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেন, "লড়েঙ্গে লেকিন, ঝুঁকেগা নেহি" ৷ কিছুটা বাংলায় বললেও আধ ঘণ্টার মধ্য়ে বেশ খানিকটা সময় স্বভাবসিদ্ধ হিন্দিতেই বক্তৃতা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর বক্তৃতায় মাঝে মধ্যেই ঘুরে ফিরে এসেছে একটাই কথা 'আমরা বিজেপিকে ভয় পাই না' ৷ প্রধানমন্ত্রী, বিজেপিকে তুলোধনার পাশাপাশি সিপিএম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও আক্রমণাত্মক ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷
আরও পড়ুন: লড়াই জয়ের ব্যবধানের নাকি হ্যাটট্রিকের ? ডায়মন্ড হারবারের কিস্সা কুর্সি কা
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাগবাজারে মায়ের বাড়িতে যান ৷ এরপর শ্যামবাজারে নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করে সেখান থেকে সিমলা স্ট্রিটে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি পর্যন্ত রোড শো করেন ৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ সঙ্গে ছিলেন উত্তর কলকাতার দলীয় প্রার্থী তাপস রায় ৷ এরপর বুধবার একই পথে কলকাতা উত্তরের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে মিছিল করেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মেটিয়াবুরুজের মঞ্চ থেকে তিনি সে কথা উল্লেখ করে বলেন, "আজও নেতাজির জন্মদিনে দিল্লি জাতীয় ছুটি দেয়নি ৷ আমি তাই প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম ৷ মোদি গিয়েছিলেন রাজনীতি করতে ৷ আমি গিয়েছিলাম নেতাজিকে স্যালুট জানাতে ৷"
দেশের নেতা যেই হোন না কেন, তাঁর সর্বধর্ম নিয়ে চলা উচিত ৷ অভিষেকের প্রচার মঞ্চ থেকে মমতা প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, "মোদি পিছলে দেশের নেতা হয়ে গিয়েছেন টাকার জোরে ৷ আর আজ নেতা হয়ে অহংকারে ডুবছেন। অহংকারের স্রোতে কথার ভাষা হারিয়ে গিয়েছে ৷" বারবারই তাঁর কথায় উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাবাদী ৷ এদিনও তিনি বলেন, "এইরকম মিথ্যাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমি জীবনে দেখিনি ৷ আজ সকালে কাকদ্বীপে গিয়ে বলে এসেছে, উনি নাকি পাড় বাঁধানোর টাকা দিয়েছেন ৷ আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম এক পয়সাও দেয়নি ৷ মিথ্য়েবাদী বলব না তো, কী বলব ৷" এরপরেই তাঁর বক্তৃতায় ফের শোনা যায় বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা ৷
আরও পড়ুন: 'উনি ধ্যান করলেই ক্যামেরা ছোটে', প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ মমতার
মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো এতটাই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "লজ্জা বলে তোর কিছু আছে, না তোর পার্টির কিছু আছে ?" আবার প্রধানমন্ত্রী মোদিকে তিনি বসন্তের কোকিল বলেও উল্লেখ করেন ৷ বিজেপির বাংলায় পরাজিত হওয়া নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মমতা বলেন, "আজ তো হারাটা কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে ৷ গতকাল তিনি বলে গিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের থেকেও বেশি ভোটে বাংলায় জিতব, বিহারের থেকেও বেশি ভোটে বাংলায় জিতব ৷ তার মানে কি উত্তরপ্রদেশে হারবেন ? আর বিহার-ইউপিতে হেরে বাংলায় সব সিটেও যদি জেতেন, আপনি কি সরকার গড়তে পারবেন ? চ্যালেঞ্জ রইল নরেন্দ্র মোদি ৷ রোজ মিথ্যা কথা বলে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন ৷"
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিনি বায়োলজিক্যালি জন্মগ্রহণ করেননি ৷ তাঁকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন ৷ তাঁর এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, "তিনি নাকি দেবতা, দেবতার থেকেও বড় দেবতা ৷ জগন্নাথ দেবও নাকি ওনাকে গুরু মানে ৷ আসুন তাহলে একটা মন্দির তৈরি করে দিচ্ছি ৷"
এই নির্বাচনে কংগ্রেস-সিপিএমের জোট প্রসঙ্গে মমতার কথায়, "কংগ্রেসকে দিয়ে খেলাচ্ছে ৷ সিপিএম কংগ্রেসকে টাকা দিয়ে বলছে যেখানে বিজেপি আছে, তাকে ভোট না-দিয়ে কংগ্রেসকে ভোট দাও ৷ এটা মুসলিমদের বলছে ৷ আর হিন্দুদের বলছে, আমরা হিন্দু পার্টি ৷ হিন্দুদের দে ৷ হিন্দু-মুসলমান করছে ৷ তৃণমূল কংগ্রেস মরে গেলেও যতদিন বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির গঠবন্ধন আছে, ততদিন সিপিএম-কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলায় কোনও বোঝাপড়া করব না ৷"
আগামী 1 জুন দমদম লোকসভা কেন্দ্রে ভোট ৷ সেখানে সিপিএম ও বিজেপির মধ্যে আঁতাঁত রয়েছে বলে দাবি করেন মমতা ৷ তিনি বলেন, "দমদমে সিপিএম ঠিক করেছে, তাদের এমপি ভোটটা বিজেপিকে দেবে ৷ আর বরানগরে এমপি ভোটটা সিপিএম বিজেপিকে দেবে ৷ আর বিধানসভার ভোটটা সিপিএম বিজেপিকে দেবে ৷"
দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেকের প্রচার মঞ্চ থেকেও মমতা বলেন "বাংলা ইন্ডিয়া জোট তৈরি করেছিল ৷ বাংলাই লিড করবে ৷ বাংলা সমর্থন দেবে ৷" ওবিসি তালিকা বাতিল হয়ে যাওয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায় তিনি মানেন না, তাও স্পষ্ট জানিয়েছেন ৷ 1 জুন, শনিবার দেশজুড়ে শেষ দফার নির্বাচনে ভোট ডায়মন্ড হারবারে ৷ এবারের তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী অভিজিৎ দাস বা ববি ৷ তাঁর সমর্থনে জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷
আরও পড়ুন: শেষ দফার আগেই নিশ্চিত 23টি আসন, বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ‘প্রত্যয়ী’ অভিষেকের