কলকাতা, 6 অক্টোবর: আরও একবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনার মুখে পড়লেন প্রতিবাদীরা । বিশেষ করে যাঁরা সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর সরকার ও তৃণমূলের আমলে ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আরও একবার তোপ দাগলেন তিনি ।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "প্রতিবাদ করুন ৷ প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চয়ই আছে । বাংলায় কিছু ঘটলেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু অন্য কোথাও কিছু ঘটলে কেন সবাই চুপ ।"
এ দিন আলিপুর বডিগার্ড লাইনসে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেখানেই এসব নিয়ে সরব হন তিনি । রবিবার কুলতলির ঘটনা নিয়েও ওই অনুষ্ঠান থেকেই মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি আশা প্রকাশ করেন, তিন মাসের মধ্যে পুলিশ এই ঘটনাগুলি পকসো কোর্টে নিয়ে গিয়ে ফাঁসির রায় আদায় করে আনবে ।
মমতার কথায়, "ক্রাইম ইস ক্রাইম । এর মধ্যে কোনও ধর্ম বর্ণ জাতি নেই । যে ক্রাইম করবে তার বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ করা হবে । আমাদের এখানে তিনটে ফাঁসির সাজা ইতিমধ্যেই হয়েছে । আমি চাই কুলতলির ঘটনায় পুলিশ পকসো কোর্টে মামলা করে তিন মাসের মধ্যে ফাঁসির সাজা আদায় করবে । তবে এটাও ঠিক যারা রাস্তায় আন্দোলন করে আমি বলি বেশি করে করুন । তাতে আমাদের শক্তি বাড়ে । এটা আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার ।"
পাশাপাশি এ দিন আলিপুর বডিগার্ড লাইনসের অনুষ্ঠানে গিয়ে পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "অজ্ঞানতাবশত একটু ভুল ত্রুটি হয়ে গেলে অযাচিতভাবে সেটাকে নিয়ে অনেকে অনেক উলটোপালটা কথা বলে । চক্রান্ত করে, অপপ্রচার করে । অথচ তারা জানে না, সেনার যে সম্মান, কেন্দ্রীয় বাহিনীর যে সম্মান, আমাদের পুলিশ বাহিনীর সম্মান তার থেকে কিছু অংশে কম নয় । বরং বেঙ্গল ফোর্সের সম্মান তার থেকে বহু অংশে বেশি ।"
মুখ্যমন্ত্রীর আরও বলেন,"একটা কিছু ভুল হলেই পুলিশকে কাঠগড়ায় তোলা হয় । কিন্তু মনে রাখতে হবে কাজ যে করে, ভুল সেই করে । আমরা সেই ভুলকেই বড় করে দেখাই । একবারও তো বলি না বর্ষার সময় ট্রাফিক পুলিশ কীভাবে দাঁড়িয়ে আছে । আগুন লাগলে পুলিশই গিয়ে দমকলকে আগে জায়গা করে দেয় । রোগীর পরিবার গেলেও কীভাবে পুলিশ অ্যাম্বুলান্সকে আগে জায়গা করে দেয়, সেটা কেউ বলে না ।" মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এসব পুলিশ করতে পারে তাঁদের পরিবার-পরিজন সাথ দেয় বলে ।
প্রতিবাদ-আন্দোলন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য, "দু-একটা ঘটনা কখনও কখনও ঘটে গেলে বাংলায় চিৎকার চেঁচামেচি হাহাকার পড়ে যায় । আপনাদের অধিকার আছে । কিন্তু অন্য জায়গায় যখন ঘটনাগুলো ঘটে তখন মুখে সবাই লিওকোপ্লাস দিয়ে থাকেন । একটাও প্রতিবাদ করেন না । কেউ কী ইচ্ছে করে কোনও ঘটনা ঘটায় । ইচ্ছে করে কেউ কখনও কোনও ঘটনা ঘটায় না । আজকের দিনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বেরিয়ে গিয়েছে । আমার ছবি দেখবেন, আমার গলায় বক্তৃতা শুনবেন, একদম আমার মতো, কিন্তু সেটা আমি বলছি না, বলছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স । ওটা ফেক ।"
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দাবি করেছেন,"আজকাল সাইবার ক্রাইম সবচেয়ে বেশি হচ্ছে । যারা সাইবার ক্রাইম করে তারাই এদের মদত দিয়ে চলে । যারা ভিডিয়োতে বেশি ব্যবসা করছেন, তাদের একবারও মনে পড়ে না । ধর্ষিতাদের নিয়ে এত মিডিয়া ট্রায়াল করা যায় না । এতে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে ।"
তিনি এও বলেন, "দয়া করে একটু প্রচার করুন ইউটিউবে, যে বাজে বাজে ভিডিয়োগুলো দেওয়া হচ্ছে এগুলি থেকে শিশুরা খারাপ জিনিস শিখছে । ছোটদের মধ্যেও অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে । যত সিরিয়াল এবং সিনেমা দেখবেন তাতে ক্রাইম দেখানো হচ্ছে । আমি বারবার বলছি ক্রাইমগুলো দেখাবেন না । এই ক্রাইম দেখে অন্যরা সেই অপরাধকে ফলো করে ।" তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই বলে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, "আমাকে গাল দিলেই হবে! আপনাদের নিজেদের দায়বদ্ধতা কোথায়, দায়িত্ব কোথায়? এগুলি থেকে অবক্ষয়ের পথে সমাজকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।"
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সাইবার ক্রাইম রুখতে বাড়ির মহিলাদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন । তিনি বলেন, "যখনই দেখবেন উলটোপালটা খবর ছড়ানো হচ্ছে, মেয়েদের দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি, সেটা চিহ্নিত করে উপরে লিখবেন ফেক । তারপর পুলিশকে পাঠিয়ে দিন সাইবার ক্রাইমে ।" মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "জগতের সব অপরাধ করে কেউ কেউ নাকি বড় স্টার হয়ে গিয়েছে । জোট বাধুন তো । বাস্তবিক ক্ষেত্রে আপনারা যারা ঘরে বসে কাজ করেন, সমাজটাকে আপনারা ভালো চেনেন ।"