জলপাইগুড়ি, 22 জানুয়ারি: রাজাভাতখাওয়াতে আসা কোনও পর্যটকের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যাবে না । আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে কড়া নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । শুধু তাই নয়, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কচিকাঁচাদের প্রকৃতিপাঠ শিবির ও পিকনিক করতে কোনও রকম বাধা দেওয়া যাবে না বলেও নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ।
বুধবার আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ করেন । তিনি বলেন, "রাজাভাতখাওয়া এলেই পর্যটকদের প্রচুর টাকা দিতে হয় বনবিভাগকে ।" পাশাপাশি প্রকাশ চিক বড়াইকও বনবিভাগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন । এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী বনবিভাগের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন ।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ফরেস্টের রাস্তা দিয়ে গেলে অত্যাচার হয় । আমার কাছে অভিযোগ এসেছে । ভুলে কেউ যদি ফরেস্টের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে তাহলে আপনারা স্ট্রং অ্যাকশন নেন, যা মানুষের পছন্দ নয় । আলিপুরদুয়ারের বেশ কিছু অভিযোগ আছে । পিকনিক করতে এলে কিছুজনকে বাধা দেওয়া হয়েছে ।"
এদিন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, "বিষয়টি নিয়ে সাংসদ বৈঠক করার পর সমস্যা মিটেছে ।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পালটা বলেন, "বনবিভাগ সিদ্ধান্ত নিজে নিজে নিয়ে নিলেই এটা হবে না । সব দায় আমাদের উপর আসবে । আমরাও কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না । হোম স্টে নিয়ে একই সমস্যা ।" মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "হোম স্টে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে । হোম স্টে যারা করেছিল তারাও পার্টি হবে । আমরা আদালতে লড়াই করব ।"
এদিন জয়ন্তী থেকে বোল্ডার তোলার পক্ষে সওয়াল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "হোমস্টেতে রাজাভাতখাওয়ার পর্যটকদের ঢুকতে প্রচুর টাকা দিতে হয় ৷ কার অনুমতি নিয়ে এটা করা হয় । কে টাকা ফিক্স করেছে । তারা সরকারকে না জানিয়ে টাকা ফিক্সড করবে ? এখুনি ওটাকে চেঞ্জ করে দিতে হবে । পর্যটকরা কোন ফিস দেবে না । আমরা কোন ফিস নিই না । কেন নেবেন । বনবিভাগ নিজেদের কী ভাবে, কে জানে । এতে সমস্যা হচ্ছে সাধারণ মানুষের ৷ আমাকে দোষ দিচ্ছে তারা । শীতের মরশুমে প্রকৃতিপাঠ শিবিরে কোনও টাকা নেওয়া হবে না ।"
হোম ট্যুরিজম বাড়াতে হবে বলেও এদিন বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী । এদিকে এদিনের বৈঠকে রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বড়াইক বলেন, "বনবিভাগের অনেক সমস্যা ছিল ৷ বনের এলাকায় শুকনো কাঠ নিতে গেলেও সমস্যা করত । একশো বছরের রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে । অনেক সমস্যা আছে ৷ প্রশাসনিক দিক থেকেও আমাদের জানানো হয়নি ।" জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় কোনও রকম বড় বিল্ডিং প্ল্যান পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া হবে না বলেও সাফ জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমরা পাহাড়ে আগে নেতাজির জন্মদিন পালন করেছি । এবার ডুয়ার্সে নেতাজির জন্মদিন পালন করছি । উত্তরবঙ্গকে গুরুত্ব দিচ্ছি । ব্লকে ব্লকে সাইরেন বাজবে । জন্মদিন পালন হবে । পরের আর্থিক বছরের কাজ 31 ডিসেম্বরের মধ্যে করতে হবে । এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে ওয়ার্ক ওর্ডার দিতে হবে । ফান্ড দেখে নিতে হবে ।"
মমতার কথায়, "আলিপুরদুয়ার জেলায় 441টি কাজ ছিল । 303টি কাজ শেষ হয়েছে । 148টি কাজ শেষ করা যায়নি । কাজ কেন হয়নি ? তা শেষ করতে হবে । জয়গাঁর পানীয় জলের কাজ, কুমারগ্রামে পানীয় জলের কাজ হয়নি ।" তিনি বলেন, "আমি পিএইচই-এর সঙ্গে কথা বলছি । কোনও কাজের জন্য কাউকে কোনও টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই । সব সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজ শেষ করতে হবে । আগামিবার 14 হাজার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হবে ।"
পিএইচই-এর কাজ করার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর । তিনি বলেন, "কিছু কাজ দায়সারা ভাবে হচ্ছে, প্রত্যেক জেলাকে অ্যালার্ট করছি । ঘরের জন্য কেউ টাকা পয়সা চাইলে অ্যাকশন হবে । এফআইআর হবে । আমরা 28 লক্ষ রিভিউ করেছিলাম । প্রথম কিস্তির টাকা ডিসেম্বরে দেওয়া হয়েছে । জুন মাসে দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়া হবে । পরে আবার হবে । 47 লক্ষ বাড়ি করছি ।"
আইসিদের কাছে কাজ পড়ে থাকলে সেটা করতে হবে বলে নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "আমরা থার্ড পার্টিকে দিয়ে ফিল্ড ভেরিফিকেশন করি । কিন্তু সেটা সন্তোষজনক নয় । মুখ্যসচিব যদি কয়েকটি জায়গায় যেতে পারেন তাহলে বিডিওরা কেন পারবেন না । ডিএম, এসডিও, বিডিও'রা ফিল্ড ইন্সপেকশন করছেন কি ?"
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "আবার ফিল্ড ভিজিট করতে শুরু করুন । বাংলা সেবা কেন্দ্রে আলিপুরদুয়ার জেলায় 60টা কেন্দ্র আছে । আরও বেশি হতে পারে । সচেতনতা বাড়াতে হবে । আবার দুয়ারে সরকার হবে 37টা বিষয় রাখা হয়েছে । 24 জানুয়ারি থেকে 1 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবে । আলিপুরদুয়ারের 40 শতাংশ জমি ফরেস্ট ল্যান্ড, 20 শতাংশ চা বাগান । তার মধ্যে এখনও 26800 পাট্টা বিতরণ হয়েছে । 7305 গৃহ পাট্টা, 13450 চা পাট্টা দেওয়া হয়েছে ।"
আদিবাসীদের জমি হস্তান্তরের বিষয়ে কোনও বেনিয়ম মানা হবে না বলেও প্রশাসনিক সভায় জানান মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, "আইনের যেন কোনও হেরফের না হয় । 61টি চা বাগান আছে । জমির পাট্টা পাচ্ছে আর বাড়ির টাকা পাচ্ছে এরকম 22টা মামলা হয়েছে । চা তোলার সময়সীমা টি বোর্ড কম করে দিয়েছে । মুখ্যসচিবকে বলব বিষয়টি দেখতে ।" পাশাপাশি এদিন এথেলবাড়িতে ইন্ডাট্রিয়াল স্পট করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।