কলকাতা, 16 ডিসেম্বর: 71-এর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় দিবস পালন ভারতীয় সেনার ৷ যেখানে ফোর্ট উইলিয়ামে ভারতীয় সেনার তরফে আয়োজিত 'মিলিটারি ট্যাটু'তে প্রথমবার যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ রেস কোর্সের মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একাত্তরের শহিদদের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানালেন তিনি ৷ সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য উঠে এল স্বাধীনতা সংগ্রামী বাবার প্রসঙ্গও ৷
ভারতীয় সেনা প্রতি বছরের মতো এবারেও 1971 সালের মুক্তিযুদ্ধ জয়ের স্মরণে বিজয় দিবস পালন করছে ৷ আজকের দিনেই ভারতীয় সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল প্রায় 1 লক্ষের কাছাকাছি পাকিস্তানি সেনা ৷ সেই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের অস্তিত্ব মিটে জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ ৷
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনার প্রাক্তন জওয়ানরা এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ৷ বাংলাদেশ থেকেও মুক্তিযোদ্ধা এবং সেনার ন’জনের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল ৷ সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতরে অনুষ্ঠানের পর, বিকেলে রেস কোর্সের মাঠে 'মিলিটারি ট্যাটু'র আয়োজন করা হয় ৷
সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমি খুবই গ্রেটফুল ৷ উপস্থিত সমস্ত সেনা আধিকারিক এবং দুই দেশের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানাই ৷ আমাকে এখানে আসার এবং বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য ৷ আমি আমার দেশের সেনার জন্য গর্বিত ৷ তাঁদের সাহস, দেশের জন্য তাঁদের প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য ৷ এখনও পর্যন্ত যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই ৷"
মুক্তিযুদ্ধে শহিদ স্মরণে মমতা বলেন, "এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই উপস্থিত আছেন ৷ বাংলাদেশের জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের ভুলতে পারব না ৷ আমার বাবাও স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন ৷ আমার বাবা মাত্র 40 বছর বয়সে মারা যান ৷ তাঁর কাছে বহু সংগ্রামের কথা শুনেছি ৷ 1965 সালের ইন্দো-চায়না যুদ্ধ, 71-এর পাকিস্তানের যুদ্ধের কথা শুনেছি ৷ ভারতের সেনা জওয়ানদের জন্য লতাজির গাওয়া গান সকলের হৃদয়ে গেঁথে আছে ৷"
ভারতীয় সেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ রামচন্দ্র তিওয়ারি বলেন, "ভারতীয় সেনা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ধন্যবাদ জানাই ৷ সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই আমাদের আমন্ত্রণে এখানে উপস্থিত থাকার জন্য ৷ ইস্টার্ন কমান্ডের একাধিক কাজে রাজ্যের প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ৷"
বিজয় দিবস উপলক্ষে রেস কোর্সে আজ ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের আধিকারিক এবং সদস্যরা 'মিলিটারি ট্যাটু' বা সেনার রণকৌশল প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে ৷ পড়শিদেশ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও প্রশাসনের একাধিক কর্তা উপস্থিত ছিলেন ৷ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
প্রদর্শনীতে মাইক্রো লাইটিং ফ্লাইং, ট্র্যাডিশনাল নাচ কালারি পায়াটু, ভাঙড়া, স্কাই ডাইভিং, ডগ শো, রোবটিক ইস্ট্রুমেন্ট ডিস-প্লে সহ ঘোড়ার একাধিক রণকৌশল প্রদর্শিত হয় ৷ কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে ভারতীয় বায়ুসেনার জওয়ানরা কীভাবে শত্রুদের চিহ্নিত করে খতম করেন, তারও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয় ৷ একইসঙ্গে শত্রু পক্ষকে দমন করতে গিয়ে সেনা জওয়ানরা আক্রমণের শিকার হলে, তড়িঘড়ি তাঁদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিও তুলে ধরা হয় ৷