কলকাতা, 17 ডিসেম্বর: বাংলাদেশে যখন সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের একাধিক অভিযোগ উঠছে, সেই আবহেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে গঙ্গাসাগর মেলা ৷ যা আয়োজিত হবে বাংলাদেশের জলসীমা লাগোয়া অঞ্চলেই ৷ এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্র করে কোনও অস্থিরতা যাতে তৈরি না-হয়, তার জন্য গোপনে বাড়তি নজরদারি চালাতে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই মতো পুণ্যস্নান ও মেলার আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়েও প্রশাসনকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দিলেন তিনি ৷
এ বছর গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হবে 8 জানুয়ারি থেকে ৷ চলবে 17 জানুয়ারি পর্যন্ত ৷ আর সংক্রান্তিতে পুণ্যস্নান হবে দু’দিন, 14-15 জানুয়ারি। সোমবার নবান্ন সভাঘরে আসন্ন গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক ছিল ৷ এদিনের প্রস্তুতি সভায় গঙ্গাসাগর মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রেল, নৌসেনা ও বিএসএফের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন ৷ সেখানেই পুলিশ, সীমান্ত ও উপকূলরক্ষী বাহিনী ও জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন মমতা ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "কিছুটা বিপজ্জনক এলাকা রয়েছে ৷ নীরবে নজরদারি চালাতে হবে ৷ ওপারে তো আমরা যেতে পারব না ৷ তবে, সতর্ক থাকতে হবে যাতে অবাঞ্ছিত ঘটনা না-ঘটে, তা দেখতে হবে ৷ ওয়াচ টাওয়ার বাড়াতে হবে ৷" এই নজরদারির জন্য ওয়াচ টাওয়ারের পাশাপাশি, ড্রোনের সংখ্যাও বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন তিনি ৷
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং ভারতীয় নৌসেনা-কেও সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছেন মমতা ৷ সেই মতো নৌসেনার তরফে জানানো হয়েছে, মেলা চলাকালীন দু’টি হোভারক্রাফ্ট এবং তাদের একটি জাহাজের মাধ্যমে নজরদারি চলবে ভারত-বাংলাদেশ জলসীমায় ৷ তবে, মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, সম্ভব হলে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হোক ৷ যদিও, নৌসেনা জানিয়েছে তাদের কাছে এ-ধরনের কোনও ড্রোন নেই ৷ তবে, প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের তরফে তাদের ড্রোন সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি
গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখতে এবছরও মুখ্যমন্ত্রী মেলা শুরুর আগে গঙ্গাসাগরে যাবেন ৷ 6-8 জানুয়ারি মমতা সেখানে উপস্থিত থাকবেন ৷ গঙ্গাসাগর মেলা ও পুণ্যস্নানে আসা পুণ্যার্থীদের জন্য একাধিক বন্দোবস্ত করছে রাজ্য সরকার ৷
পরিবহণের ক্ষেত্রে 250টি সরকারি বাস, 250টি বেসরকারি বাস ও 9টি বার্জ থাকছে ৷ সঙ্গে 32টি ভেসেল, 100টি লঞ্চ ও 21টি জেটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৷ সমস্ত জলযানে জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে ৷ সেই সঙ্গে ইসরোর সাহায্য নিয়ে স্যাটালাইট ট্র্যাকিংও চলবে ৷
এবছর গঙ্গাসাগরে যাওয়া এবং আসার জন্য সিঙ্গেল টিকিট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে ৷ প্রত্যেকটি বাসেই থাকবে সাগর বন্ধু ৷ মেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মুড়িগঙ্গায় জল শুকিয়ে যাওয়া ৷ গতবার থেকে শিক্ষা নিয়ে মুড়িগঙ্গার নিকাশিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল ৷ ফলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, আট নম্বর লট এবং কচুবেড়িয়ার মধ্যে প্রায় 18-20 ঘণ্টা ভেসেল পরিষেবা দেওয়া হবে ৷ একইসঙ্গে চেমাগুড়ি ও বেনুবনের মধ্যে নিকাশি কাজ হওয়ায়, সেখানেও যাতায়াত সহজ হবে ৷
ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্যও একাধিক ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন ৷ মমতা জানান, এবার গঙ্গাসাগরে 54 কিলোমিটারের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে ৷ এছাড়া থাকবে 1150টি সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি ৷ গঙ্গাসাগরে নজরদারির জন্য 20টি ড্রোন থাকছে ৷ বাংলার পাশাপাশি, হিন্দিতেও মাইকিং হবে ৷ কুয়াশার কারণে যাতায়াতে যাতে কোনও অসুবিধা না-হয় সেজন্য ফগলাইটের ব্যবস্থা থাকছে ৷
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কথা ভেবে প্রায় আড়াই হাজার সিভিল ডিফেন্স ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে ৷ 12টি টেম্পোরারি পাওয়ার স্টেশন এবং 50টি দমকলের গাড়ি থাকছে ৷ গঙ্গাসাগর মেলা চলাকালীন সরকারি কর্মী, পুলিশ, এনজিও, পরিবহণ কর্মী এবং মিডিয়ার জন্য 9-17 জানুয়ারি মধ্যে 5 লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বীমা করেছে রাজ্য সরকার ৷
মেলা প্রাঙ্গণ যাতে পরিষ্কার রাখা যায়, তার জন্য 12 হাজারের বেশি শৌচালয়, 7টি সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট এবং গারবেজ কালেকশনের জন্য 75টি ই-কার্ট থাকবে ৷ এছাড়া সৈকত পরিষ্কারের জন্য 3 হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হচ্ছে ৷
মেলায় আগত সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে 385টি বেডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সাগর, নামখানা, চেমাগুড়ি, আট নম্বর লট ও রুদ্রনগরে ৷ এই এলাকগুলিতে পাঁচটি অস্থায়ী হাসপাতাল করা হচ্ছে ৷ যেখানে 130টি বেডের বন্দোবস্ত থাকছে ৷ এ বছরেও একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এবং চারটি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স রাখা হচ্ছে ৷ থাকছে 100টি অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থাও ৷ আশঙ্কাজনক রোগীদের জন্য গ্রিন করিডরের ব্যবস্থা করবে প্রশাসন ৷
এ দিনও গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি না-দেওয়া নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এ নিয়ে তিনি কেন্দ্রের সমালোচনাও করেছেন ৷