মালদা, 29 জুন: মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কেমিক্যাল কীটনাশকের ব্যবহারে গত বছর মালদার আমের বিদেশ যাত্রা থমকে দিয়েছিল ৷ তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার মরশুমের প্রথম থেকেই কয়েকজন আমচাষিকে প্রস্তুত করেছিলেন মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ৷ ওই চাষিরা কেউ তাঁদের বাগানে এবার রাসায়নিক সার কিংবা কেমিক্যাল কীটনাশক প্রয়োগ করেননি ৷ ফল হাতেনাতে ৷ আগামী সপ্তাহেই জেলায় উৎপাদিত 13 মেট্রিক টন হিমসাগর রওনা দিচ্ছে লন্ডন এবং দুবাইয়ে ৷ ইতিমধ্যে তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে ৷
মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টার্স কোঅর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা শনিবার ইটিভি ভারতকে বলেন, “দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয় পশ্চিমবঙ্গে ৷ রাজ্যে মালদা জেলাতেই সবচেয়ে বেশি আম ফলে ৷ কিন্তু আমচাষিদের অজ্ঞতার জন্য গত বছর জেলার আম বিদেশে রফতানি করা যায়নি ৷ কারণ, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার আর কীটনাশকের ব্যবহার ৷ সেটা মাথায় রেখে এবার মরশুমের শুরু থেকেই আমরা সতর্ক ছিলাম ৷"
তিনি জানান, জেলাশাসক সবার আগে উদ্যোগ নিয়েছিলেন যাতে কিছু চাষির বাগানে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে আম উৎপন্ন করা যায় ৷ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর ও শিল্প দফতরের জেনারেল ম্যানেজারও ৷ তাঁদের সহযোগিতায় এবার মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কয়েকজন চাষিকে সচেতন করে ৷ তাঁরা এবার নিজেদের বাগানে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে আম চাষ করেছেন ৷ সেই বাগানগুলির আম এবার বিদেশে যাচ্ছে ৷ যেহেতু মালদা জেলার হিমসাগর জিআই তকমা পেয়েছে, তাই প্রথমে ওই প্রজাতির আমই ইউকে ও মিডল ইস্টে রফতানি করা হচ্ছে ৷ পরবর্তীতে জিআই প্রাপ্ত অন্য আমগুলিও বিদেশে রফতানি করা হবে ৷
বিদেশে আম রফতানি প্রসঙ্গে উজ্জ্বল সাহা আরও বলেন, “প্রথম ফেজে আমরা ইউকে ও মিডল ইস্টে জেলার আম পাঠাচ্ছি ৷ পরে ইউরোপিয়ান দেশগুলিতেও আম রফতানির চিন্তাভাবনা রয়েছে ৷ এই উদ্যোগ সফল হলে রফতানিকারকরা তো বটেই, আমচাষি থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বিদেশি মুদ্রা অর্জন করতে পারবে ৷ জেলার আমভিত্তিক অর্থনীতি আরও মজবুত হবে ৷ প্রথম ফেজে আমরা 13 মেট্রিক টন আম লন্ডন ও দুবাইয়ে পাঠাচ্ছি ৷ সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহেই এই বরাত বেরিয়ে যাবে ৷"
তবে এয়ার কার্গোতে 13 মেট্রিক টনের বেশি মাল পাঠানো যায় না বলে জানান মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ৷ তাই ধাপে ধাপে বাই বিদেশে আম পাঠাতে হবে ৷ এই কাজে রফতানিকারকরা রাজ্য সরকার ও অ্যাপেডার সাবসিডি সুবিধে পাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন উজ্জ্বল সাহা ৷ তিনি বলেন, "মালদা থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে নিয়ে যেতে আমরা কোনও গ্রিন করিডরের সুবিধে না পেলেও রাস্তার কোথাও যাতে আমভর্তি কন্টেনারকে অপেক্ষা করতে না হয়, তার জন্য জেলাশাসক বিশেষ ব্যবস্থা করেছেন ৷ আমরা বাগান থেকে সরাসরি কলকাতা বিমানবন্দরে আম পাঠিয়ে দেব ৷”
জেলাশাসক নীতীন সিংহানিয়া বলেন, “আমরা সবাই চাই মালদার আমের সুনাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক ৷ আমচাষিরা অর্থনৈতিকভাবে আরও এগিয়ে যান ৷ সেদিকে লক্ষ্য রেখেই মালদার আম বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রশাসনের তরফে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৷ তবে জেলার আমকে বিশ্বখ্যাত করে তুলতে চাষিদেরও এগিয়ে আসতে হবে৷ সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে তাঁদের ৷ এবছর কয়েকজন চাষি সেই পদ্ধতিতে চাষ করেছেন ৷ আশা করা যায়, ভবিষ্যতে আরও অনেকে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে তাঁদের বাগানে আমচাষ করবেন ৷ এতে তাঁরাই উপকৃত হবেন ৷”