বর্ধমান, 21 ফেব্রুয়ারি: বিরিয়ানি নাম শুনলেই আট থেকে আশির জিভে জল ৷ এখন তো কোথাও 30 টাকা আবার কোথাও 75 টাকাতেও বিরিয়ানি পাওয়া যায় ৷ তাতেই দোকানগুলিতে সাধারণ মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে বিরিয়ানির গুণগত মান নিয়ে। স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে কি সেগুলি তৈরি করা হচ্ছে ? তা নিয়ে চিন্তিত ফুড সেফটি বিভাগের আধিকারিকরাও।
বর্ধমান শহরে ব্যাংয়ের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে একের পর এক বিরিয়ানির দোকান। বর্ধমান স্টেশন বাজার এলাকা থেকে শুরু করে জেলখানা মোড়, লক্ষ্মীপুর মাঠ, পার্কাস রোড, টাউন হলের আশপাশ, বীরহাটা এলাকা কিংবা বড়নীলপুর এলাকা থেকে উল্লাস মোড় পর্যন্ত একাধিক বিরিয়ানির দোকান আছে । কোথাও ঝাঁ চকচকে দোকান, তো আবার কোথাও স্টল বানিয়ে সামনে কিছু চেয়ার টেবিল পেতে দেওয়া হয়েছে।
এই সব দোকানগুলিতে বিরিয়ানির স্বাদ ও গন্ধ মেশানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এক ধরনের কেমিক্যাল। যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর । আজে বাজে ফুড ফ্লেভার মেশানো হচ্ছে । বিরিয়ানিতে কৃত্রিম উপায়ে স্বাদ ও গন্ধ আনার জন্য এক ধরনের কেমিক্যালের ব্যবহার করা হচ্ছে । বেশ কিছু ফুড কালার ব্যবহার করা হচ্ছে । অথচ ওই সব ফুড ফ্লেভার কিংবা আনুষাঙ্গিক জিনিস মেশানোর অনুমতি দেয় না FSSAI ৷ তবুও তার ব্যবহার চলছে ৷
শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলা নয়, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও গত কয়েকবছরে খাবারের দোকানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বিরিয়ানির দোকান । ব্যাঙের ছাতার মতো এখানে ওখানে গজিয়ে উঠেছে কম দামের বিরিয়ানির দোকান । কে কত সস্তায় বিরিয়ানির প্লেট সাজিয়ে ক্রেতার মুখে তুলে দিতে পারে তাই নিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা ।
গত পুজোর মরশুমে দিঘা পর্যটন কেন্দ্রে ভেজাল বিরিয়ানি ধরার জন্য অভিযান চালিয়েছিল খাদ্য সুরক্ষা দফতর। সেখান থেকে জানা যায়, বেশ কিছু দোকানের বিরিয়ানিতে এক ধরনের রং ব্যবহার করা হচ্ছে ৷ যা কাঠের আসবাবপত্র পালিশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে । যে রঙের এক প্যাকেটের দাম 10-15 টাকা ৷ অন্যদিকে আসল যে ফুড কালার তার দাম 70-80 টাকা ৷ ছোট দোকানদারেরা বিরিয়ানির দাম কম নিয়ে খদ্দের টানার জন্য কম দামী আসবাবপত্র পালিশের রং ব্যবহার করার এই পন্থা অবলম্বন করেছেন । এমনকি কাঠ পালিশ করার জন্য যে কামধনু ব্যান্ডের রং ব্যবহার করা হয় সেই রং বিরিয়ানিতে মিশিয়ে দিচ্ছে । শুধু বিরিয়ানিই নয় চিকেন তন্দুরিতেও এই অস্বাস্থ্যকর ফুড কালার ব্যবহার করা হচ্ছে ।
জেলা জনস্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানিতেও বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত ফ্লেভার ব্যবহার করে থাকে । মানুষের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর এই কেমিক্যাল, বিরিয়ানিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টাটকা ও সুগন্ধযুক্ত রাখে।
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বেশি লাভ করতে অনেক দোকানে বিরিয়ানির হাঁড়িতে চাল ও মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে গ্যাসের ওভেন থেকে নামানোর আগে অর্থাৎ রান্নার প্রায় 15-20 মিনিট আগে ওই হাঁড়িতে এক ধরনের কেমিক্যাল পারফিউম ব্যবহার করা হয় । এর ফলে বিরিয়ানিতে একদিকে যেমন সুগন্ধ ছড়ায় পাশাপাশি দীর্ঘসময় ধরে তা টাটকা রাখে ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বর্ধমান শহরের একাধিক জায়গায় বিরিয়ানির দোকান আছে । দিনে দিনে দোকানের সংখ্যা বাড়ছে। বেশ কিছু দোকানের বিরিয়ানিতে ও সসে কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে । যে সব সস ব্যবহার করা হচ্ছে সেই সসের বোতলে কোনও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির লেভেল থাকে না । লোকাল কোনও জায়গায় তৈরি করা সস ব্যবহার করা হচ্ছে । বিরিয়ানিতে স্বাদ ও গন্ধের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে কেমিক্যাল।
এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় বলেন, "জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ পাচ্ছি আমরা । ইদানীং সবচেয়ে বেশি খাবারের স্টল শুরু হয়েছে । সেখানে চলছে প্রতিযোগিতা । কে কত সস্তায় খাবার পরিবেশন করতে পারে । এমনকি সেই সস্তার খাবার সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে । মানুষ সেখানে ভিড় জমাচ্ছে । লাইন দিয়ে খাবার খাচ্ছে । এই খাবার এত অল্প টাকায় দিচ্ছে কী করে । জনস্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে টাস্ক ফোর্সকে দেখতে বলা হয়েছে । ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে । ফের বর্ধমান শহরের দু'জায়গায় বিরিয়ানির দোকান খোলা হয়েছে । সেখান থেকেও অভিযোগ উঠছে । অভিযান চালিয়ে আমরা দেখেছি কোথাও কেমিক্যাল রং ব্যবহার করা হচ্ছে আবার কোথাও নকল সস ব্যবহার করা হচ্ছে । তাদের সচেতন করা হয়েছে । না হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে । টাস্ক ফোর্সকে বিষয়টি নজরে রাখতে বলা হয়েছে ।"
আরও পড়ুন :