আসানসোল, 10 ডিসেম্বর: অবশেষে বেআইনি কয়লা মামলায় চার্জ গঠন করা হল । মোট 48 জন অভিযুক্তের নামে চার্জ গঠন করা হয়েছে । পঞ্চমবার শুনানির পর মঙ্গলবার চার্জ গঠন করা হয় ।
গত চারবার ভিন্ন ভিন্ন তারিখে শুনানির দিনে বিভিন্ন জটিলতায় চার্জ গঠন করা যায়নি । শেষবার 25 নভেম্বরে 48 জন অভিযুক্তের মধ্যে শুধুমাত্র বিকাশ মিশ্র অনুপস্থিত ছিলেন । কারণ তিনি অন্য একটি মামলায় কলকাতায় পুলিশের হেফাজতে ছিলেন । পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন ভার্চুয়ালিও বিকাশ মিশ্রকে হাজির করানো যায়নি ।
সেদিনের শুনানিতে আসানসোলে সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, 10 ডিসেম্বর চূড়ান্ত চার্জ গঠন হবেই । তিনি সমস্ত অভিযুক্তকে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন । সেই মতো 45 জন অভিযুক্ত সশরীরে এসে হাজিরা দেন । বিকাশ মিশ্র জেল হেফাজতে এবং বাকি দুই অভিযুক্ত অসুস্থ । তাই তাঁরা ভার্চুয়ালি হাজিরা দেন । 48 জন অভিযুক্তের হাজিরায় কয়লা কাণ্ডের তদন্তের শেষে চার্জ গঠন হল । আগামী 11 জানুয়ারি প্রথম ট্রায়ালে দুই সাক্ষীর বক্তব্য শুনবেন বিচারক ।
2020 সালে বেআইনি কয়লা পাচার সংক্রান্ত মামলা ও তদন্ত শুরু হয় । সিবিআই মোট তিনটি চার্জশিট জমা করেছে । চার্জশিটে মোট 25 হাজার পাতার নথি আছে । এছাড়াও 1149 পাতার তথ্যপ্রমাণ জমা দেওয়া হয়েছে । চার্জশিটে অভিযুক্ত ছিলেন 50 জন । এর মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র পলাতক । আরেক অভিযুক্তের মামলা চলাকালীন মৃত্যু হয় । সেইমতো মোট 48 জনের নামে চার্জ গঠন হয়েছে । তাঁদের মধ্যে অনুপ মাজি ওরফে লালা, বিকাশ মিশ্র এবং রত্নেশ্বর ভার্মার নামে ব্যক্তিগত বা ইনডিভিজুয়াল চার্জ গঠন হয়েছে । 23 জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একসঙ্গে চার্জ গঠন হয়েছে । 10 জন সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত কর্মী এবং 12টি কোম্পানির নামে এই মামলায় চার্জ গঠন হয়েছে ।
জানা গিয়েছে, এই মামলায় 396 জন সাক্ষী রয়েছেন । আগামী 21 জানুয়ারি এই মামলার ট্রায়াল শুরু হবে । প্রথম দিন ট্রায়ালে দু'জন সাক্ষীর বক্তব্য শুনবেন বিচারক । কিন্তু এতজন সাক্ষীর বক্তব্য শুনতে বহুদিন লাগবে বলে অভিমত আইনজীবীদের । সেক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়াতেও বিলম্ব হতে পারে ।
অভিযুক্তদের আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ জানান, "অভিযুক্তরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেছেন । অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতের ন্যায় সংহিতার 102বি, 409, 379, 471 এবং প্রিভেনশন অফ কোরাপশন অ্যাক্টে 7 ও 32 ধারায় অভিযোগ রয়েছে । অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা ইসিএল এবং রেলওয়ে সাইডিংয়ের যে এলাকা, সেখান থেকে অসাধু উপায়ে কয়লা চুরি এবং পাচার করেছে । প্রথম ট্রায়ালে চারজন অভিযুক্তের জন্য অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ সাক্ষ্য দেবে ।"
প্রসঙ্গত, অনুপ মাজি, রত্নেশ্বর ভার্মা-সহ বহু 'কয়লা মাফিয়া' ছাড়াও এই কাণ্ডে ইসিএলের অনেক প্রাক্তন ও বর্তমান কর্তা এমনকি সিআইএসএফ জওয়ানরাও অভিযুক্ত । সাক্ষীদের সাক্ষ্যতে আগামী দিনে কী চাঞ্চল্যকর দাবি আদালতে উঠে আসে, তা জানতেই এখন উৎসুক সবাই ।