চন্দননগর, 12 সেপ্টেম্বর: আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে একের পর এক অর্ডার বাতিল করছেন পুজো উদ্যোক্তারা ৷ তাতেই আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা । উৎসবের মাসে যদি এভাবে অর্ডার বাতিল হতে থাকে তাহলে আর্থিক সঙ্কট আসন্ন ৷
আরজি করে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় উত্তাল দেশ থেকে রাজ্য ৷ প্রতিবাদে একাধিক দুর্গাপুজো কমিটি সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে । কেউ আলোর কাজ বন্ধ করছেন । কেউ আবার আলো কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি রামকৃষ্ণ ব্যায়াম শিক্ষা সংঘ চন্দনগরের আলোর কাজ বাতিল করেছেন । তাদের বাজেট ছিল 25 লক্ষ টাকা । সেখানে থেকে চন্দননগর আলোকসজ্জার বাজেট 4 লক্ষ টাকা ছিল । ফোন করে সেই অর্ডার বাতিল করা হয় । কারণ হিসেবে বলেছেন, শোকের পরিবেশে অন্ধকার রেখে প্রতিবাদ জানাবেন তারা । এছাড়া আরও অনেক পুজো কমিটি আলোর বাজেটে কাটছাঁট করছেন । তাতেই সমস্যায় পড়েছেন চন্দননগর আলোকশিল্পীরা ।
শিলিগুড়ির ওই পুজো কমিটির কার্যকরী সভাপতি সৌমিত্র কুন্ডু জানান, এই পরিস্থিতিতে কমিটির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আলো বন্ধ থাকবে । চিকিৎসক পড়ুয়ার মৃত্যুতে সহমর্মী তাঁরা । তাই আলোর বায়না বাতিল করা হয়েছে । এবারে চাঁদার অবস্থা খুব খারাপ । বিজ্ঞাপন নেই বললেই চলে ।মণ্ডপের ভিতরের আলো ছাড়া বড় আলোকসজ্জা করা হবে না ।
চন্দননগরে আলোকশিল্পী বাবু পালের আকস্মিক প্রয়াণে তাদের ব্যবসায় এমনিতেই খামতি দেখা দিয়েছে । তার মধ্যে অর্ডার বাতিলের জেরে সমস্যায় পড়েছেন শিল্পীরা ৷ তাদের সঙ্গে কয়েকশো পরিবার জড়িত । বাবু পালের মেয়ে সুশ্বেতা পালের কথায়,"আরজি করে এত বড় দুর্ঘটনার জন্য শিলিগুড়ির একটি পুজো বারোয়ারি আমাদের আলোকশিল্প বাতিল করেছে । পুজো কমিটির তরফে জানানো হয়েছে তারা কোনওরকম আড়ম্বর রাখছেন না । আর সেই কারণেই সমস্যায় পড়েছি । বাধ্য হয়ে আমরা বেনারসের একটি কাজের জন্য যোগাযোগ করছি । বর্তমানে বেশিরভাগ বারোয়ারি বড় কিছু করছে না । শেষ পর্যায়ে আলোর অর্ডার বাতিল বা কমে গেলে আমাদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে ।"
চন্দননগরের আর এক আলোক শিল্পী অসীম দে বলেন, "চন্দননগরের আলোকশিল্প সারাবছর অপেক্ষা করে থাকে তিনমাসের উৎসবের জন্য ।আমাদের সঙ্গেই একাধিক শিল্পী এবং কর্মী জড়িত রয়েছে । এটাই আমাদের একমাত্র রুটি রুজি । আমার কাছেই 50 জন শিল্পী কাজ করেন । এভাবে চন্দননগরে প্রায় 25000 আলোক শিল্পী ও কর্মী রয়েছেন । যদি সেভাবে আমরা কাজ না করতে পারি তাহলে আমাদের সঙ্গে কয়েকহাজার পরিবার আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়বে । আমরা সকলেই বুঝতে পারছি যে কলকাতার যে ঘটনা সেটা খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক । আমরাও চাই এর প্রতিবাদ হোক । কিন্তু কিছু পুজো কমিটি চাইছেন আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল, ঢাক সব বন্ধ করে দিতে । এই অবস্থায় বারোয়ারি যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে আমরা কোথায় যাব ? আমাদের মতই প্যান্ডেল এবং ঢাকিরাও সারাবছর কলকাতায় আসার জন্য অপেক্ষায় থাকেন । বারোয়ারিগুলির কাছে আমার একটাই অনুরোধ আলোকশিল্পীদের প্রতি সদয় হোন ।"