কেঞ্জাকুড়া (বাঁকুড়া), 19 জানুয়ারি: কয়েকশো বছরের রীতি মেনে 4ঠা মাঘে বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ায় দ্বারকেশ্বর নদের চরে শুরু হল মুড়ি খাওয়ার মেলা ৷ সকালবেলা দ্বারকেশ্বরের চরে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে জমায়েত করেন সাধারণ মানুষ ৷ সেখানেই মুড়ির সঙ্গে চপ, চানাচুর, সিঙাড়া, জিলিপি, গজা, শসা, গাজর, পেঁয়াজ, লঙ্কা, লেবু, প্যারা ও নানান মিষ্টি মেখে খাওয়া-দাওয়া করেন লোকজন ৷
আর এই জমায়েতকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে দ্বারকেশ্বরের চরে ৷ শীতের সকালে পিঠে রোদ লাগিয়ে হাজারের উপর মানুষ এই মেলায় আনন্দ করেন ৷ উল্লেখ্য, বাঁকুড়ার মানুষের মুড়ি প্রীতির কথা নতুন নয় ৷ তা নিয়ে বহু গল্পকথা যেমন রয়েছে, তেমনই বাঁকুড়াবাসীর মুড়ি প্রীতি নিয়ে আধুনিক সমাজেও চর্চা হয় ৷
এমনকি বাঁকুড়ায় লোকমুখে প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, একদিন স্বর্গরথে চড়ে ইন্দ্র আকাশপথে যাওয়ার সময় প্রবল সোঁ-সোঁ শব্দ শুনতে পান ৷ রহস্য উদ্ঘাটনে রথ থামিয়ে বরুণ দেবকে ইন্দ্র জিজ্ঞাসা করেন, তাঁর কারসাজিতে মর্ত্যে ঝড় উঠেছে কি না ৷ বরুণ দেব তা অস্বীকার করলে, নারদ মুনিকে ইন্দ্র দায়িত্ব দেন শব্দের কারণ অনুসন্ধান করতে ৷ নারদ মুনি বিশ্বময় ঘুরে শেষে জানতে পারেন, বাঁকুড়ার মানুষ সাতসকালে মুড়িতে জল ঢেলেছে ৷ তার জেরেই নাকি প্রবল শব্দ, মর্ত্য ছাড়িয়ে স্বর্গে পৌঁছেছে ৷ এমনই নানা কাহিনী রয়েছে, বাঁকুড়ার মানুষের মুড়ি প্রীতি নিয়ে ৷
তাই এমন প্রিয় খাবার নিয়ে মেলা হওয়াাও স্বাভাবিক ৷ প্রতিবছর নিয়ম করে মুড়ি নিয়েই আস্ত একটা মেলা বসে বাঁকুড়ার প্রাচীন জনপদ কেঞ্জাকুড়ায় ৷ জানা যায়, কয়েকশো বছর ধরেই কেঞ্জাকুড়ার দ্বারকেশ্বর নদের চরে রয়েছে মাতা সঞ্জীবনীর আশ্রম ৷ সেই আশ্রমে প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন শুরু হয় হরিনাম সংকীর্তন ৷ শেষ হয় 4ঠা মাঘ ৷
শোনা যায়, প্রাচীনকালে দুর্গম পথ পেরিয়ে হরিনাম শুনতে আশ্রমে আসতেন দূর-দূরান্তের মানুষ ৷ হরিনাম শুনে তাঁরা আর রাতে বাড়ি ফিরতেন না ৷ রাতভর আশ্রমে কাটিয়ে পরেরদিন সকালে সঙ্গে থাকা মুড়ি দ্বারকেশ্বর নদের চর বসে, জলে ভিজিয়ে সবাই খেতেন ৷ তারপর বাড়ি রওনা দিতেন ৷ সময়ের সঙ্গে কেঞ্জাকুড়ার সেই রীতি মেলার রূপ নেয় ৷
এখন মাঘ মাসের 4 তারিখে কেঞ্জাকুড়া ও আশেপাশের অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ জমায়েত করেন দ্বারকেশ্বর নদের চরে ৷ পাহাড় প্রমাণ মুড়ির সঙ্গে চপ, বেগুনি, টমেটো, মুলো, শসা, লঙ্কা, পেঁয়াজ, ঘুগনি, নাড়ু, হরেক রকম মিষ্টি, জিলিপি, নারকেল-সহ বিভিন্ন খাবার মাখা হয় ৷ এরপর নদের চরে গামছা বিছিয়ে সেই পাহাড় প্রমাণ মুড়ি পরিবারের সকলে মিলে খাওয়া-দাওয়া করেন লোকজন ৷ আর এই বিশাল সংখ্যায় জমায়েতকে কেন্দ্র করে ছোটখাটো অস্থায়ী দোকানও বসে যায় দ্বারকেশ্বরের চরে ৷