কলকাতা, 24 অক্টোবর: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তদন্তে এবার সিবিআইয়ের হাতে আরও বেশ কয়েকজনের নাম এল ৷ আরজি কর হাসপাতালের দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হওয়া আশিস পাণ্ডের কাছ থেকেই এই তথ্য হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা ৷
সিবিআই সূত্রে খবর, আশিস পাণ্ডের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ও কল রেকর্ডস থেকে একাধিক তথ্য মিলেছে ৷ সেখান থেকেই বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের নাম পাওয়া গিয়েছে ৷ ওই চিকিৎসকদের সঙ্গে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় কোনও যোগ আছে কি না, সেটাই আপাতত খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা ৷
সিবিআই সূত্র আরও জানা গিয়েছে যে আরজি করের ওই তরুণী চিকিৎসকের দেহ যেদিন উদ্ধার হয়, সেই 9 অগস্ট সেখানকার তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে একাধিকবার হোয়াটসঅ্য়াপ কলে কথা হয়েছিল আশিস পাণ্ডের ৷ এর থেকেই সিবিআইয়ের সন্দেহ আশিস পাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির অভিযোগ মিললেও আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তাঁর যোগ থাকলেও থাকতে পারে ৷
সেই কারণে সিবিআই জানতে চাইছে যে গত 9 অগস্ট সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে আশিসের ঠিক কী কী কথা হয়েছিল ৷ সেই কারণেই সন্দীপ ঘোষের নারকো পরীক্ষা করাতে চেয়েছিল সিবিআই ৷ এই নিয়ে আদালতে আবেদনও জানায় সিবিআই ৷ কিন্তু সন্দীপ ঘোষ আদালতের কাছে নারকো পরীক্ষার জন্য সম্মতি দেননি ৷
এই পরিস্থিতিতে কীভাবে এই নিয়ে তথ্য জোগাড় করা হবে, সেই পথ খুঁজছে সিবিআই ৷ তবে আরজি করে দুর্নীতি এবং ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত সমান্তরালভাবে চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ব্যুরো ৷ তদন্ত নেমে একাধিক তথ্যপ্রমাণ ঘেঁটে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে আরজি কর হাসপাতালে পার্টি অফিস চালানো থেকে শুরু করে বেআইনিভাবে টেন্ডার ডাকা এবং আইনকে উপেক্ষা করে বেআইনি কার্যকলাপ নিজে করতেন না সন্দীপ ঘোষ ৷ পুরোটাই আশিস পাণ্ডের হাত দিয়েই হতো ৷ নেপথ্যে থেকে শুধু নির্দেশ দিতেন সন্দীপ ঘোষ ৷
সিবিআই আরও জানতে পেরেছে, এই দাপুটে চিকিৎসক তথা নেতার হাসপাতালের ভিতরে এতটাই প্রভাব ছিল যে সেখানে বা কর্তব্যরত অবস্থায় না থাকার পরেও হাজিরা খাতায় তাঁর সই হয়ে যেত । মাস গেলে বেতন তিনি পেয়ে যেতেন ৷ আর সবটাই তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ছাত্রছায়ায় হতো বলে অভিযোগ ।
বুধবার সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার একটি দল আরজি কর হাসপাতালে গিয়ে শিশু বিভাগের একাধিক ডাক্তার নার্স এবং হাউসস্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ৷ তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করে । তাঁদের বয়ান থেকেও একাধিক নতুন তথ্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা পেয়েছেন বলে খবর ।
উল্লেখ্য, গত 9 অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হল থেকে এক তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয় ৷ পরে এই ঘটনায় ধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু হয় ৷ কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে ৷ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের কাছে ৷ পাশাপাশি দুর্নীতির মামলার তদন্তও করছে সিবিআই ৷ সেই তদন্তও হাইকোর্টের নির্দেশেই করছে তারা ৷
ধর্ষণ ও খুনের মামলায় একটি চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই ৷ সেখানে মূল অভিযুক্ত হিসেবে সঞ্জয় রায়ের নাম দেওয়া হয় ৷ দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হলেও পরে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে ৷ টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও ধর্ষণ ও খুনের মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ আর আশিস পাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন দুর্নীতির মামলায় ৷
সিবিআইয়ের হাতে নতুন যে তথ্য সামনে এসেছে, তা থেকে আর কারও নাম সামনে আসে কি না, কিংবা কেউ গ্রেফতার হন কি না, সেটাই এখন দেখার !