কলকাতা, 17 ডিসেম্বর: বাংলাদেশিদের একাংশের কলকাতা দখলের হুঙ্কারকে বাজে ও পাগলের প্রলাপ বলে মন্তব্য মুক্তিযোদ্ধাদের ৷ ওপার বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি পুরোটাই রাজনৈতিক বলে দাবি করলেন তাঁরা ৷ মঙ্গলবার রাজভবনে এসে মুক্তিযোদ্ধারা আশাবাদী যে ইতিহাস, বন্ধুত্ব, গরিমা ও ঐতিহ্যের প্রশ্নে দুই দেশ এক এবং ভবিষ্যতেও তা বজায় থাকবে ৷
তবে, একাংশের গলায় কিছুটা অভিমানের সুরও শোনা গেল ৷ বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তাঁরা ভারতকেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী করেছেন ৷ এমনকি ত্রিপুরায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আফসার ৷ এমনকি বাংলাদেশের ভারত-বিরোধিতার অভিযোগ খারিজ করেন তিনি ৷ তাঁর দাবি, পুরোটাই ভারতের তৈরি করা ৷
তবে, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ এবং আতিথেয়তা আপ্লুত করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহম্মদ আমিনুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আফসার, এবিএম নুরুল আলমরা ৷
53 তম বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছেন বাংলাদেশ সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধি দল ৷ মঙ্গলবার রাজ্যপালের আমন্ত্রণে রাজভবনে দুই দেশের প্রাক্তন সেনা কর্তারা উপস্থিত হয়েছিলেন ৷ এ দিন তাঁদের বক্তব্যে বিজয় দিবসের গরিমা ও কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের ইতিহাস উঠে আসে ৷
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক বলে মন্তব্য করেছেন ৷ পাশাপাশি তিনি আশাবাদী যে বিদেশমন্ত্রক এই পরিস্থিতি নিয়ে সজাগ ও সচেতন ৷ তাই পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হবে ৷
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের আরও বক্তব্য, "ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ যে সম্পর্ক, তা আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে ৷ দুই দেশের নাগরিকদের যাতায়াতও স্বাভাবিক হবে ৷ কিছু পাগল-ছাগলের মন্তব্যে দুই বাংলায় প্রভাব পড়ছে ৷ বাংলাদেশ প্রশাসন এ বিষয়ে সচেতন ৷ দেশের সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা ও তাঁদের যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা বাংলাদেশ সরকার নিশ্চই করবে ৷"
এ দিন রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং বাংলাদেশ সেনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে অপরের হাতে স্মারক তুলে দেন ৷ বাংলাদেশ সেনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহম্মদ আমিনুর রহমান, সেদেশের স্বাধীনতায় ভারতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন ৷ তিনি সরকারিভাবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে বাংলাদেশ যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান ৷
অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের বক্তব্য পড়ে শোনান রাজভবনের এক আধিকারিক ৷ সেখানে দুই দেশের সেই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয় ৷ সেই সময়কার সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন ও ভারতীয় সেনার পরাক্রমের সামনে প্রায় 93 হাজার পাকিস্তানি সেনার আত্মসমর্পণের প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয় ৷
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়েও রাজ্যপালের প্রতিনিধি বক্তব্য পেশ করেন ৷ বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া ভাষা আন্দোলনের উল্লেখও করা হয় ৷ আর সেই ভাষা আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেস্কোর ওইদিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করার গর্বও বক্তব্য উঠে আসে ৷ বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান এবং ভুট্টোর উল্লেখ ছিল রাজ্যপালের বক্তব্যে ৷ পরে রাজ্যপাল বলেন, "না ভারত, আর না বাংলাদেশ, ওইদিন গণতন্ত্রের জয় হয়েছিল ৷"