কলকাতা, 29 ডিসেম্বর: এবার তাবিজের খেল, তাও আবার বিজ্ঞান মতে । তাই আর ওষুধ নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাবিজে হবে গর্ভনিরোধক ৷ এমনই যুগান্তকারী পদ্ধতির ব্যবহার করছে ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ।
চিকিৎসকদের দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে প্রসূতি মৃত্যুর হার অনেকটাই বেড়েছে । অল্প বয়সে গর্ভধারণকেই এর অন্যতম কারণ হিসাবে দেখছেন চিকিৎসকরা । তাই সেইদিকে নজর দিতেই নয়া পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে । যুগান্তকারী এই চিকিৎসা করছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের গাইনোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা, যা ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।
কী নাম এই নয়া পদ্ধতির ?
নয়া এই পদ্ধতিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, কন্ট্রাসেপটিভ ইমপ্লান্ট । মহিলার হাতে ইনজেকশন দেওয়ার মতো সূচের আকারে দেখতে একটি বস্তু শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যা শরীরে প্রবেশ করানোর পরেই কাজ শুরু করে । 4 মিটার লম্বা এবং 2 মিলিমিটার ব্যাসের এই যন্ত্র কাজ করে টানা 3 বছর ।
কীভাবে হয় গোটা চিকিৎসা পদ্ধতি ?
এই চিকিৎসায় প্রথমে হাতে ইনজেকশন দিয়ে জায়গাটা অবশ করে দেওয়া হয় । তারপরে ভালো করে পরিষ্কার করে সূচের মতো দেখতে বস্তুটি শরীরে প্রবেশ করানো হয় । এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে সময় লাগে মাত্র তিন মিনিট । তারপর ওই জায়গায় দুটো ব্যান্ডেজ করে দেওয়া থাকে । প্রথম ব্যান্ডেজটি খুলতে হয় দু'দিন পর । অপর ব্যান্ডেজটি পাঁচদিন পর খুলতে হয় । ফের সাত দিন বাদে একবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই হল এই অত্যাধুনিক চিকিৎসার নিয়ম । তবে সম্পূর্ণ পারদর্শী ছাড়া এই চিকিৎসা করা অসম্ভব ।
কতটা নিরাপদ এই চিকিৎসা ?
এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রসঙ্গে ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক চিকিৎসক প্রণব বিশ্বাস বলেন, "খুব অল্প সময়ে এই ফরেন বডিটি শরীরে প্রবেশ করানো হয় । এর ফলে কোন ব্যথাও লাগে না । হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন পড়ে না । খুব সামান্য রক্তপাত আমরা দেখেছি । মাসিকে সাময়িক পরিবর্তন দেখা যায় । কিন্তু বড় কোনও সমস্যা এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি । এমনকি ফরেন বডি শরীরে প্রবেশ করার পরেও ইনফেকশন হওয়ার ভয়ও এক্ষেত্রে থাকে না ।"
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে এই চিকিৎসা পেয়েছেন প্রায় 200 থেকে 300 তরুণী । এমনকি একবার মা হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার যদি কেউ গর্ভনিরোধকের সাহায্য নিতে চায়, তার জন্য এই চিকিৎসা সবথেকে কার্যকরী বলেই জানান চিকিৎসকরা ।
এই বিষয় ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে উপাধ্যক্ষ অর্ঘ্য মৈত্র বলেন, "আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ওষুধের পরিমাণ কমানো । তার সঙ্গে ইউজার ফ্রেন্ডলি জিনিস ব্যবহার । তাই আমরা আবিষ্কার করেছিলাম বেরিয়ার কন্ট্রাসেপটিভ । যেমন কনডোম । কিন্তু সেখানে ফেলিয়র বেশি । তারপর আমরা এটা (কন্ট্রাসেপটিভ ইমপ্লান্ট) আবিষ্কার করলাম । 30 বছর ধরে আমরা এটা নিয়ে পড়াশোনা করেছি ৷ কিন্তু এবার হাতে কলমে কাজ করার সুযোগ আছে । ওষুধগুলোকে ছোট ছোট করে একটা ফরেন বডির মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করানো হয় এই পদ্ধতিতে ।"