কলকাতা, 19 জুলাই: বিদ্যুতের অতিরিক্ত মাশুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিজেপির মিছিলে অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ শুক্রবার বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ নির্দেশ দেন, 22 জুলাইয়ের পরিবর্তে 26 জুলাই, শুক্রবার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপি সভা করতে পারবে ৷ দুপুর 2.30 মিনিট থেকে সন্ধ্যা 5.30 মিনিট পর্যন্ত সেখানে ধরনা কর্মসূচি করা যাবে ৷
সর্বোচ্চ এক হাজার লোক নিয়ে মিছিল ও সভা করার অনুমতি দিয়েছে আদালত ৷ এদিন আদালত আরও জানায়, যাবতীয় প্রশাসনিক নিয়ম মেনে মিছিল ও সভা করা যাবে ৷ মানুষের যাতে কোন সমস্যা না, হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে ৷ পুলিশকে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে দেখতে হবে ৷
এদিনের শুনানিতে ভারতীয় জনতা পার্টির তরফে আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, "বিজেপিকে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে যদি সভা করতে না দেওয়া হয়, তবে আজ থেকে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অন্য কোনও দলকে সভা করতে দেওয়া হবে না ৷ তা নিশ্চিত করুক আদালত ৷" একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, 21 জুলাই যাঁদের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁরা কি শাসকদলের লোক ছিলেন ? বিরোধীরা বারবার আদালতের দরজায় কড়া নাড়তে বাধ্য হয় ৷ বেশ কিছু কারণবশত ৷ এর আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজভবনের সামনে অবস্থানের জন্যও আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন ৷ রাজ্য প্রথমে অনুমতি না দেওয়ায়, তারপর আদালতের নির্দেশে রাজ্য অনুমতি দেয় ৷
বিজেপির আইনজীবীর পালটা রাজ্যের বক্তব্য, রাজ্য কোনও মিটিং-মিছিলের বিরুদ্ধে নয় ৷ তবে কখন আর কোথায়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ আর রাজভবনের সামনে রাজ্য অনুমতি দিয়েছিল ৷ সময় আর দিন পরিবর্তন হওয়ায় আটকে ছিল কর্মসূচি ৷ তখন বিজেপির তরফে আইনজীবী বলেন, "বিরোধী দল, বিদ্যুতের অসম্ভব মূল্যবৃদ্ধির জন্য সিইএসসি অফিসে ডেপুটেশন দেবে ৷ বিদ্যুতের এই অসম্ভব মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে শুধু বিরোধীরা নয়, মুখ্যমন্ত্রীও চিন্তিত ৷ সেই ডেপুটেশন সোম থেকে শুক্রবার করা প্রয়োজন ৷ সোমবার রাজ্যের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় ৷ তবে যদি সমস্যা হয়, অন্যদিনও বিজেপি তা করতে ইচ্ছুক ৷"
আইনজীবী স্মরণ করিয়ে দেন, "এর আগেও বিজেপি ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করতে চাওয়ায়, রাজ্য অনুমতি দেয়নি ৷ তারপর আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় ৷ সিঙ্গল বেঞ্চ অনুমতি দেয় ৷ কিন্তু আপিল হয় ডিভিশন বেঞ্চে ৷ ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রাখে ৷ সঙ্গে এও বলে যে, যে কোনও জায়গাতেই সবার সভা করার স্বাধীনতা আছে ৷ ওই একটা নির্দিষ্ট জায়গাতেই সভার বিষয় এলেই রাজ্যের আপত্তি থাকে ৷" রাজ্যের অবশ্য বক্তব্য, "সিইএসসির বিল বাড়ানোর জন্য এখানে আন্দোলন মূল বিষয় নয় ৷ ওই জায়গা থেকে একটু দূরেই ওয়াই চ্যানেল ৷ সেখানে সভা করলে আমাদের আপত্তি নেই ৷"
বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের বক্তব্য, "প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দু'বছর ডিভিশন বেঞ্চে বসে আমার অভিজ্ঞতা, সেখানে বিভিন্ন সময় কর্মীদের থেকে আবেদন নিয়ে আসা হত ৷ সেই আবেদনের মূল কারণ বা ইস্যু কী, এটা দেখা হত না ৷ তাদের মিছিল বা ধরনার অনুমতি দেওয়া হবে, কি হবে না, সেটাই হত মূল বিবেচ্য ৷ এখানে সিইএসসি-তে কী কারণে বিরোধীরা যাবে, সেটা নিয়ে রাজ্য ভাবছে কেন ? তাদের তো শুধু মিছিলের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার কথা ৷"
ভারতীয় জনতা পার্টির তরফে পালটা বলা হয়, "বিজেপিকে সেখানে যদি সভা করতে না দেওয়া হয়, তবে আজ থেকে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অন্য কোন দলকে সভা করতে দেওয়া হবে, তাহলে রাজ্য আদালতে সেটাই বলুক ৷" বিচারপতি রাজ্যের কাছে জানতে চান, "এই বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী ? অন্য কোনও দলকে সেখানে সভা করতে দেবেন না ?"
রাজ্যের আইনজীবী বলেন, "পুলিশের গুলিতে কিছু মানুষের মৃত্যুর পর একটাই রাজনৈতিক দল ওখানে সভা করে বছরের পর বছর ৷ এছাড়া কোনও দল সভা করে না ৷ ওই এলাকায় মারাত্মক যানজট সৃষ্টি হয় ৷ তাই ওয়াই চ্যানেলে করতে পারে ৷ বিজেপি ওখানেই সভা করতে চাইছে কেন? এটা কি ইগো ?" আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য পালটা প্রশ্ন তোলেন, "রাজ্য একবারও বলছে না, সোমবার ওখানে সভা করলে সমস্যা কোথায় ! ওখানেই রবিবার তৃণমূলের সভা আছে ৷ যেখানে প্রায় 5 লক্ষ লোকের জমায়েত হবে ।"