কলকাতা, 14 জানুয়ারি: বাঘ ধরতে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে, কিন্তু হাতি সংরক্ষণে সরকারের নজর নেই কেন ! প্রশ্ন তুললেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ৷ ঝাড়গ্রামে হাতি মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার আবার রাজ্যের রিপোর্ট তলব করল আদালত ৷
রাজ্যের দেওয়া হলফনামায় অসন্তুষ্ট কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আইনজীবীকে বলেন, "আপনারা বিষয়টি একেবারে সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না ৷" রাজ্য ফের নতুন রিপোর্ট দিতে চায় বলে এদিন জানান রাজ্যের আইনজীবী ৷ তারপরই তিন সপ্তাহের মধ্যে ফের রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট ৷
মামলাকারী আইনজীবী রৈবত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "ঝাড়গ্রামের লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিকে পুনরায় জঙ্গলে ছাড়তে গিয়ে যেভাবে ক্রেনে করে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তার ফলেই হাতির মৃত্যু হয়েছে ৷ নৃশংস পুনর্বাসনের পদ্ধতিই হাতি মৃত্যুর কারণ ৷" তিনি আরও বলেন, "পশুদের অধিকার সুরক্ষিত করতে আদালতের হস্তক্ষেপের ভীষণ প্রয়োজন ৷ না-হলে তামাশার স্বীকার হয়ে আরও হাতির মৃত্যু হবে ৷ হুলা পার্টির ব্যবহার, মশালের ব্যবহার একেবারেই অবৈজ্ঞানিক ৷"
2023 সালে ঝাড়গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা হাতির মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ সেই রিপোর্টে অসন্তুষ্ট প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম রাজ্যকে এই ব্যাপারে আরও সংবেদনশীলতার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ৷ প্রধান বিচারপতি শ্রীলঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, "শ্রীলঙ্কায় গিয়ে দেখুন কীভাবে হাতিকে সংরক্ষণ করা হয় ৷ হাতির জন্য খাবার, চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হয় ৷ একইরকম ভাবে কেরলেও হাতি সংরক্ষণে সরকার অত্যন্ত সচেষ্ট ৷"
মামলাকারী আইনজীবীর বক্তব্য, "হাতি সংরক্ষণে গত 15 বছরে কোনও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি ৷ হাতির যাতায়াতের রাস্তায় নানাভাবে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে ৷ তাদের খাবার জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই ৷ হুলা পার্টির ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ না-করলে একটা সময় আমাদের দেশে হাতির আর দেখাই মিলবে না ৷ বাঘ লুকিয়ে থাকে ৷ তাকে দেখা ও ধরার জন্য ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে ৷ এইসবে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে ৷ জিনাতকে ধরার জন্য বিপুল আয়োজন করা হল ৷ আর হাতি চোখের সামনে দেখা যায় ৷ অবিলম্বে তাদের সংরক্ষণের জন্য আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন ৷" প্রধান বিচারপতি বলেন, "এ ব্যাপারে আইএফএস আধিকারিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷"
প্রসঙ্গত, 2023 সালের 1 জুলাই বন দফতর বদরভুলা রেঞ্জের কাজলা গ্রাম থেকে হাতি ধরে জঙ্গলে ছাড়ার চেষ্টা করা হয় ৷ তাকে ক্রেনে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় অন্তঃসত্ত্বা হাতিটির মৃত্যু হয় । সেই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী রৈবত বন্দ্যোপাধ্যায় ৷