কলকাতা, 16 জানুয়ারি: স্যালাইন-কাণ্ডে মৃত ও অসুস্থদের ক্ষতিপুরণ দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এদিন রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন ব্যবহারে মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রককে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছে ৷ রিপোর্ট দিতে হবে রাজ্যের মুখ্যসচিবকেও । একইসঙ্গে কেন্দ্র এ ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ করেছে, তাও জানতে চেয়ে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ 30 জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি ।
14 জানুয়ারি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকা জারি করে জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত রাজ্য যেন এই ওষুধ না ব্যবহার করে । কিন্তু প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, প্রায় 10 দিনেরও বেশি কেন দেরি করা হল এই ওষুধ প্রত্যাহার করতে ? কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই কোম্পানিটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেই কোম্পানির ওষুধ তৈরির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ।
প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এদিন শুনানিতে বলেন, "আমি সংবাদপত্রে দেখলাম ইতিমধ্যে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।" একথা শুনে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত প্রধান বিচারপতিকে জানান যে, তদন্তে 13 জনের দল গঠন করা হয়েছে । যে ফার্মা কোম্পানির স্যালাইন ব্যবহার করে এই পরিস্থিতি, সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, প্রধান বিচারপতি তা জানতে চাইলে এজি বলেন, "তিনটে ব্যাচে ওষুধ এসেছিল । 30 হাজার বোতল এসেছিল, যা প্রায় রাজ্যের সব হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । সেটার ব্যবহার করা বন্ধ করা হয়েছে । ইতিমধ্যে নমুনা পরীক্ষার জন্য রাজ্যের পাশাপাশি মুম্বইয়ের ল্যাবেও পাঠানো হয়েছে ।"
উল্লেখ্য, মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইনের ব্যবহারে মোট পাঁচজন প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে । তাঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয় । বাকিদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালে । আর অপরজন মেদিনীপুর মেডিক্যালেই ভর্তি থাকলেও তাঁর সদ্যোজাত পুত্রসন্তানের মৃত্যু হয়েছে ৷
মামলাকারী আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি এদিন বলেন, "2015 সালে গাইনোকোলজিস্ট চিকিৎসক (উদয়ন মিত্র) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন । এজন্য তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়ে যায় । বাধ্য হয়ে সেই ডাক্তার পদত্যাগ করেন । 2024 সালের 2 মার্চ এই স্যালাইন কোম্পানিকে কর্ণাটক সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে । পশ্চিমবঙ্গকেও সেটা জানানো হয় । কর্ণাটকে যখন এই স্যালাইনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, সেই সময় কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল ।"
তাঁর প্রশ্ন, এ রাজ্যে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ার পর কেন স্যালাইন ব্যান করা হল ? 10 ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে ড্রাগ কন্ট্রোলার বিজ্ঞাপ্তি জারি করে এই কোম্পানির স্যালাইন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল । তারপরও গোটা রাজ্যে কেন তা বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন না স্বাস্থ্যসচিব ? স্যালাইন কোম্পানির তরফে বলা হয়, কর্ণাটক সরকার ব্যান করার পর মামলা দায়ের হয়েছিল আদালতে এবং সেই মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্টে ।
মামলাকারী আর এক আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি এদিন বলেন, "এই স্যালাইনের দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে ।" পালটা সওয়ালে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধ । এমনকি তিনি নিজেও এই ওষুধ নিয়েছেন বলে জানান অ্যাডভোকেট জেনারেল । তাঁর দাবি, রাজ্য এই ওষুধের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে ব্যবহার করেনি ।
এজির দাবি, "এই একই কোম্পানির স্যালাইন অসম, বিহার, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ুতেও ব্যবহার হচ্ছে । দুর্ভাগ্যবশত আমাদের রাজ্যে পাঁচজন ওষুধ ব্যবহারের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । একজনের মৃত্যু হয়েছে ।" প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, "আপনারা এই ওষুধ বন্ধ করা বা টেস্ট করার ব্যাপারে আগেই ব্যবস্থা নিতে পারতেন ৷ আপনারা কোনও ক্ষতিপুরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ? ক্ষতিপুরণ দিতে হবে ।"
জবাবে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, "অবশ্যই ক্ষতিপুরণ দেওয়া হবে । রাতারাতি এই স্যাল্যাইন বন্ধ করা সম্ভব নয় গোটা রাজ্যের হাসপাতালগুলো থেকে ।"