কলকাতা, 17 এপ্রিল: মধ্যশিক্ষা পর্ষদের উদাসীনতার আরও একটি নজির ! ঠিক করে খাতা না দেখায় যোগ্য নম্বর থেকে বঞ্চিত হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ৷ এর ফলে হাতছাড়া হয় তার ব়্যাংকও ৷ তিন সপ্তাহের মধ্যে ওই ছাত্রকে তার প্রাপ্ত নম্বর দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ এক বছর আগে তন্ময় পতির প্রাপ্ত নম্বর ছিল 672, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়াল 685.5 । যে ছাত্র ওই বছর দশম স্থান পেয়েছিল তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল 684 ।
জানা গিয়েছে, সোনারপুরের বাসিন্দা তন্ময় পতি ৷ নরেন্দ্রপুর সারদা বিদ্যাপীঠের ছাত্র সে । 2023 সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় তন্ময় ৷ মাধ্যমিক পরীক্ষায় 700 নম্বরের মধ্যে 672 নম্বর পেয়েছিল সে । কিন্তু মাধ্যমিকে তার আশানুরূপ ফল না হওয়ার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল ওই ছাত্র । তাই পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে স্ক্রুটিনি করার আবেদন জানায় সে । তন্ময়ের পরীক্ষা দেওয়ার খাতাগুলো ফের একবার সে দেখতে চায় ৷ ইতিহাস, অংক ও বাংলা ভাষায় যা নম্বর পেয়েছিল, তার থেকে আরও বেশি নম্বর পেতে পারত বলে নিশ্চিত ছিল তন্ময় । কিন্তু কেন কম নম্বর পেল তা জানতেই পর্ষদের কাছে স্ক্রুটিনির আবেদন করে সে ।
মামলাকারী তন্ময় পতির পক্ষের আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী জানান, স্ক্রুটিনির আবেদন করতেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ শুধুমাত্র ইতিহাসে ছাত্রের 5 নম্বর বাড়িয়ে দেয় । তার ফলে 672 থেকে তখন তার প্রাপ্ত নম্বর বেড়ে দাঁড়ায় 677 । কিন্তু বাংলা ও অংক বিষয়ের ফলাফল অপরিবর্তিত রাখে পর্ষদ । মাধ্যমিকের ছাত্র তন্ময়ের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল সে মাধ্যমিক পরীক্ষায় এক থেকে দশম স্থানের মধ্যে থাকবে । তাই বাংলা ও অংকের উত্তরপত্রের কপি দেখতে চেয়ে সে ফের আবেদন জানায় পর্ষদের কাছে । 7 অগস্ট 2023 সালে উত্তরপত্র হাতে পেয়ে তন্ময় দেখতে পায় তার বাংলায় সঠিক উত্তরের সাড়ে 6 নম্বর দেওয়াই হয়নি এবং অংকে 2 নম্বর কম দেওয়া হয়েছে ।
আশিসকুমার চৌধুরীর কথায়, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অসতর্কতার কারণে তন্ময় মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে ৷ বোর্ডের নির্দেশমতো সে এই নম্বর পাওয়ার জন্য গত 14 অগস্ট আবেদন জানায় । সে সম্পূর্ণ নম্বর পেলে মোট প্রাপ্ত নম্বর হবে 685.5 ৷ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আজ পর্যন্ত তার জবাবের কোনও উত্তর দেয়নি । অথচ সারা রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সে দশম স্থানে থাকা সত্ত্বেও তাকে সরকারিভাবে কোনও স্থান (ব়্যাংক) দেওয়া হয়নি । সরকারি তরফ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা শীর্ষস্থান পেয়েছিল তাদের বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে, অথচ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের উদাসীনতার কারণে একজন মেধাবী ছাত্র তার যোগ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে ৷ এই কারণেই সে নিরুপায় হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ।
হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে ওঠে তন্ময়ের মামলাটি ৷ এই মামলার শুনানিতে তন্ময় পতির প্রাপ্ত নম্বর দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি । আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরীর কাছে জানতে চান তন্ময় কোন স্কুলের ছাত্র । কেন তার নম্বর কাউন্ট হয়নি সেই বিষয়েও জানতে চান বিচারপতি । এরপরেই সব শুনে বিচারপতি নির্দেশ দেন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে তন্ময়ের আবেদন মঞ্জুর করতে হবে এবং তার প্রাপ্ত নম্বর তাকে দিতে হবে ।
আরও পড়ুন: