কলকাতা, 20 জুন: বংশরক্ষার তাগিদে অন্য যুবকের সঙ্গে স্ত্রীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে ৷ এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নির্যাতিতা মহিলা ৷ সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন তুলেছেন, অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে ? ওই ব্যক্তিকে পুলিশ কেন হেফাজতে নেয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিচারপতি৷ মহিলার থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরও পুলিশের ভূমিকায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।
নির্যাতিতা মহিলা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত৷ তাঁর স্বামীও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ৷ তাঁদের দাম্পত্য জীবন 24 বছরের ৷ তাঁদের দু’টি কন্যা সন্তানও হয় ৷ কিন্তু তারাও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়৷ একজন 17 বছর বয়সে ও আর একজন 5 বছর বয়সে মারা যায় ৷
মহিলার অভিযোগ, এরপর 2019 সাল থেকে তাঁর স্বামী তাঁর উপর অত্যাচার শুরু করেন ৷ বংশরক্ষায় স্বামী ফের সন্তান পেতে স্ত্রীকে এক যুবকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেন ৷ আপত্তির পরেও বেশ কিছুদিন ওই যুবকের অত্যাচার সহ্য করতে হয় মহিলাকে । তারপরেই তিনি থানায় অভিযোগ করেন । চলতি বছরের 1 এপ্রিল ফের ওই যুবক তাঁর ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন । তাঁকে মারধর করে ওই যুবক । তিনি বারুইপুর থানায় গিয়ে মৌখিকভাবে ধর্ষণের অভিযোগ করেন । কিন্তু পুলিশ এফআইআর করেনি বলে অভিযোগ ।
ওই মহিলার দাবি, পরে 8 মে লিখিত অভিযোগ করেন । 12 মে ফের তাঁর বাড়িতে চড়াও হন অভিযুক্ত । সঙ্গে সঙ্গে থানায় অভিযোগ জানানোর পরও পুলিশ অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয় । অবশেষে সুরাহা পেতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি ৷ এ দিন শুনানিতে রাজ্য জানায়, সেদিন লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় পুলিশ এফআইআর করেনি । 12 জুন মহিলার আশ্বাসেই তাঁকে সেদিন থানা থেকে ছাড়া হয়েছিল । অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই 18 জুন গ্রেফতার করা হয়েছে ।
এর পর ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেতে হবে কেন ? তিনি মুখে বলেছেন সেটা জিডি করেছেন । কিন্তু এফআইআর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ! পুলিশ একটা পক্ষ নিয়েছে । ধর্ষণের অভিযুক্তকে কি করে থানা থেকে ছেড়ে দেয় ? আপনারা কোনও নিরাপত্তা দেননি মহিলাকে । আপনারা অভিযুক্তকে নিরাপদে সরে পড়ার সুযোগ দিয়েছেন । মহিলার স্বামীর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ ? কেনও তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়নি ?’’
বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ দিয়েছেন, ‘‘12 ও 13 জুন রাতের বারুইপুর থানার সিসিটিভি ও এসপি অফিসের ওই একই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে । ওই মহিলার কোনও ক্ষতি যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে । সাক্ষীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে । 30 জুলাই পরবর্তী শুনানি ।’’